GenZসাক্ষাৎকার

বিজ্ঞানী ইমতিয়াজ মোস্তাফিজ

Share
Share

নবীন বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমরা কথা বলেছি বিজ্ঞানী ইমতিয়াজ মোস্তাফিজ এর সাথে। তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের University of Leicester এ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এবং স্ট্রাটেজি বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:

University of Leicester, United Kingdom

প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।

আমি মোঃ ইমতিয়াজ মোস্তাফিজ। বর্তমানে আমি যুক্তরাজ্যের University of Leicester এ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এবং স্ট্রাটেজি বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছি।

২০২৪ সালে আমি ব্রিটিশ একাডেমী এর গ্লোবাল ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড (এক্সপেকশনাল ট্যালেন্ট) পেয়েছি। আমি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এবং স্ট্র্যাটেজি বিষয়ে বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় জার্নালে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের লেখক। আমি ব্রিটিশ একাডেমি অফ ম্যানেজমেন্টের এবং ইকোনোমিক্স অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ কাউন্সিল – ইউকে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশনের পিয়ার রিভিউ কলেজের সদস্য।

এর আগে, আমি গ্রেটার ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুলে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছি এবং সেখানে গ্লোবাল বিজনেস অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ সেন্টারের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়া, আমি শেফিল্ড বিজনেস স্কুলে সিনিয়র প্রভাষক এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সাবজেক্ট গ্রুপের ডেপুটি হেড হিসেবে কাজ করেছি।

আপনার গবেষনার বিষয় কি?

আমার গবেষণার প্রধান বিষয়বস্তু হলো আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও কৌশল। আমি গবেষণা করি কীভাবে ছোট এবং মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে পারে এবং সেখানে সফল হতে পারে।

আমি বিশেষ করে এই বিষয়ে আগ্রহী যে, একটি কোম্পানি কীভাবে নতুন বাজারে সুযোগ খুঁজে পায়, সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে ব্যবসার প্রসার ঘটায়, এবং প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করে। এছাড়াও, আমি গবেষণা করি কীভাবে কোম্পানিগুলো তাদের জ্ঞান এবং ক্ষমতাগুলোকে ব্যবহার করে নতুন উদ্ভাবন আনতে পারে এবং বিশ্ববাজারে সফল হতে পারে।

আমার গবেষণার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কিভাবে উদ্যোক্তারা দ্রুত পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে, আমি বিশেষ করে তাদের কৌশলগত দক্ষতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা, এবং নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য যে ঝুঁকি নিতে হয়, সে সম্পর্কে গবেষণা করি। এছাড়াও, আমি গবেষণা করি কীভাবে উদ্যোক্তারা বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটান।

উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো নতুন এবং অপরিচিত বাজারে প্রবেশ করা। আমার গবেষণার একটি অংশে আমি এটা উল্লেখ করি যে, উদ্যোক্তারা কীভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন সুযোগ খুঁজে পান এবং সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে তারা তাদের ব্যবসাকে বড় পরিসরে নিয়ে যান। এই সব বিষয় নিয়ে আমার গবেষণা কাজ উদ্যোক্তাদের জন্য কার্যকর এবং সহায়ক হতে পারে।

আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?

আমার গবেষণা কাজগুলি অর্থনীতির উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে, এগুলো উদ্যোক্তা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং কৌশল সরবরাহ করে, যা তাদের কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। নতুন উদ্যোক্তারা আমার গবেষণা থেকে শিখতে পারেন কীভাবে নতুন বাজারে প্রবেশ করতে হয়, ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হয়, এবং উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণ করে ব্যবসাকে সফল করতে হয়। পাশাপাশি, ছোট ব্যবসাগুলোও কৌশলগত তথ্য লাভ করতে পারে, যা তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি এবং নতুন পণ্য ও সেবা প্রবর্তনে সহায়তা করে। আমার গবেষণার ফলাফল নীতিনির্ধারকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের বুঝতে সাহায্য করে যে আন্তর্জাতিক ব্যবসা এবং উদ্যোক্তা বিকাশের জন্য কী ধরনের নীতি এবং সহায়তা প্রয়োজন। সামগ্রিকভাবে, আমার গবেষণা আন্তর্জাতিক ব্যবসার প্রসার এবং অর্থনীতির উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?

