প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সাম্প্রতিক ওয়েবমেট্রিক্স র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১ম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২য় স্থানে অবস্থান করছে। এই র্যাঙ্কিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা কার্যক্রম, অনলাইন উপস্থিতি এবং ভার্চুয়াল কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। পিছিয়ে পড়া শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নয়, বরং সামগ্রিকভাবে গবেষণায় পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যার প্রতিফলন।
গবেষণার গুরুত্ব ও বর্তমান পরিস্থিতি:
বাংলাদেশের ভবিষ্যত উন্নয়নে গবেষণা অপরিহার্য। তরুণ প্রজন্মকে সমাজমুখী গবেষণায় যুক্ত করতে হবে, কারণ মানসম্পন্ন গবেষণাই একটি সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই গবেষণা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালিত হয় না। গবেষণায় পর্যাপ্ত উৎসাহ এবং উপযুক্ত পরিবেশের অভাব রয়েছে। অথচ, দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা যুবসমাজের শক্তিকে কাজে লাগানোর সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই এখনই সময়, গবেষণা ক্ষেত্রে সরকার ও বেসরকারি উৎস থেকে পর্যাপ্ত ফান্ড বরাদ্দ এবং উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার।
পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর করণীয়:
পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হলে নিন্মলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরি:
১. গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি
পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত ফান্ড বরাদ্দ করতে হবে। এ জন্য সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকেও সহযোগিতা আহ্বান করা প্রয়োজন।
২. উন্নত গবেষণা পরিবেশ সৃষ্টি:
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে আধুনিক সরঞ্জাম এবং তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং সমাজকল্যাণমুখী কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন উপস্থিতি ও প্রোফাইল উন্নয়ন:
বর্তমান যুগে যেকোনো ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের ভার্চুয়াল উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইন প্রোফাইল উন্নত করতে হবে, যাতে তাদের গবেষণা এবং গঠনমূলক কাজগুলো সারা বিশ্বে পৌঁছায়। মানসম্পন্ন গবেষণা, প্রকাশনা এবং অন্যান্য একাডেমিক কাজগুলো নিয়মিতভাবে অনলাইনে আপলোড করতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নেটওয়ার্কিং:
পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা স্থাপন করা জরুরি। এর মাধ্যমে তারা উন্নত গবেষণার কৌশল এবং আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা প্রকাশনা ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়াতে হবে।
৫. শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করার উদ্যোগ:
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অংশগ্রহণের জন্য যথাযথ উৎসাহ প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন স্কলারশিপ, ফেলোশিপ এবং পুরস্কার প্রবর্তন করা যেতে পারে, যাতে শিক্ষার্থীরা গবেষণার প্রতি আগ্রহী হয়।
৬. গুণগত মানের গবেষণার মূল্যায়ন ও প্রশংসা:
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে গবেষণার সাফল্যকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন এবং প্রশংসা করতে হবে। ভালো কাজের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী হতে অনুপ্রাণিত করবে।
অনলাইন ফুটপ্রিন্টের গুরুত্ব ও ওয়েবমেট্রিক্স র্যাঙ্কিং:
বর্তমান ডিজিটাল যুগে একটি প্রতিষ্ঠানের অনলাইন ফুটপ্রিন্ট বা ভার্চুয়াল উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েবমেট্রিক্স র্যাঙ্কিং মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন কার্যক্রম, তাদের গবেষণাপত্রের সংখ্যা, প্রভাবশালী প্রকাশনা, এবং ভার্চুয়াল উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। তাই শুধু গবেষণা করা নয়, সেগুলোকে যথাযথভাবে অনলাইনে আপলোড করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাদের কাজগুলো প্রকাশ করা, যা তাদের র্যাঙ্কিং উন্নত করতে সহায়ক হবে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণার উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা অপরিসীম। মানসম্মত গবেষণা, অনলাইন উপস্থিতি, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তরুণ প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুযোগ প্রদান করলে তারা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।
Leave a comment