শাহিনুজ্জামান শাহিন
ফেলো- এফ ডি এ, আমেরিকা
বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়ন অনার্সের শুরু থেকেই শুরু করা উচিত।
মাস্টার্স শেষ হবার পর যদি আপনি স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তাহলে ততদিনে আপনি অনেক পিছিয়ে যাবেন। তাই যারা অনার্স ১ম বা ২য় বর্ষে এসেই বিদেশে যাবার সিদ্ধান্ত স্থির করে ফেলেছেন তারা বরাবরই খুব ভালো অবস্থানে আছেন। আর যদি আপনি মাস্টার্স শেষ করে দেশে চাকুরীর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তারপর ভাবছেন বিদেশে যাবেন, তাহলে নিসন্ধেহে আপনি অনেক দেরী করে ফেলেছেন।
আমাদের চারপাশে অনেকেরই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থাকে কিন্তু পারিপার্শ্বিক প্রভাবের ফলে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনা বা কিছুটা প্রস্তুতি নিলেও তারা মাঝপথে বিভিন্ন কারণে হোঁচট খেয়ে থেমে যায়। যারা সত্যিই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাদেরকে আজ কিছু সাধারণ পরামর্শ দিবো। এখানে কে কোন বিষয়ে পড়ছেন বা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন এসব কিছুই আমলে নেয়া হয়নি।
প্রথম: নিজের গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করুন।
যেদিন আপনি ভাববেন যে আপনি দেশে পড়াশুনা শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিবেন, পিএইচডি করবেন, গবেষক হবেন সেদিন থেকে আপনার মধ্যে গবেষণা নিয়ে কিছু বেসিক চিন্তাভাবনা গ্রো করতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- আপনি কি নিয়ে গবেষণা করবেন? মনে রাখবেন আপনার আগ্রহের জায়গা আপনাকেই ঠিক করে নিতে হবে। আপনাকে ভাবতে হবে আপনার একাডেমিক পড়াশুনা থেকে কোন বিষয়টা আপনার ভালো লাগে, কোন বিষয় নিয়ে আপনি উচ্চতর গবেষণা করতে চান, কোন টপিকের উপর আপনি কিছু আবিস্কার করতে চান। কোন বন্ধু বা সিনিয়র ভাইকে দেখে গবেষণার ফিল্ড বা বিষয়বস্তু নির্ধারণ করবেন না। এই গবেষণার বিষয়টা এমন হতে হবে যা আপনাকে ভিতর থেকে উতসাহিত করবে আরও সামনে এগিয়ে যাবার জন্যে। মনে রাখবেন গবেষণা একটা সমুদ্র, যার শুরু আছে কিন্তু শেষটার দেখা পাওয়া দুস্কর। তাই আপনার ভিতর থেকে একটা তীব্র আগ্রহ তৈরি হতে হবে। নিজের আগ্রহের বিষয় নির্ধারণ করার পর আপনাকে একটা সুনির্দিষ্ট গবেষণা পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে হবে। যেমন ধরে নিলাম আপনি ভেবছেন যে ক্যন্সার নিয়ে গবেষণা করবেন। এখন প্রশ্ন আসবে ক্যন্সার কি নিয়ে গবেষণা করবেন? ক্যান্সার একটা জঠিল রোগ যার একটি নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। তাই এখন আপনাকে প্রচুর পড়তে হবে। আপনি যদি অনার্স ১ম বা ২য় বর্ষে আপনার আগ্রহের জায়গা ঠিক করতে পারেন তাহলে এরপর আপনি মাঝে মাঝে গুগল এর সাহায্য নিয়ে ক্যন্সার নিয়ে পড়াশুনা করবেন। প্রতিদিন না হোক প্রতি সপ্তাহে অন্তত অর্ধেক পৃষ্ঠার কোন সাম্প্রতিক লেখা বা গবেষণা প্রবন্ধ পড়ার চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে আপনি বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়ীকি – Science, Nature, Spinger, Elsevier এর ওয়েবসাইটে ডুকে কিছু কিছু প্রাসঙ্গিক আরটিকেল খুঁজে একটু আধটু পড়ার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও Science News এর ওয়েবসাইট থেকে আপনি বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিস্কারগুলো নিয়ে লেখা প্রবন্ধগুলো পড়তে পারেন। আর সর্বোপরি আপনার শিক্ষকরা যখন ক্লাশ নিবে তখন তাদের লেকচার থেকেও সাম্প্রতিক গবেষণার ধারণা পেতে পারেন। এভাবে চেষ্টা করে আপনি একটি খসড়া গবেষণা পরিকল্পনা আপনার মনে গেথে নিতে পারবেন। এরপর যখন বিদেশে আবেদন শুরু করবেন তখন আপনার এই গবেষণা পরিকল্পনা আপনাকে লিখিত আকারে উপস্থাপন করতে হতে পারে অথবা আবেদনের অন্যান্য অংশের সাথে উপস্থাপন করতে হতে পারে, যা মুলত আপনি কোন দেশে আবেদন করবেন তার উপর নির্ভর করবে। যেমন আপনি যদি আমেরিকা, কানাডা যেতে চান তাহলে আপনার Statement of Purpose (SOP) এ এই পরিকল্পনা সংযুক্ত করতে হবে। আর যদি আপনি চীন জাপান কোরিয়া- এসব দেশে সরকারী স্কলারশিপের জন্যে আবেদন করেন তাহলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ফরমেটে এই গবেষণা পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।
