তথ্যপ্রযুক্তি

নতুন ফিচার গ্রহণের পূর্বে ব্যবসার লাভ ক্ষতির বিশ্লেষণ

Share
Share

আমার কর্মস্থলে আমার দায়িত্ব হলো নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ব্যবহারকারীদের আমাদের ডিভাইস ব্যবহারে সুবিধা প্রদান করা এবং তাদেরকে আমাদের সিস্টেম ব্যবহারে জন্য উদ্বুদ্ধ করা। কিছুদিন আগে আমাদের সিস্টেমটিতে আর কী ফিচার যোগ করা যায় যা ব্যবহারকারীদের সুবিধা আনবে- তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমি তখন প্রস্তাব করলাম যে, “এখানে কাস্টমার সাপোর্টের একটি বট বসিয়ে দিলে কাস্টমাররা সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে“। আমার প্রস্তাব শুনে আমাদের অপারেশন টিম বেশ অবাক হল। তাদের অবাক হবার কারণ হল, শুধু একটি ফিচার যোগ করলেই হবে না—কাস্টমার সার্ভিসের কাউকে এর অপারেশনের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে এবং কাস্টমারদের তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ এইখানে একটি টিমকে সার্বক্ষণিক সংযুক্ত করতে হবে, যা ব্যবসায়িক লাভ তেমন দিবে না।

পরবর্তীতে সামগ্রিক অবস্থা বিচার করে বুঝতে পারলাম যে আমার এই প্রস্তাবটি অপরিপক্ব ছিল। শুধু মাত্র ফিচার যোগ করলেই হবে না, এর ফলে সামগ্রিক ব্যবসায় কী প্রভাব পড়বে এবং কোন ব্যবসায়িক সুবিধা পাওয়া যাবে কিনা – তা বিবেচনা করতে হবে। এরপর আমি এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করলাম এবং আমার আজকের লেখাটি সেই অভিজ্ঞতার আলোকে লিখলাম।

আমরা প্রযুক্তিবিদরা প্রায়শই কোনো সিস্টেমে (যেমন ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, কিংবা ডেস্কটপ সফটওয়্যার) নতুন ফিচার সংযোজন করি। এই প্রক্রিয়াটি অনেক সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়ে থাকে, যেখানে আমরা ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করি। তবে, এই ধরনের ফিচার যোগ করার সময় আমাদের অবশ্যই এর ব্যবসায়িক প্রভাব বা ফলাফল গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে।

প্রযুক্তিপ্রেমী হিসেবে আমরা প্রায়শই নতুন কিছু তৈরি করতে উদগ্রীব থাকি। এই উদ্দীপনা থেকেই অনেক সময় আমরা নতুন ফিচার যোগ করি। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বিশেষ করে কোডার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার যারা এটি তৈরি করছেন। কারণ, প্রতিটি নতুন ফিচার যোগ করার আগে আমাদের বিবেচনা করতে হবে:

  • এই ফিচারটি ব্যবহারকারীর জন্য কতটা উপকারী হবে?
  • এটি কোম্পানির ব্যবসায়িক লক্ষ্যের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ?
  • এর বাস্তবায়নে কত সময় ও সম্পদ ব্যয় হবে?
  • এটি অন্যান্য বিদ্যমান ফিচারের সাথে কীভাবে সমন্বিত হবে?

নতুন ফিচার সিস্টেমে সংযোজনের আগে সেটি বিশ্লেষণ করার জন্য বেশ কিছু ফ্রেমওয়ার্ক ও পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করতে পারে:

