স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম

পদার্থবিদ্যার বহু শাখা যেমন ‘ক্লাসিকাল মেকানিক্স’, ‘স্পেশাল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি’, ‘জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি’ ইত্যাদির ভিৎ হলো “স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম”। সহজ করে বললে “স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম” হলো – স্পেস বা ব্যাপ্তি বা দূরত্ব বা দৈর্ঘ্য এবং টাইম বা সময় একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠা এমন এক পরিকাঠামো যাকে প্রেক্ষাপট (ব্যাকগ্রাউন্ড) হিসাবে ব্যবহার করে সকল প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে চলেছে বলে আমাদের ধারণা হয়।

কখনও ভেবে দেখেছেন যে কেন মানুষের বাস্তব চেতনা শুধু দৈর্ঘ্য বা দূরত্ব মাত্রা ও সময় মাত্রার বেড়াজালে আবদ্ধ? কেন আমাদের উপলব্ধি “স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম” প্রেক্ষাপট ছেড়ে বেরোতে পারে না ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পদার্থবিদ্যা নিজেই হোঁচট খায় ! তবে পদার্থবিদ্যার প্রসূতি যা অর্থাৎ মনুষ্য-মস্তিষ্ক, তার গভীরে প্রবেশ করলে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতেও পারে ! এই প্রশ্নের উত্তর খুব সম্ভবত লুকিয়ে আছে “গামা মস্তিষ্ক-তরঙ্গ”-এ।

আমরা যখন ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে কিছু অনুভব করি বা কিছু স্মরণ করি বা নতুন কিছু চিন্তা করি, আমাদের মস্তিষ্ক যে অজস্র স্নায়ুকোষ বা নিউরোন নিয়ে তৈরি হয়, তাদের মধ্যে কিছু স্নায়ুকোষ একটি ক্রমে (সিকোয়েন্স) উত্তেজিত হয়ে ওঠে। হারমোনিয়ামের কিবোর্ড-র উপর বাদকের চঞ্চল আঙুলগুলো লক্ষ্য করবেন – কিভাবে আঙুলগুলো হারমোনিয়ামের কি-গুলিকে ছন্দবদ্ধভাবে আঘাত করে চলে। মস্তিষ্কের কিছু স্নায়ুকোষ কখনও কখনও এরকম ছন্দবদ্ধভাবেও (রিদ্মিক) উত্তেজিত হয়। এক্ষেত্রে ঐ স্নায়ুকোষগোলোর প্রত্যেকে কিছুক্ষণ পর পরই  বারবার উত্তেজিত হয় – স্নায়ুকোষের উত্তেজিত হওয়ার এই ছন্দকেই মস্তিষ্ক-তরঙ্গ বলে। এখনও পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কে যত রকমের তরঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী কম্পাঙ্কের মস্তিষ্ক-তরঙ্গ হলো ঐ “গামা তরঙ্গ” যা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার সময় অথবা জাগ্রত বা ধ্যানমগ্ন অবস্থায় অন্যান্য মস্তিষ্ক-তরঙ্গের পাশাপাশি আমাদের মস্তিষ্কে খেলে বেড়ায়।

আমাদের জেগে থাকা, ঘুমিয়ে পড়া, ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা, ঘুম থেকে জেগে ওঠা, বা ধ্যানমগ্ন হওয়া – মস্তিষ্কের এই বিভিন্ন অবস্থাগুলো এবং পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে সংগ্রহ করা বিভিন্ন তথ্য মস্তিষ্কের যে সকল অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের মধ্যে প্রধান হলো – “সেরিব্রাল কর্টেক্স”, “মিডব্রেইন”, ও “থ্যালামাস” যারা একে অপরের সাথে বেশ কিছু নিউরাল লুপ-র (নিউরাল লুপ হলো কতগুলি স্নায়ুকোষের সমষ্টি  যারা কোন একটি নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য একটি সিরিস বা ক্রমে সংযুক্ত থেকে তথ্যকে মস্তিষ্কের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বয়ে নিয়ে যায়) মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে।

মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স ও তার প্রধান চারটি খণ্ড

সেরিব্রাল কর্টেক্স ও থ্যালামাস সংযোগকারী যে নিউরাল লুপগুলিতে গামা তরঙ্গ বয়ে চলে, তারা আমাদের মস্তিষ্কে “স্পেস” বা “স্থান” বা “দৈর্ঘ্য” বা “দূরত্ব”-র অনুভূতি জাগায় এবং গামা তরঙ্গ বহনকারী যে নিউরাল লুপগুলি সেরিব্রাল কর্টেক্স-র সাথে মিডব্রেইন-কে সংযুক্ত করে তারা মস্তিষ্কে “টাইম” বা “সময়”-র উপলব্ধিকে জন্ম দেয়।

মিডব্রেইন

 

 

 

 

 

 

 

 

থ্যালামাস

গামা তরঙ্গ এই সকল নিউরাল লুপগুলির মধ্যে রেজোনেন্স ঘটিয়ে আমাদের মস্তিষ্কে তৈরি করে “স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম”-র ধারণা।

Diganta Paul
Latest posts by Diganta Paul (see all)

About Diganta Paul

জন্ম: ১৯৮৯ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলায়। শিক্ষা: প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা হাওড়া জিলা স্কুলে। এরপর কলকাতার "সেইন্ট থমাস্ কলেজ অফ এঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি" কলেজ থেকে বৈদ্যুতিক কারিগরিবিদ্যা নিয়ে প্রযুক্তিতে স্নাতক (B.Tech. in Electrical Engineering)। পেশা: তথ্য প্রযুক্তি পেশাদার (IT Professional)। নেশা: বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা। এছাড়াও বিজ্ঞান প্রবন্ধ, বিজ্ঞান নিবন্ধ, কল্পবিজ্ঞান ভিত্তিক গল্প, কল্পবিজ্ঞান কবিতা, গাণিতিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান নাটক, ও বিজ্ঞান কবিতা লেখা। যোগাযোগ: digantapaul5@gmail.com

Check Also

জ্বালানী বিহীন বিশ্ব

বাংলাদেশে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সমস্যায় সমাধান করতে পারছিনা, তা নিয়ে হিমশিম খেলেও অন্যদিকে বিশ্বের …

ফেসবুক কমেন্ট


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।