একজন গবেষকের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে নজর থাকা প্রয়োজন, যা তাদের গবেষণাতে কার্যকরী হতে পারে। প্রথমত, অনুসন্ধিৎসু মনোভাব বা কৌতূহল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন গবেষককে সবসময় নতুন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আগ্রহী হতে হবে এবং জানা বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা একজন গবেষককে নতুন ধারণা এবং সমাধান খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।

দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তিগত দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একজন গবেষককে সবসময় নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হয় এবং সেগুলোকে দক্ষভাবে প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়াও, নৈর্ব্যক্তিকতা বা ব্যক্তিগত মতামত এবং আবেগকে সংযত রেখে যুক্তি ও প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা গবেষকের আরেকটি প্রয়োজনীয় গুণ।

তৃতীয়ত, ধৈর্য হলো একটি অপরিহার্য গুণ। গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা ও অপেক্ষা প্রয়োজন, এবং ব্যর্থতা বা অপ্রত্যাশিত ফলাফলকে সহ্য করে এগিয়ে যাওয়া জরুরি। সমালোচনামূলক চিন্তা করার ক্ষমতা একজন গবেষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিভিন্ন তত্ত্ব, উপাত্ত এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা করতে হয়।

পাশাপাশি, একজন গবেষককে তার গবেষণা এবং আবিষ্কারগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করতে এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করতে সক্ষম হতে হয়। এই সমস্ত গুণাবলী একজন গবেষককে তার গবেষণা কার্যক্রমে সফল হতে এবং নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সহায়ক করে।

বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?

গবেষণা হলো একটি ধৈর্য এবং সময়সাপেক্ষ যাত্রা, যেখানে একজন গবেষককে নতুন কিছু শিখতে, উদ্ভাবন করতে, এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। যারা গবেষণায় আগ্রহী, কখনোই আপনার কৌতূহল হারাবেন না। নতুন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন এবং প্রচলিত ধারণাগুলোকে প্রশ্ন করুন।

গবেষণার পথে ধৈর্যশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে, এবং ব্যর্থতা আসবেই, কিন্তু সেই ব্যর্থতা থেকে শেখার চেষ্টা করুন এবং এগিয়ে যান। সমালোচনামূলক চিন্তা আপনার গবেষণাকে আরও শক্তিশালী করবে। আপনার গবেষণার মাধ্যমে সমাজের জন্য কিছু করতে পারলে, সেটাই হবে আপনার সবচেয়ে বড় সফলতা। বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এমন বিষয়ে গবেষণা করুন এবং আপনার জ্ঞানকে দেশের কল্যাণে কাজে লাগান।

আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করতে হলে বিশ্বের সেরা গবেষকদের কাজগুলো অনুসরণ করুন এবং নিজেকে ক্রমাগত উন্নত করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনার সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা আপনাকে এবং আপনার দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। নিরলস পরিশ্রম করুন, এবং সর্বদা নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী এবং গবেষক হিসেবে, আপনারাই দেশের অগ্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি।

আপনার ওয়েবসাইট, গবেষনাকাজের লিংক ইত্যাদি (যদি থাকে, optional)

https://scholar.google.com/citations?user=pCcKuzIAAAAJ&hl=en

https://www.linkedin.com/in/dr-md-imtiaz-mostafiz-fhea-89884048

আপনার গযোগাযোগের তথ্য:

https://www.facebook.com/august026

Share
Written by
ড. মশিউর রহমান -

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
সাক্ষাৎকারসাধারণ বিজ্ঞান

ম্যাটেরিয়ালস এবং রিলায়েবিলিটি এর বিজ্ঞানী ড. রাশেদ ইসলামের সাক্ষাৎকার

আজ আমরা বিজ্ঞানী.অর্গ-এর পক্ষ থেকে কথা বলেছি বাংলাদেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. রাশেদ...

বিজ্ঞান লেখকসাক্ষাৎকার

নবীন প্রজন্মের বিজ্ঞান লেখক: সুজয় কুমার দাশ 

বিজ্ঞানী অর্গ এ বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকার নেবার পাশাপাশি বিজ্ঞান লেখকদের সাক্ষাৎকারও নিচ্ছি। তার...

সাক্ষাৎকার

ইলেকট্রোক্যাটালিস্ট ডিজাইনে সম্ভাবনা: গবেষক মো. ইয়াছিন পাবেল!

মো. ইয়াছিন পাবেল রসায়ন বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে...

সাক্ষাৎকার

শিক্ষকতা ও চিকিৎসা সেবায় নিবেদিত প্রাণ: ডা. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান খান!

ডা. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান খানময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ সম্প্রতি আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি ডা. মুহাম্মদ...

সাক্ষাৎকার

জ্বালানি সমাধানের নবজাগরণ: ড. মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের ভাবনা !

সম্প্রতি আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি জ্বালানি সমাধানের নবজাগরণ: ড. মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের। তেল...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.