সন্ধ্যা নামছে ঢাকার আকাশে। ভার্সিটির লাইব্রেরির এক কোণে বইয়ের পাতায় ডুবে আছে অর্ণব। কৌতূহলী চোখে সে খুঁজে ফিরছে একটি প্রশ্নের উত্তর—”এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কিছুর কি একটি মাত্র নিয়ম আছে?” প্রায়ই তার মনে উঁকি দেয় এমন ভাবনা। অর্ণবের এই ভাবনা কেবল তার একার নয়, বরং যুগে যুগে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মনেও এই প্রশ্নই জেগেছে—’সবকিছুর নিয়ম’ বা ‘Theory of Everything’ কি আদৌ সম্ভব?
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন থেকে স্টিফেন হকিং—সকলেই স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সর্বজনীন তত্ত্বের, যা ব্যাখ্যা করতে পারবে মহাকাশের গ্রহ-তারার গতি থেকে শুরু করে অতিক্ষুদ্র পরমাণুর আচরণ পর্যন্ত। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সফলভাবে ব্যাখ্যা করেছে মহাকর্ষকে, আবার কোয়ান্টাম মেকানিক্স ব্যাখ্যা করেছে অতিক্ষুদ্র কণার জগতকে। কিন্তু এই দুই জগতের মাঝে এখনও রয়ে গেছে বিশাল ব্যবধান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “একটি সর্বজনীন তত্ত্ব, যা মহাকর্ষ ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স উভয়কেই ব্যাখ্যা করতে পারবে, সেটি বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। তবে এর সন্ধান এখনও অধরা।”
সম্প্রতি, ‘স্ট্রিং থিওরি’ বা সুতাতত্ত্ব আলোচনায় এসেছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, সব কণার উৎসই হলো ছোট্ট কম্পমান সুতার মতো বস্তু। কিন্তু এই তত্ত্ব এখনও পরীক্ষাগারে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। আবার অপরদিকে ‘লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি’ নামের তত্ত্বটি মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলে, সময়-স্থান আসলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লুপ দিয়ে গঠিত। এটিও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়েই আটকে আছে।
“আমি বিশ্বাস করি, মানবজাতি একদিন অবশ্যই এমন একটি তত্ত্বের সন্ধান পাবে যা পুরো মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হবে,” বলছিলেন অর্ণব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। তার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীর মাঝেই রয়েছে এমন আশাবাদ।
এ বিষয়ে কিংবদন্তি পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো মহাবিশ্বের সবকিছুকে একত্রে ব্যাখ্যা করার একটি সহজ এবং সুন্দর নিয়ম খুঁজে বের করা।” তিনি এটিকে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হিসেবে দেখতেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নুসরাত জাহান মনে করেন, “এ ধরনের তত্ত্ব কেবল বিজ্ঞান নয়, দর্শনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের অস্তিত্বের অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।”
আজকের তরুণ বিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় হয়তো একদিন উন্মোচিত হবে মহাবিশ্বের সেই রহস্য। কিন্তু আপাতত, ‘সবকিছুর নিয়ম’ খুঁজে পাওয়ার আশায় বিজ্ঞান ও দর্শনের মেলবন্ধনে এগিয়ে চলেছে মানবজাতির এই অন্তহীন যাত্রা।
Leave a comment