  1. সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেল (SDLC): SDLC এর বিভিন্ন ধাপ যেমন পরিকল্পনা, বিশ্লেষণ, ডিজাইন ও পরীক্ষণের মাধ্যমে একটি ফিচার মূল্যায়ন করা যেতে পারে। নতুন ফিচার যোগ করার আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বা ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে তার প্রযুক্তিগত, অপারেশনাল এবং অর্থনৈতিক প্রভাব নির্ধারণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন এবং ফিচারটি ব্যবসায়িক লক্ষ্য পূরণে কতটুকু সহায়ক হবে তা মূল্যায়ন করা হয়।
  2. স্কেলড অ্যাজাইল ফ্রেমওয়ার্ক (SAFe): SAFe একটি গঠনমূলক পদ্ধতি দেয় যেটি ফিচার বিশ্লেষণ ও সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে সহায়ক। এটি Weighted Shortest Job First (WSJF) এর মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করে ফিচারগুলোর অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়িক প্রয়োজন এবং প্রযুক্তিগত স্থাপনার সঙ্গতি বিচার করা হয়, যাতে প্রতিটি ফিচার সিস্টেম ও ব্যবসার প্রয়োজনে সঠিকভাবে মানানসই হয়।
  3. ফিচার রোলআউট স্ট্র্যাটেজি: ফিচার ফ্ল্যাগস ব্যবহার করে একটি পরিকল্পিতভাবে ফিচারগুলি সম্প্রসারণ করার কৌশল প্রয়োগ করা যায়, যা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীর জন্য ফিচারটি সীমিত আকারে চালু করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া ও মতামত সংগ্রহ করা হয় এবং পূর্ণাঙ্গভাবে রোলআউটের আগে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা যায়। এটি ফিচারের কার্যকারিতা যাচাই করে এবং পুরো ব্যবহারকারী ভিত্তিতে চালু করার আগে ফিচারটি কতটুকু উপকারী তা নির্ধারণ করতে সহায়ক হয়।

এগুলো ব্যবহার করে আপনি ফিচারটির প্রযুক্তিগত, ব্যবসায়িক এবং ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্লেষণ করতে পারবেন। সুতরাং, নতুন ফিচার যোগ করার সময় আমাদের শুধু প্রযুক্তিগত দিক নয়, বরং ব্যবসায়িক প্রেক্ষাপট, ব্যবহারকারীর চাহিদা, এবং সামগ্রিক সিস্টেমের উপর এর প্রভাব – এই সকল বিষয়গুলো সমন্বিতভাবে বিবেচনা করতে হবে। এভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে আমাদের প্রতিটি নতুন ফিচার সত্যিকারের মূল্য যোগ করছে এবং ব্যবসার সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হচ্ছে।

Share
Written by
ড. মশিউর রহমান -

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
তথ্যপ্রযুক্তিপণ্য পরিচিতিপ্রযুক্তি বিষয়ক খবর

ইন্টেল বনাম আর্ম: পরবর্তী প্রজন্মের পিসি কোন প্রোসেসরে চলবে?

গত কয়েক বছরে কম্পিউটার প্রসেসর মার্কেটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। ইন্টেল প্রসেসর দীর্ঘদিন...

তথ্যপ্রযুক্তি

ইন্টারনেটের আস্থা সংকট: তথ্যের যুগে বিভ্রান্তি

ইন্টারনেট যখন প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল নব্বইয়ের দশকে, তখন আমাদের সবাইকে এক...

তথ্যপ্রযুক্তি

কোডিংয়ের গুরুত্ব: শিক্ষার্থী এবং পেশাগত উন্নয়নের জন্য ভবিষ্যতের সাফল্যের পথ

আজকের ডিজিটাল যুগে, কোডিং এমন একটি মৌলিক দক্ষতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা...

তথ্যপ্রযুক্তিনতুন প্রযুক্তি

হ্যাক্ অসম্ভব এমন ইন্টারনেট

কোনো অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার বা ভাইরাস স্ক্যান প্রোগ্রামিঙই একশো শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে...

তথ্যপ্রযুক্তি

কৃত্রিম কল্পনা

“ফিচার লার্নিং অ্যালগোরিদম্” বা “রিপ্রেসেন্টেশন্ লার্নিং অ্যালগোরিদম্” আসলে ইনপুট হিসাবে দেওয়া তথ্যসমূহ...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.