স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

অন্ধকারে ভয়

Share
Share

অন্ধকারকে বা অন্ধকারে দেখতে না পাওয়া কোন কিছুকে ভয় পাওয়া ডাক্তারি শাস্ত্রে একটি মানসিক রোগ হিসাবে গণ্য হয়। এই রোগকে “নিক্টোফোবিয়া” নামে অভিহিত করা হয়েছে। তবে অন্ধকার বা অন্ধকারে দেখতে না পাওয়া কোন কিছুর প্রতি মৃদু উদ্বেগ মানুষের সাধারণ স্বভাব। কোন ব্যক্তি বাস্তবে যতই সাহসী হোন না কেন, গভীর রাতে অন্ধকার জনশূন্য পথে হাঁটার সময়ে তাঁর একটুও গা ছম্ছম্ করবে না তা হয় না। মানুষের অন্ধকারে এই উদ্বেগ বা ভয়ের কারণ কি তা কখনও ভেবে দেখেছেন ?

আমাদের পূর্বপুরুষদের অর্থাৎ আদিম মানুষদের হিংস্র পশুদের সাথে লড়াই করে জীবন ধারণ করতে হত। মানুষের মস্তিষ্ক একক সময়ে যত পরিমাণ ইন্দ্রিয়লব্ধ তথ্য বিশ্লেষণ করে তার নব্বই শতাংশেরও বেশী তথ্য দর্শন-ইন্দ্রিয় থেকে পাওয়া। মানুষের এতটা গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয় দর্শন-ইন্দ্রিয় অর্থাৎ চোখ অন্ধকারে অকেজো থাকে কারণ মানুষের চোখের রেটিনা অংশে থাকা আলোক সংবেদী কোষ রড্ কোষের সংখ্যা বেশ কম। চোখে থাকা এই রড্ কোষগুলিই অন্ধকারে যতটা সম্ভব পরিষ্কারভাবে দেখতে সাহায্য করে। যে সকল হিংস্র পশুর চোখের রেটিনা অংশে রড্ কোষের সংখ্যা মানুষ অপেক্ষা অনেক বেশী যেমন বাঘ, সিংহ ইত্যাদি মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সাধারণত রাতের অন্ধকারে আদিম মানুষকে আক্রমণ করে শিকার করত। আদিম যুগে রাতের অন্ধকারে বহুবার মানুষ এইভাবে আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুর তান্ডবের সাক্ষী হয়েছে, নিজেদের সঙ্গী-সাথীদের হারিয়েছে ! এই সকল অভিজ্ঞতা তাদের জিনগত তথ্যে বিবিধ প্রভাব ফেলেছিল ও জিনের পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। বংশপরম্পরায় সেই সকল পরিবর্তিত জিনগুলির কয়েকটি আমরা বহন করছি। এই যুগে আমাদেরকে আর হিংস্র পশুর সাথে লড়াই করে বাঁচতে হয় না ঠিকই তবে এই পরিবর্তিত জিনগুলি আমাদের মস্তিষ্কের “সিম্যান্টিক মেমোরি”(সিম্যান্টিক মেমোরি হলো আমাদের মস্তিষ্কের এক বিশেষ প্রকারের দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতি যা কথা, ধারণা, সংখ্যা, আবেগ ইত্যাদি সঞ্চয় করে রাখে)-তে উপস্থিত স্নায়ুকোষগুলোর গঠন ও কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলেছে যা আমাদের মধ্যে অন্ধকার বা অন্ধকারে দেখতে না পাওয়া কোন কিছুর প্রতি এক স্বাভাবিক মৃদু উদ্বেগ বা ভয়ের জন্ম দিয়েছে।

Share
Written by
Diganta Paul -

জন্ম: ১৯৮৯ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলায়। শিক্ষা: প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা হাওড়া জিলা স্কুলে। এরপর কলকাতার "সেইন্ট থমাস্ কলেজ অফ এঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি" কলেজ থেকে বৈদ্যুতিক কারিগরিবিদ্যা নিয়ে প্রযুক্তিতে স্নাতক (B.Tech. in Electrical Engineering)। পেশা: তথ্য প্রযুক্তি পেশাদার (IT Professional)। নেশা: বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা। এছাড়াও বিজ্ঞান প্রবন্ধ, বিজ্ঞান নিবন্ধ, কল্পবিজ্ঞান ভিত্তিক গল্প, কল্পবিজ্ঞান কবিতা, গাণিতিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান নাটক, ও বিজ্ঞান কবিতা লেখা। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি রৌপ্য পদক। যোগাযোগ: [email protected]

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
GenZপরিবেশ ও পৃথিবীসাক্ষাৎকারস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

ই-বর্জ্য এর গবেষক হৃদয় রায়

ই-বর্জ এর গবেষক হৃদয় রায়। বাংলাদেশের মধ্যে ই-বর্জ নিয়ে কাজ করছে এমন...

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

পাখার শব্দে নাম যে পাখির

ঈগল, বাজ ইত্যাদি পাখি মানুষকে এরোপ্লেন আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা জোগালেও ফড়িং, মৌমাছি ইত্যাদি...

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

মাছরাঙার মাছ ধরা

একটি মাছরাঙা প্রতিদিন নিজের ওজনের প্রায় সম পরিমাণ ছোটো মাছ শিকার করে...

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

বন্ধু

প্রজাতি নির্বিশেষে যে কোনো প্রাণী আরেকটি প্রাণীকে সহজেই বন্ধু মনে করার প্রধান...

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

প্রযুক্তিবিদ প্রকৃতি

হয়ত জেনে আপনি অবাক হবেন যে আমাদের মস্তিষ্ক নতুন যা কিছু ভাবে,...

দেশ-বিদেশের গবেষক, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের একটি অলাভজনক প্লাটফর্ম। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বাংলাকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে আমাদের নিবেদন বিজ্ঞানী.org

যোগাযোগ

biggani.org [@]জিমেইল.com

Copyright 2024 biggani.org