সাক্ষাৎকার

স্বয়ংক্রিয় যুক্তিবিদ্যা এর গবেষক সলিমুল চৌধুরী

Share
Share

অটোমেটেড রিজনিং বা স্বয়ংক্রিয় যুক্তিবিদ্যা এর সাথে আমরা পরিচিত নাও থাকতে পারি। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা এইবার এই বিষয়ের গবেষক ড. সলিমুল চৌধুরী এর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:

প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই

সিলেট শহরে জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা। এর পর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (IUT), গাজীপুর থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করে কানাডায় চলে আসা উচ্চতর শিক্ষার জন্য। ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে একটি কানাডিয়ান স্টার্টআপে যোগ দেই। সেখানে ৫ বছর চাকরি করার পর, ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা তেই পিএইচডি শুরু করি। পিএইচডিতে গবেষণার বিষয় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক ধ্রুপদী শাখা—অটোমেটেড রিজনিং বা স্বয়ংক্রিয় যুক্তিবিদ্যা। পিএইচডি সম্পন্ন করার পর, কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি (CMU) এর কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে একই বিষয়ে গবেষণার কাজ করছি।
পেশাগত বৈজ্ঞানিক গবেষণার বাইরে, ভালবাসি কবিতা, রাজনীতির তর্ক, দর্শন চর্চা আর আমার ৮ বছরের মেয়ের সাথে সময় কাটাতে।

আপনার গবেষনার বিষয় কি?

আমার গবেষণার কাজ নিয়ে কথা বলার আগে, কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি মৌলিক ও গভীর তাত্ত্বিক প্রশ্ন হলো: ‘P বনাম NP’ সমস্যা। সহজ করে বললে, এই প্রশ্নটি অনুসন্ধান করে যে, সহজ এবং কঠিন কম্পিউটেশনাল সমস্যাগুলোর মধ্যে কোন স্পষ্ট ‘শ্রেণীবিভাগ’ আছে কি না। গত পাঁচ দশকের তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার পরেও, এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনও আমাদের জানা নেই। তবে, এই প্রশ্নটি আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে কিছু সমস্যা সহজে সমাধানযোগ্য, আর কিছু সমস্যার সমাধান অত্যন্ত কঠিন।
উদাহরণস্বরূপ, ডেটা সাজানো (sorting), তথ্য খোঁজা (searching), এবং সবচেয়ে ছোট পথ খোঁজা (shortest-path finding) এর মতো সমস্যাগুলোকে সহজ (easy) বলা হয়। কারণ, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকরী অ্যালগরিদম আমাদের জানা আছে, যা ব্যবহার করে প্রায়োগিকভাবে প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যেই সমাধান পাওয়া সম্ভব। অপরদিকে, সফটওয়্যার যাচাই (software verification), স্বয়ংক্রিয় পরিকল্পনা (automated planning), এবং গাণিতিক উপপাদ্য প্রমাণ (mathematical theorem proving) এর মতো সমস্যাগুলো এখনও কঠিন (hard) কম্পিউটেশনাল সমস্যার অন্তর্ভুক্ত। কারণ, এই ধরনের সমস্যার দ্রুত সমাধান করার মতো কোনো কার্যকরী অ্যালগরিদম আমাদের জানা নেই।
‘অটোমেটেড রিজনিং’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা এসব কঠিন সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। আমার গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো অটোমেটেড রিজনিংয়ের অ্যালগরিদমগুলিকে উন্নত করা এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে কঠিন সমস্যাগুলির সমাধানে। এই ক্ষেত্রে, আমি যুক্তি-ভিত্তিক অ্যালগরিদম এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য কাজ করছি, যা কঠিন সমস্যাগুলিকে যৌক্তিক ভাষায় রূপান্তরিত (encode) করার মাধ্যমে তাদের সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
আমার পোস্টডক্টরাল গবেষণায়, আমি কিছু অটোমেটেড রিজনিং এর একটি অ্যালগরিদম উন্নত করেছি, যা বেশ গাণিতিক উপপাদ্য প্রমাণে সহায়ক হয়েছে । এর মধ্যে একটি উপপাদ্য আমদের অ্যালগরিদম প্রমাণ করতে পেরেছে, যা প্রায় তিন দশক ধরে প্রমাণের অপেক্ষায় ছিল। আমার পিএইচডির শেষ সেমিস্টারে আমি আমাজন AWS-এ অ্যাপ্লাইড সায়েন্টিস্ট হিসেবে একটি ইন্টার্নশিপ করেছিলাম । সেখানে, আমি কোম্পানিটির ‘Reasoning as a Service’ প্রকল্পে কাজ করেছি, যা ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্মে অটোমেটেড রিজনিং কে কিভাবে সাধারন সার্ভিস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তার ওপর মনোনিবেশ করছিল। আমার ইন্টার্নশিপের কাজটি একটি শীর্ষ অটোমেটেড রিজনিং সম্মেলনে সেরা প্রবন্ধ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
আমার পিএইচডির সময়কালে একই বিষয়ে আমার উদ্ভাবিত অ্যালগরিদমিক প্রযুক্তিগুলি ক্রিপ্টোগ্রাফি ও সফটওয়ার ভেরিফিকেশনের কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে । আমার পি এইচ ডি গবেষনার কিছু কাজ, কম্পিউটার সায়েন্সের কয়েকটি শীর্ষ সম্মেলনে প্রকাশিত হয়েছিল । এছাড়াও আমার ডেভোলাপ করা কিছু অটোমেটেড রিজনিং সিস্টেম, অটোমেটেড রিজনিংয়ের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় (International SAT Competitions) বেশ কয়েকটি স্বীকৃতি অর্জন করেছিল ।

আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে কিংবা করবে?

আমার গবেষণা নানা ভাবে আমাদের উপকারে আসছে। আমি যে অটোমেটেড রিজনিং অ্যালগরিদমগুলি উন্নত করেছি, তা জটিল গাণিতিক এবং কম্পিউটেশনাল সমস্যার সমাধানে সাহায্য করছে, যার ফলে নতুন সমাধান বের করা যাচ্ছে এবং গাণিতিক জ্ঞানের সীমানা সম্প্রসারিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু গাণিতিক উপপাদ্য প্রমাণে সহায়ক অ্যালগরিদম তৈরি হয়েছে, যা অনেকদিন ধরে প্রমাণের অপেক্ষায় ছিল। তাছাড়া, আমি ক্লাউডে অটোমেটেড রিজনিং সার্ভিসের মতো নতুন প্রযুক্তি উন্নয়ন করেছি, যা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং সিস্টেম বিশ্লেষণের মতো নানা ক্ষেত্রে কাজে আসছে। আমার কাজ শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের এবং গবেষকদের নতুন ধারণা ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাচ্ছে। এইভাবে, আমার গবেষণা নানা ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে এবং প্রযুক্তির উন্নতির জন্য সহায়ক হচ্ছে।

গবেষনা কাজের বিশেষ কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?

গবেষণার পথে হতাশা অবিচ্ছেদ্য, আর আমার যাত্রাও এর ব্যতিক্রম নয়। পিএইচডির শুরুর দিকে, আমি যে অ্যালগরিদম তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম, মাসের পর মাস তাতে তেমন কোনো ফলাফল পাচ্ছিলাম না। হতাশা আমাকে ঘিরে ধরছিল, কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। হঠাৎ করে একদিন কিছু নতুন অন্তর্দৃষ্টির সন্ধান পেলাম। সেই মুহূর্তগুলো, যখন আমার মনের কোণে জ্বলতে থাকা আলো হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, সেই অন্তর্দৃষ্টিগুলো কার্যকরী অ্যালগরিদম উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আমার পথের দিশারি হয়ে উঠল। অবশেষে নতুন অ্যালগরিদম থেকে আশাজনক ফলাফল পেলাম।
নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রাপ্তি থেকে, নতুন অ্যালগরিদম উদ্ভাবন এবং সেখান থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়ার যে যাত্রা, সেটি এক অনির্বচনীয় আনন্দের। সেই সময়গুলো আমার স্মৃতিতে এখনও দীপ্ত হয়ে রয়েছে।
এই অভিজ্ঞতা থেকে আমার উপলব্ধি, বিজ্ঞানের অনুসন্ধানে অধ্যবসায় কতটা অপরিহার্য, এবং কীভাবে এই অধ্যবসায় একসময় আমাদের পুরস্কৃত করে। বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী নোবেল বিজয়ী Subrahmanyan Chandrasekhar-এর একটি উক্তি এই বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছে:
“You may want to climb a mountain. You don’t climb Everest; your sights are not so ambitious. But when you do reach the top of the mountain, you see the valley below; and that gives you a sense of contentment. One can perceive science that way.”
এই অনুধাবনের আনন্দেই আমি দেখতে পাই যে, প্রত্যেকটি চড়াই-উতরাই, প্রত্যেকটি অসমাপ্ত প্রচেষ্টা, একদিন আমাদের বিজয়ের পথে এক একটি ধাপ হয়ে দাঁড়ায়।

একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?

