অতিথি লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।
রিসার্চ প্রপোজাল (Research Proposal) হচ্ছে একটি গবেষণার নকশা বা রূপরেখা, যেখানে গবেষণার বিষয়বস্তু, গুরুত্ব, এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। এটি আপনার গবেষণার যৌক্তিক ভিত্তি, মৌলিকতা ও ব্যবহৃত পদ্ধতির একটি পরিষ্কার ও সংগঠিত উপস্থাপন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিস, পিএইচডি প্রোগ্রাম, ফেলোশিপ আবেদন কিংবা গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য একটি শক্তিশালী রিসার্চ প্রপোজাল অপরিহার্য। অনেক ভালো আইডিয়াও শুধুমাত্র দুর্বল প্রপোজাল লেখার কারণে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। তাই, একজন নতুন গবেষকের জন্য মানসম্মত রিসার্চ প্রপোজাল লেখার কৌশল জানা অত্যন্ত জরুরি, কারণ আইডিয়া থেকে বাস্তবতা পর্যন্ত পৌঁছাতে এই প্রপোজালটাই আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
১. শিরোনাম (Title)
– সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট এবং তথ্যবহুল হতে হবে।
– গবেষণার মূল বিষয়বস্তু প্রতিফলিত করবে।
– অস্পষ্ট বা অতিরিক্ত বিস্তৃত শব্দ ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
২. সারাংশ (Abstract)
– সাধারণত ১৫০-২৫০ শব্দের মধ্যে হতে হবে।
– গবেষণার সমস্যা, উদ্দেশ্য, সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি ও প্রত্যাশিত ফলাফল থাকতে হবে।
– এটি যেন পাঠকের আগ্রহ তৈরি করে এবং পুরো গবেষণার সারাংশ তুলে ধরে।
৩. ভূমিকা (Introduction)
ভূমিকা অংশে গবেষণার প্রেক্ষাপট, প্রাসঙ্গিকতা এবং বর্তমান গবেষণাক্ষেত্রে আপনার গবেষণার স্থান ব্যাখ্যা করতে হবে।
– গবেষণার সমস্যা (Problem statement): বর্তমান বাস্তবতায় – গবেষণাক্ষেত্রে যে গ্যাপ রয়েছে, সেটি স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করুন।
– গবেষণা প্রশ্ন (Research questions): গবেষণাটি কী প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে?
– উদ্দেশ্য (Objectives): সাধারণ ও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে লিখুন।
– গবেষণার গুরুত্ব (Significance): কেন এই গবেষণা দরকার? এটি সমাজ, শিক্ষা, বিজ্ঞান বা শিল্পে কী অবদান রাখতে পারে?
৪. সাহিত্য পর্যালোচনা (Literature Review)
– আপনার গবেষণার সাথে সম্পর্কিত আগের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সংক্ষেপে পর্যালোচনা করুন।
– বর্তমান গবেষণায় কোথায় ঘাটতি রয়েছে তা উল্লেখ করুন।
– আপনার গবেষণাটি কীভাবে এই গ্যাপ পূরণ করবে তা ব্যাখ্যা করুন।
– প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামো (theoretical framework) বা মডেল ব্যাখ্যা করুন।
৫. গবেষণা পদ্ধতি (Research Methodology)
এই অংশে আপনি কীভাবে গবেষণা করবেন তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
– গবেষণা নকশা (Design): Qualitative, Quantitative, না কি Mixed Methods?
– নমুনা ও অংশগ্রহণকারী: কাদের নিয়ে কাজ করবেন? কীভাবে নমুনা বাছাই করবেন?
– তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি: সার্ভে, ইন্টারভিউ, কেস স্টাডি, এক্সপেরিমেন্ট ইত্যাদি।
– তথ্য বিশ্লেষণ পদ্ধতি: পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, থিম্যাটিক এনালাইসিস, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি।
– নৈতিক বিবেচনা (Ethical Considerations): অংশগ্রহণকারীদের সম্মতি, গোপনীয়তা ও নৈতিকতা অনুসরণ।
৬. প্রত্যাশিত ফলাফল ও অবদান (Expected Outcomes and Contribution)
– কী ধরনের ফলাফল আসতে পারে তার সম্ভাব্য আলোচনা করুন।
– গবেষণার সম্ভাব্য অবদান কীভাবে শিক্ষাক্ষেত্র, শিল্প বা সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে তা ব্যাখ্যা করুন।
৭. গবেষণার সময়রেখা (Research Timeline)
– গবেষণার প্রতিটি ধাপের সময়কাল ব্যাখ্যা করুন।
– চার্ট বা টেবিল ব্যবহার করলে পাঠক সহজে বুঝতে পারে কোন কাজ কখন হবে।
৮. বাজেট (Budget) [যদি প্রয়োজন হয়]
– তথ্য সংগ্রহ, সফটওয়্যার, পরীক্ষানিরীক্ষা, ভ্রমণ, প্রয়োজনে বেতন ও অন্যান্য ব্যয় উল্লেখ করুন।
– বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক ব্যয় উপস্থাপন করুন।
৯. রেফারেন্স (References)
– গবেষণায় যেসব তথ্য বা পূর্ববর্তী লেখকের কাজ ব্যবহার করেছেন, সঠিকভাবে সেগুলোর citation নিশ্চিত করুন।
– APA, MLA, Chicago – যে স্টাইল প্রয়োজন, সেটি অনুসরণ করুন।
ফাইনাল পরামর্শ
– লেখার ধরণ হোক পরিষ্কার, ধারাবাহিক, একাডেমিক এবং সংক্ষিপ্ত।
– ব্যাকরণ ও বানান ঠিক রাখুন।
– গবেষণার প্রশ্ন, উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
– অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা বা অতিরিক্ত শব্দাবলী পরিহার করুন।
– গবেষণার প্রশ্ন, উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–
https://www.facebook.com/share/p/19wvhkJU6u/
Leave a comment