সকালবেলা পার্কে হাঁটার পর বাড়ি ফিরে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে স্মৃতি মুঠোফোন খুললেন। তার নিজের ছোট্ট ব্যবসার বিজ্ঞাপন তৈরির দুশ্চিন্তা ঘুরছে মাথায়। ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, মডেলদের জন্য এত খরচ! তার সীমিত বাজেটে এতো কিছু সম্ভব নয়। হঠাৎ তার মনে পড়লো, ‘ChatGPT’ নিয়ে এক বন্ধুর গল্প। ভাবলেন, একবার চেষ্টা করলে কেমন হয়?
স্মৃতি চ্যাটজিপিটি খুললেন, GPT-4o নির্বাচন করে লিখলেন, “একটি নতুন স্বাস্থ্যকর পানীয়র বিজ্ঞাপন কনসেপ্ট দাও, যেটিতে প্রোবায়োটিক আছে কিন্তু কোনো চিনি নেই।” কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সামনে হাজির হল—
“পিউরবায়োটিকস: সুস্বাস্থ্যের নতুন সঙ্গী, চিনিমুক্ত শীতল অনুভূতি।”
তিনি চমকে গেলেন! বিজ্ঞাপনের টেক্সট একদম নিখুঁত:
🥤 প্রোবায়োটিক শক্তি – হজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সার্বিক সুস্থতার সহায়ক
🚫 ০% চিনি, ১০০% সুস্থতা – সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক মিষ্টতায়
🌱 বিশুদ্ধ উপাদান – উদ্ভিদ থেকে আহরিত, কোনো কৃত্রিমতা নেই
💧 হালকা, সতেজ, জীবন্ত – সুস্বাদে ভরা সুস্থতার চুমুক
এরপর স্মৃতি বললেন, “এবার এই বিজ্ঞাপনটি একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে রূপান্তর করো।” কয়েকবারের প্রচেষ্টায় ChatGPT থেকে তৈরি হল দুইটি আকর্ষণীয় ছবি। প্রথমটিতে একজন নারী জিম থেকে বেরিয়ে পিউরবায়োটিকস পান করছেন, আর দ্বিতীয়টিতে দুই বন্ধু—একজন এশিয়ান—ম্যানহাটনের রাস্তায় গল্প করতে করতে হাঁটছেন, হাতে পানীয়টি। সব মিলিয়ে সময় লাগলো মাত্র পাঁচ মিনিট!
স্মৃতির মতো অনেক ছোট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার জন্য এই ঘটনা যেন স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। আগে যেখানে কয়েক হাজার টাকা এবং কয়েকদিন সময় লেগে যেত, সেখানে কয়েক মিনিটেই সম্ভব হয়ে উঠছে উচ্চমানের বিজ্ঞাপন নির্মাণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই পরিবর্তনের পেছনে কী আছে?
সম্প্রতি OpenAI সকলের জন্য ChatGPT-তে চালু করেছে ছবি তৈরির সুবিধা, GPT-4o এর মাধ্যমে। এর ফলে ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, মডেলদের ওপর নির্ভরতা কমবে; বিজ্ঞাপন তৈরি হবে দ্রুত, সহজে এবং কম খরচে। বিপণন খাতের এই পরিবর্তন শুধু সাশ্রয়ী নয়, বরং এটি সম্পূর্ণ বিপণন কৌশলকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ আহসান কবীর বলেন, “এআই প্রযুক্তি বিপণন খাতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ‘প্রম্পটিং’— অর্থাৎ এআই-কে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার দক্ষতা অর্জন জরুরি হয়ে পড়বে। ভবিষ্যতে শুধু মার্কেটিং নয়, অন্যান্য সৃজনশীল খাতেও এই দক্ষতা কাজে লাগবে।”
সাহিত্যিক ও প্রযুক্তিবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “এআই মানুষের প্রতিভার বিকল্প নয়, বরং এটি মানুষকে আরও সৃজনশীল এবং কার্যকর হতে সাহায্য করবে। প্রযুক্তির সাথে মানুষের সহযোগিতা ভবিষ্যতের কাজের নতুন মডেল তৈরি করবে। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন এআই-কে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টি ভুলে না যাই।”
তবে অনেকেই উদ্বিগ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নওরীন হোসেনের মতে, “এমন প্রযুক্তি কাজকে সহজ করলেও অনেকের চাকরি ঝুঁকির মুখে ফেলবে। আমাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব নতুন দক্ষতা অর্জন করে এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হওয়া। বিশেষ করে তরুণদের জন্য সময় এখনই নিজেদের নতুন প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলার।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিপণনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই বিকাশ একটি বড় ‘সিগন্যাল’। মার্কেটিং দলগুলো ছোট, দ্রুত এবং আরও দক্ষ হয়ে উঠবে, কর্মক্ষেত্রে আসবে বড় ধরনের পরিবর্তন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি প্রস্তুত এই নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে?
Leave a comment