নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
📩 [email protected]
– প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের গল্প নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন
“গত মাসে আমার বড় ভাইয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে হুট করে ২৫ হাজার টাকা চলে গেল। পরে ব্যাংক থেকে জানালো, উনি নাকি একটা ফিশিং লিংকে ক্লিক করেছিলেন!”
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের আড্ডায় এমন গল্প এখন প্রায়ই শোনা যায়। তবে বাস্তবতা আরও ভয়ংকর—বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মানুষের পক্ষে একা এর মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ঠিক এই চিন্তা থেকেই মাইক্রোসফট সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে নিয়ে এসেছে অত্যাধুনিক ১১টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এজেন্ট, যাদের কাজ হবে ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া।
কেন এই পরিবর্তন জরুরি? – কিছু ভয়ংকর পরিসংখ্যান
সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে।
- Cybersecurity Ventures রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৯.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ১০.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
- FBI’s Internet Crime Complaint Center (IC3)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রেই সাইবার অপরাধে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১২.৫ বিলিয়ন ডলার।
- মাইক্রোসফট ২০২৩ সালে একাই ট্র্যাক করেছে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ফিশিং ইমেইল।
- University of Maryland-এর গবেষণা বলছে, বিশ্বে প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে একটি করে সাইবার হামলা হয়।
- IBM’s 2023 Cost of a Data Breach Report অনুযায়ী, প্রতি ডেটা ব্রিচে গড় ক্ষতি দাঁড়ায় ৪.৪৫ মিলিয়ন ডলার।
এই বিপুল পরিমাণ সাইবার হুমকি নিয়ন্ত্রণ করা মানব-সক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
এআই এজেন্ট: নিরাপত্তার নতুন সৈনিক
মানুষের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার জন্য মাইক্রোসফট তাদের ১১টি AI-ভিত্তিক নিরাপত্তা এজেন্ট চালু করেছে। এই এজেন্টগুলো বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত, যাদের কাজ হবে—
- লক্ষ-কোটি ইমেইল ও মেসেজ স্ক্যান করে ফিশিং লিংক শনাক্ত করা
- রিয়েল টাইমে হ্যাকিং প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা
- প্রতিটি হামলার উৎস চিহ্নিত করা এবং হ্যাকারদের কার্যক্রম মনিটর করা
মাইক্রোসফট বলছে, এসব এজেন্ট নিরলসভাবে ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করবে, যা মানুষের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এআই ছাড়া কি সম্ভব সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ?
সাইবার অপরাধীরা এখন নিজেরাই এআই ব্যবহার করে। ডার্ক ওয়েব এখন AI-জেনারেটেড হ্যাকিং টুলে পরিপূর্ণ।
- World Economic Forum (2023) জানায়, মাত্র ১০ থেকে ৫০ ডলার খরচেই হ্যাকাররা AI-চালিত হ্যাকিং টুল কিনতে পারে।
- এমনকি কোডিং না জানা ব্যক্তিরাও এখন AI Tools দিয়ে ফিশিং ইমেইল, স্ক্যাম ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, “মানুষের তৈরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে আর AI-চালিত সাইবার হামলা মোকাবিলা সম্ভব নয়। এআই-এর বিরুদ্ধে লড়তে হলে আমাদেরও AI প্রয়োজন।”
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
বাংলাদেশেও ডিজিটাল সেবার ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে:
- BTRC (২০২৩) অনুসারে দেশে বর্তমানে ১৪ কোটির বেশি মোবাইল ব্যবহারকারী, যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মোবাইল ফাইন্যান্সিং সেবা গ্রহণ করেন।
- Bangladesh e-Government Computer Incident Response Team (BGD e-Gov CIRT)-এর তথ্য মতে, ২০২৩ সালে দেশে সাইবার হামলার হার ৮৭% বেড়েছে আগের বছরের তুলনায়।
- দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ও সরকারি সার্ভারগুলো সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
তাই, বাংলাদেশকেও দ্রুত এআই-ভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের করণীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এখনই সময় প্রস্তুতি নেওয়ার:
- কোর্স ও প্রশিক্ষণ: AI, সাইবার নিরাপত্তা, মেশিন লার্নিং, এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স-এ দক্ষতা অর্জন করা।
- গবেষণায় অংশগ্রহণ: বাংলাদেশ-উপযোগী AI সাইবার নিরাপত্তা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করা।
- সচেতনতা ছড়ানো: অন্যদের নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করে তোলা।
শেষ কথা: এআই-ই হতে পারে ভবিষ্যতের ঢাল
মানুষ ক্লান্ত হয়, ভুল করে, আবেগপ্রবণ হয়। কিন্তু AI নিরলস, নির্ভুল এবং অনিরপেক্ষ।
মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপ পুরো প্রযুক্তি বিশ্বের জন্য একটি শক্ত বার্তা: মানুষকে রক্ষা করার লড়াইয়ে এআই-ই হতে পারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।
আপনারা কী ভাবছেন? বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ কি তাহলে এআই-এর হাতেই যাবে?
Leave a comment