তথ্যপ্রযুক্তি

হ্যাক্ অসম্ভব এমন ইন্টারনেট

Share
Share

প্রচলিত ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্যের প্রেরক এবং প্রাপক উভয়ই অবগত এমন একটি “কী” অর্থাৎ “অক্ষর সমষ্টি” ব্যবহার করে তথ্যের বিষয়বস্তুকে ওলোট-পালোট করে দিয়ে তথ্যকে এনক্রিপ্ট করা হয় যাতে উদ্দিষ্ট প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ সেই তথ্যের অর্থ বুঝতে না পারে। উদ্দিষ্ট প্রাপক প্রেরকের থেকে প্রাপ্ত এনক্রিপ্টেড্ তথ্যের পাঠোদ্ধার করার জন্য সেই একই “কী” ব্যবহার করে তথ্যটিকে ডিক্রিপ্ট করে। ফলে প্রচলিত ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের নিরাপত্তা একটি “কী” বানানোর পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল যার ভিৎ হলো সনাতনী কম্পিউটিং। কোনো তথ্যকে এনক্রিপ্ট করার জন্য ঠিক কোন্ “কী” বানানোর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা হ্যাকারদের পক্ষে বোঝা কঠিন হলেও বোঝা অসম্ভব নয় ! তাই তথ্য আদান-প্রদানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিজ্ঞানীরা এই তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াকে “কোয়ান্টাম” করার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা “কোয়ান্টাম ইন্টারনেট” কে বাস্তবে রূপায়িত করতে পারলেও প্রচলিত ইন্টারনেটকে আমরা যেভাবে দূর-দূরান্তে যোগাযোগ ও তথ্য দেওয়া-নেওয়ায় ব্যবহার করে থাকি সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে এই নতুন “কোয়ান্টাম ইন্টারনেট” প্রযুক্তি এখনও তার শৈশবের গন্ডি পেরোয়নি। কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগে নিরাপত্তা “কোয়ান্টাম কী ডিস্ট্রিবিউশন” নামক তথ্য আদান-প্রদান প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল যার ভিৎ হলো “কোয়ান্টাম কম্পিউটিং”। এক্ষেত্রে “কী” বানানোর জন্য কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না। যে কোনো পদ্ধতিতে “কী”-গুলিকে তৈরি করে সেগুলিকে কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের সকল সক্রিয় প্রেরক-প্রাপক যুগলের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউট বা বন্টন করা হয়। সেইজন্যই এই তথ্য আদান-প্রদান প্রক্রিয়ার নাম “কোয়ান্টাম কী ডিস্ট্রিবিউশন”। এক্ষেত্রে কোনো প্রেরক-প্রাপক যুগল প্রত্যেকবার তথ্য প্রদান বা আদানের সময়ে ভিন্ন “কী” লাভ করে এবং কোনো যুগলকেই অপর কোনো যুগলের “কী” সম্পর্কে অবগত করা হয় না।

প্রচলিত ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেমন বহু কম্পিউটার বা প্রোসেসার নিজেদের মধ্যে “বিট” বা “বাইনারী ডিজিট” হিসাবে তথ্য দেওয়া-নেওয়া করে; কোয়ান্টাম ইন্টারনেট অনেকগুলি কোয়ান্টাম কম্পিউটার বা কোয়ান্টাম প্রোসেসারকে সংযুক্ত করে সেগুলির মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান ঘটায়, তবে এক্ষেত্রে তথ্য গণনায় যে একক ব্যবহৃত হয় তাকে বলে “কিউবিট” বা “কোয়ান্টাম বিট”। কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ করার প্রক্রিয়ায় পদার্থবিদ্যার শাখা “কোয়ান্টাম মেকানিক্স”-র দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ব্যবহার করা হয় – “কোয়ান্টাম স্টেট” ও “কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট”। ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বা কোয়ান্টাম প্রোসেসারগুলি ও সেগুলিকে সংযোগকারী কোয়ান্টাম ইন্টারনেট একত্রে একটি কোয়ান্টাম তন্ত্রের মত ব্যবহার করে। “কোয়ান্টাম মেকানিক্স” বলে যে, কোনো কোয়ান্টাম তন্ত্রের কোনো প্যারামিটারকে পরিমাপ করতে গেলেই সেই কোয়ান্টাম তন্ত্রের সাম্যাবস্থায় ব্যাঘাত ঘটে। কোনো প্রেরক-প্রাপক যুগলের মধ্যে কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের সময়ে “কী” তৈরির কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না বলে কোনো অবাঞ্ছিত তৃতীয় পক্ষকে ঐ প্রেরক-প্রাপক যুগলের মধ্যে কি তথ্যের আদান-প্রদান হচ্ছে তা জানতে হলে তাকে ঐ প্রেরক-প্রাপক যুগলের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে যে “কী” ব্যবহৃত হচ্ছে সেটিকে জানতে হয়, আর “কী”-টিকে জানতে হলে “কী”-টিকে পরিমাপ করতে হয়। কিন্তু কোয়ান্টাম ইন্টারনেটে ব্যবহৃত হচ্ছে এমন “কী” পরিমাপ করতে গেলেই “কোয়ান্টাম মেকানিক্স”-র উপরোক্ত বক্তব্যানুযায়ী কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের সাম্যাবস্থায় ব্যাঘাত ঘটে ! এই ব্যাঘাত একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকলে অবাঞ্ছিত তৃতীয় পক্ষটি মোটেই “কী”-টিকে জেনে উঠতে পারে না এবং প্রেরক-প্রাপক যুগলের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান অব্যাহত থাকে; কিন্তু এই ব্যাঘাত নির্দিষ্ট সীমা ছাড়ালে প্রেরক-প্রাপক যুগলের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানই বন্ধ হয়ে যায় ! ফলে কোনো অবস্থাতেই কোনো অবাঞ্ছিত তৃতীয় পক্ষ জানতে পারে না যে প্রেরক-প্রাপক যুগলের মধ্যে ঠিক কি তথ্যের আদান-প্রদান ঘটছে ! অন্যভাবে বললে, কোয়ান্টাম ইন্টারনেটকে হ্যাক্ করা অসম্ভব!

Share
Written by
Diganta Paul

জন্ম: ১৯৮৯ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলায়। শিক্ষা: প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা হাওড়া জিলা স্কুলে। এরপর কলকাতার "সেইন্ট থমাস্ কলেজ অফ এঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি" কলেজ থেকে বৈদ্যুতিক কারিগরিবিদ্যা নিয়ে প্রযুক্তিতে স্নাতক (B.Tech. in Electrical Engineering)। পেশা: তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদার (IT Professional)। নেশা: বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা। এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞান প্রবন্ধ, বিজ্ঞান নিবন্ধ, কল্পবিজ্ঞান ভিত্তিক গল্প, কল্পবিজ্ঞান কবিতা, গাণিতিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান নাটক, ও বিজ্ঞান কবিতা লেখা। প্রসার ভারতীর একজন বিজ্ঞান-কথিকা লেখক ও শিল্পী। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি রৌপ্য পদক। প্রকাশিত বই: উদ্দীপনার খেলাঘর। যোগাযোগ: [email protected]

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org