একজন বিজ্ঞানী হিসেবে কিছু গুণ থাকা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত, অন্বেষণমূলক মনোভাব থাকতে হবে—নতুন বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ ও অভ্যস্ততা থাকা উচিত। পরিশ্রমী মনোভাবও প্রয়োজন, কারণ গবেষণার জন্য মনোযোগ এবং কঠোর পরিশ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থিতিশীলতা অপরিহার্য, কারণ গবেষণার পথে নানা চ্যালেঞ্জ ও বাধা আসবেই। সঠিক প্রশ্ন করার দক্ষতা থাকা জরুরি, যাতে নতুন ধারণা ও সমাধান খুঁজে বের করা যায়। নতুন সমস্যার সমাধানে প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও উদ্যম বজায় রাখা প্রয়োজন। আর, নিজের আবিষ্কারগুলো সাদাসিধে ভাষায় শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করার ক্ষমতা থাকা উচিত, যাতে সবাই সহজেই বুঝতে পারে।

বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?

বিজ্ঞান ও গবেষণার প্রতি আপনার আগ্রহ একটি অমূল্য রত্নের মতো। শুরুতে হয়তো পথের কাঁটা বা বাধা আসবে, কিন্তু মনের জোর ও কঠোর পরিশ্রমে আপনি সেগুলো জয় করতে পারবেন। প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে, নতুন দিগন্ত অনুসন্ধানে প্রস্তুত থাকুন। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে উন্নতির নতুন পথ খুলবে। বিজ্ঞানী হতে হলে প্রয়োজন ধৈর্য, নিষ্ঠা, এবং গভীর অনুসন্ধানী মনোভাব। গবেষণার পথ কখনোই সহজ নয়, তবে সঠিক দিশা ও প্রেরণার মাধ্যমে আপনি আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন। আপনার অবদান বিশ্বে নতুন আলো নিয়ে আসবে, উদ্ভাবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। নিজের স্বপ্নকে পথপ্রদর্শক বানিয়ে এগিয়ে যান, এবং আপনার প্রয়াসে অবিচল থাকুন।

আপনার যোগাযোগের তথ্য:

solimul.chowdhury @ জিমেইল.com

আপনার লিংকডইন সাইটের ওয়েবএড্রেস

https://www.linkedin.com/in/md-solimul-chowdhury-phd-b9740544

আপনার ওয়েবসাইট, গবেষনাকাজের লিংক ইত্যাদি

https://solimul.github.io

আমরা ড. সলিমুল চৌধুরী এর উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি।

Share
Written by
নিউজডেস্ক -

আমরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাতকার প্রকাশ করি। আপনারা কোন লেখা প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করুন: [email protected], [email protected]

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
সাক্ষাৎকার

আমাদের গর্ব আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ মুস্তাফা

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি ড. মুহাম্মদ মুস্তাফা হোসেন...

চিকিৎসা বিদ্যাসাক্ষাৎকার

এপিডেমিওলজি গবেষক আমেরিকা প্রবাসী ডা. রজত দাশগুপ্ত

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি রজত দাশগুপ্ত এর। তিনি...

GenZসাক্ষাৎকার

আমেরিকা প্রবাসী Genz ডাটা সায়েন্টিস্ট – আহমেদ ওমর সেলিম আদনান

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি আহমেদ ওমর সেলিম আদনান...

সাক্ষাৎকার

পানি গবেষক মোঃ রিপাজ উদ্দিন

পানি আমাদের সবার জীবনে অতপ্রতভাবে জড়িত। তবে পানি নিয়েও কি গবেষনা হতে...

GenZসাক্ষাৎকার

নবীন গবেষক শামফিন হুসাইন কাশফি

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি শামফিন হুসাইন কাশফি এর।...

Three Columns Layout

বাংলাদেশি গবেষকদের কমিউনিটি বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org), যা বাংলা ভাষায় গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য ও সাক্ষাৎকার শেয়ার করে নতুনদের গবেষণায় প্রেরণা দেয়।

যোগাযোগ

[email protected]

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.

Copyright © biggani.org