দ্বিতীয়: IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন।
দেশের বাইরে পা রাখতে গেলেই আপনাকে একটি ভিন্ন ভাষার সম্মুখীন হতে হবে, তা আপনি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা যেখানেই যান না কেন। তাই যেদিন বা যে মুহুরতে আপনি বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ভাববেন ঠিক তখনই আপনার উচিত হবে IELTS এর ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া। কিভাবে IELTS পরীক্ষা দিতে হবে, এর জন্যে কোচিং করতে হবে কিনা, কত টাকা খরচ হবে এসব নিয়ে একটা সম্যক ধারণা আপনার থাকতে হবে। আপনাকে এমন ভাবে IELTS পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে যেন বিদেশে আবেদন শুরু করার কমপক্ষে ১৫/২০ দিন আগে আপনার IELTS এর ফলাফল হাতে চলে আসে। আমি আবারো বলছি IELTS কে বাদ দিয়ে বিদেশে আসার কথা চিন্তাও করবেন না। এতে আপনার শুধু সময় নষ্ট হবে।
তৃতীয়: গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।
অনার্স শেষ বর্ষে বা মাস্টার্সে আপনি অবশ্যই থিসিস নেয়ার সুযোগ থাকলে বা কোন শিক্ষকের অধীনে অল্প বিস্তর কোন গবেষণা করার সুযোগ আসলে তাতে অংশ নিবেন। এতে করে গবেষণায় আপনার প্রাথমিক হাতেখড়ি হয়ে যাবে। এসব গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল দিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ (Research Article) লিখে শিক্ষকের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক ভালো কোন জার্নালে প্রকাশ করার চেষ্টা করবেন। এর বাইরে আপনার আগ্রহের বিষয়ের উপর কিছু Review Article লিখার চেষ্টা করবেন। এসব Article অবশ্যই কোন শিক্ষক বা সিনিয়র অভিজ্ঞ (যার পিএইচডি আছে) কারও অধীনে থেকে লিখবেন বা প্রকাশ করবেন। বিদেশে আবেদনের আগে এমন কিছু ভালো আর্টিকেল যদি আপনি প্রকাশ করতে পারেন তাহলে এগুলো আপনার পথকে অনেক বেশি সহজ করে দিবে, আপনি স্কলারশিপের প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থানকে উপরের দিকে নিয়ে যেতে পারবেন।
চতুর্থ: শিক্ষকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন।
আপনি যে বিভাগে পড়ছেন সেখানকার কিছু উদ্যোমী, তরুন, মেধাবী, ছাত্র-বান্ধব শিক্ষকের সাথে সুসম্পর্ক রাখুন। এইসব ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে যদি এমন কোন শিক্ষককে পান যিনি সম্প্রতি বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরেছে তাহলে সেই শিক্ষকের কাছ থেকে বিদেশে পড়াশুনা বিষয়ক পরামর্শ নিন, আলোচনা করুন, অনেক কিছু জানতে পারবেন। এমন শিক্ষকদের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে বিদেশে আবেদনের সময় আপনার জন্যে ২/৩ টি সুপারিশপত্র পেতে সহজ হবে। মনে রাখবেন বিদেশে আবেদনের জন্যে এসব সুপারিশপত্র অবশ্যই লাগবে। সবসময় চেষ্টা করবেন পিএইচডি আছে এমন শিক্ষক বা সুপারভাইজর এর কাছ থেকে সুপারিশপত্র নিতে।
পঞ্চম: প্রয়োজনীয় একাডেমিক ডকুমেন্ট প্রস্তুত করুন।
অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনও মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বাংলায় প্রদান করে। যদি আপনার প্রতিষ্ঠান মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বাংলায় দেয় তাহলে সেগুলো অবশই ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করে নিতে হবে। কিভাবে এগুলো অফিসিয়ালি ইংরেজীতে অনুবাদ করা যায় এই বিষয়টা জেনে নিবেন। আর একটি বিষয় চেষ্টা করবেন মূল সনদপত্র তুলে নিতে, যদিও প্রভিশনাল সার্টিফিকেট দিয়ে আপনি আবেদনের কাজ করতে পারবেন। আপনি যদি আমেরিকায় যেতে চান তাহলে আপনার অনার্স ও মাস্টার্সের ফলাফল World Education Services (WES) থেকে মূল্যায়ন করে নিতে হবে। গুগল করলেই WES সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যদি আপনি যথাসময়ে অনুসরণ করেন তাহলে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নের পথে আপনার আর কোন প্রতিবন্ধকতাই থাকবেনা। একদিকে আপনার অনার্স শেষ হবে আর পাশাপাশি এই পরামর্শগুলো মেনে যদি আগাতে পারেন তাহলে অনার্স এর পর পরই আপনি বিদেশে আবেদনের জন্যে যোগ্য হয়ে উঠবেন এবং অতি অল্প সময়ে আপনি সফলভাবে বিদেশে গিয়ে উচ্চতর গবেষণা শুরু করে দিতে পারবেন।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–
Leave a comment