বন্ধু

বাংলা ভাষায় “বন্ধু” শব্দের জন্ম হয়েছে “বন্ধ” শব্দ থেকে। “বন্ধ” শব্দের একটি অর্থ হলো “রুদ্ধ”, অন্য অর্থটি হলো “বাঁধন”, অর্থাৎ আপনার ভাবনার সাথে যার ভাবনার বাঁধন গড়ে ওঠে সে-ই আপনার বন্ধু হয়ে ওঠে। বন্ধুত্ব যে শুধু মানুষে মানুষে হয় তা নয়, প্রাণীদের অন্যান্য প্রজাতিতেও বন্ধুত্বের বহু হদিশ পাওয়া গেছে। প্রজাতি নির্বিশেষে যে কোনো প্রাণী আরেকটি প্রাণীকে সহজেই বন্ধু মনে করার প্রধান শর্ত হলো – প্রাণীটির মস্তিষ্কে নিজের ও অপর প্রাণীটির মধ্যে বৈষম্য বোধের অভাব। এই বৈষম্য বোধের অভাবই উভয়ের মস্তিষ্কের ভাবনার মধ্যে বাঁধন গড়ে তোলে।

একই প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে বৈষম্য বোধের অভাব খুব সহজেই চোখে পড়লেও ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যেও তা বিরল নয়, যেমন কুকুর সহজেই মানুষের পোষ মানে বা মনুষের বন্ধু হয়। কুকুর সহজেই মানুষের বন্ধু হওয়ার একটি কারণ হলো কুকুরের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকলাপের সাথে মানুষের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকলাপের সাদৃশ্য বা মিল। একটি প্রাপ্তবয়স্ক কুকুরের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকলাপ অনেকটাই একটি তিন থেকে পাঁচ বছর বয়স্ক মানবশিশুর মতন। সেইজন্যই পোষা কুকুর মারা গেলে মানুষ সাধারণত পুনরায় কুকুর পোষে; যে মানুষ একবার কুকুর পুষেছে, সে বাকি জীবনটা কুকুরের বন্ধুত্ব ছাড়া মোটেই কাটাতে পারে না। কুকুরের সহজেই মানুষের বন্ধু হয়ে ওঠার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো কুকুরের মস্তিষ্কের “প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স”(যা প্রায় সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মস্তিষ্কের বাইরের স্তরের অগ্রভাগে অবস্থিত একটি অংশ)। জানলে হয়ত আপনি হাসবেন যে কুকুরের মস্তিষ্কের “প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স” অংশটি তার নিজের সাথে মানুষের পার্থক্য করতে এতটাই অসমর্থ যে কুকুরেরা সারা জীবনই মানুষকে কুকুর ভাবে, আর সেইজন্যই কুকুরেরা মানুষের এত ভালো বন্ধু হয়ে যায় ! কিন্তু বানর প্রজাতি বিচারে মানুষের অধিক কাছাকাছি হলেও বানরকে পোষ মানানো অপেক্ষাকৃত অনেক কঠিন কারণ বানরের মস্তিষ্কের “প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স” অংশটি তার নিজের ও মানুষের মধ্যে পার্থক্যের ব্যাপারে বেশ সচেতন !

বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর মত বিভিন্ন পাখিও মানুষের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে, তবে তা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে যেমন তাদের মস্তিষ্কের “প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স” অংশটির উপর নির্ভর করে, পাখিদের ক্ষেত্রে তা নির্ভর করে তাদের মস্তিষ্কের “নিডোপলিয়ম্ কডোল্যাটরল্”(যা প্রায় সকল পাখিদের মস্তিষ্কের বাইরের স্তরের অগ্রভাগে অবস্থিত একটি অংশ) অংশের উপর।

Diganta Paul
Latest posts by Diganta Paul (see all)

About Diganta Paul

জন্ম: ১৯৮৯ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলায়। শিক্ষা: প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা হাওড়া জিলা স্কুলে। এরপর কলকাতার "সেইন্ট থমাস্ কলেজ অফ এঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি" কলেজ থেকে বৈদ্যুতিক কারিগরিবিদ্যা নিয়ে প্রযুক্তিতে স্নাতক (B.Tech. in Electrical Engineering)। পেশা: তথ্য প্রযুক্তি পেশাদার (IT Professional)। নেশা: বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা। এছাড়াও বিজ্ঞান প্রবন্ধ, বিজ্ঞান নিবন্ধ, কল্পবিজ্ঞান ভিত্তিক গল্প, কল্পবিজ্ঞান কবিতা, গাণিতিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান নাটক, ও বিজ্ঞান কবিতা লেখা। যোগাযোগ: digantapaul5@gmail.com

Check Also

আকর্ষণীয়(য়া)

মস্তিষ্কের "প্রোসিডিউরাল লং টার্ম মেমোরি"-কে বলা হয় “অচেতন স্মৃতি”। তাই আমাদের প্রোসিডিউরাল লং টার্ম মেমোরি-তে নির্ধারিত আকর্ষণীয়তা বিষয়ক বিশ্লেষণমূলক কাজগুলির ব্যাপারে আমরা কিছু টেরই পাই না। কাজগুলি সম্পাদনার সময়ও সেই ব্যাপারে আমাদের কোন হুঁশ থাকে না, শুধু স্বজ্ঞাত অঞ্চল সামনের মানুষটার বাহ্যিক রূপের আকর্ষণীয়তা সম্পর্কে যে সিদ্ধান্তটুকু নেয় সেটা আমরা টের পাই – আমাদের উপলব্ধি হয় যে মানুষটা আকর্ষণীয় বা সাদামাটা বা কুৎসিত।

ফেসবুক কমেন্ট


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।