স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

উদ্দীপনার খেলাঘর

Share
Share

                                                      অধ্যায় – ১ (আপেক্ষিকতা)

 

একের মাঝে লভিতে সবে,

সবের মাঝে করি একের সন্ধান।

 

জীবন এক, জিজ্ঞাসা অনেক। একই সত্যকে গর্ভে ধরে অন্তঃসত্ত্বা অজস্র ঘটনা (ফ্যাক্ট), আর সেই সত্য হলো – ঘটনা সর্বদাই আপেক্ষিক। দুধে যতই চিনি মেশাই না কেন, বিড়াল সেই মিষ্টতা আস্বাদনে অক্ষম। এমন অনেক রঙ আছে যা তোমার-আমার অদেখাই রয়ে গেল কিন্তু মৌমাছি তাদের দেখেছে। একই রচনা কারও অসাধারণ বোধ হয় আবার কারও কাছে তা ভীষণ অপরিণত। প্রবাহী ( তরল বা গ্যাস)  যেমন স্বাকারহীন, ঘটনারও তেমন কোন নিজস্ব পরম (অ্যাব্সলিউট) রূপ নেই কারণ পর্যবেক্ষকের (অবসারভার)  উপলব্ধিই হলো ঘটনার  স্বরূপ যা পর্যবেক্ষক বদলে গেলে বা একই পর্যবেক্ষকের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যেতে পারে – তা সেই পর্যবেক্ষক কোন জীব হোক্  বা যন্ত্র। চোখ কালো চশমায় ঢাকলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনেও সন্ধ্যা নেমে আসে। উপলব্ধি হলো সেই চশমা যার মধ্য দিয়ে জগৎ এক আপাত রূপে প্রতিভাত হয়।

এখন বলাই বাহুল্য যে,পর্যবেক্ষকের মধ্যে যদি উপলব্ধি জন্ম না নেয়,তার কাছে ঘটনাও অস্তিত্বহীন। আমাদের চোখ কেবল ৩৮০ বা ৪০০ ন্যানোমিটার থেকে ৭০০ বা ৭৮০ ন্যানোমিটার সীমার মধ্যে থাকা কোন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (ওয়েভলেঙ্থ)  তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের প্রতি সংবেদনশীল কিংবা আমরা কেবল ২০-২০০০০ হার্ৎজ কম্পাঙ্কের (ফ্রিকোয়েন্সি)  শব্দই শুনতে সক্ষম। এখন ভেবে দেখ,যন্ত্রের সাহায্য না নিলে উপরোক্ত সীমার বর্হিভূত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বা কম্পাঙ্কের যথাক্রমে আলো বা শব্দের উপস্থিতি আমাদের বোধের অতীত – এরা নিতান্তই আমাদের কাছে অস্তিত্বহীন।

বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ

 

 

বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ

 

উপলব্ধি (পারসেপ্শন্) : আলোচনার শুরু থেকেই “উপলব্ধি” (পারসেপ্শন্)  শব্দটা বেশ কয়েকবার ব্যবহার করেছি। সময় এসেছে “উপলব্ধি” বস্তুত কি তা বোঝার। উদ্দীপনা (স্টিমুলাস)  আভ্যন্তরীণ (ইন্টারনাল) হোক কিংবা বাহ্যিক (এক্সটারনাল), তা পর্যবেক্ষকের মধ্যে সর্বদাই কিছু পরিবর্তন ঘটায়।  কোন পর্যবেক্ষকের মধ্যে হওয়া পরিবর্তন (চেঞ্জ)  যখন সেই পর্যবেক্ষক পরিমাপে (মেসার)  সক্ষম হয়, সেই পরিমাপকে (মেসারমেন্ট) বলতে পারি ঐ “পর্যবেক্ষকের উপলব্ধি”। বিষয়টা উদাহরণের মাধ্যমে সহজ করে বোঝাই।  চিন্তা করে দেখ যে, আমরা কোন বস্তু (অবজেক্ট)  দেখতে পাই কিভাবে।  ৩৮০ বা ৪০০ ন্যানোমিটার থেকে ৭০০ বা ৭৮০ ন্যানোমিটার সীমার মধ্যে থাকা যে কোন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (ওয়েভলেঙ্থ)  তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ কোন উৎস (সোর্স)  থেকে বস্তুটির উপর পতিত হয় ও সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের রেটিনায় পড়ে ও রেটিনার তাৎক্ষণিক অবস্থার (স্টেট)  পরিবর্তন ঘটায়। এই পরিবর্তনটি মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্নায়ুকোষকে উদ্দীপিত করার জন্য যথেষ্ট। ঐ উদ্দীপিত স্নায়ুকোষের প্লাজমা পর্দার স্থির তাড়িতিক বিভব-বৃদ্ধি (ইনক্রিস্ অফ ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক পোটেন্শিয়াল)  লাগোয়া সাইন্যাপ্স-কে (দুটি নিউরোন বা স্নায়ুকোষের সংযোগস্থল নিউরাল কানেক্শন বা স্নায়ু-সংযোগ বা “সাইন্যাপ্স” নামে পরিচিত) সক্রিয় করে তোলে ও সেখানে নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণ ঘটায় যা সাইন্যাপ্স-টির লাগোয়া আরেকটি স্নায়ুকোষের প্লাজমা পর্দার স্থির তাড়িতিক বিভব-বৃদ্ধি  ঘটায় অর্থাৎ স্নায়ুকোষটিকে উদ্দীপিত করে। কতগুলি নিউরোন বা স্নায়ুকোষের একটি ক্রমে (অর্ডার)  এভাবে উদ্দীপিত হওয়াই উপলব্ধির (ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করা বা কিছু স্মরণ করা বা নতুন কিছু ভাবা)  পরিভাষা। মস্তিষ্কের মধ্যে ঐ নির্দিষ্ট কিছু স্নায়ুকোষের উদ্দীপিত হওয়ার অর্থই হলো, মস্তিষ্ক চোখের রেটিনার অবস্থা-পরিবর্তনটি পরিমাপ করতে পেরেছে এবং বস্তুটির আমাদের কাছে দৃশ্যমান হওয়া (যাকে আমরা এক প্রকার “উপলব্ধি” বলতে পারি)  মস্তিষ্কের সেই পরিমাপেরই নামান্তর।

                                 স্নায়ুকোষ

 

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, কতগুলি স্নায়ুকোষের উদ্দীপনার ক্রম যদি নিতান্তই ছন্দবদ্ধ (রিদ্মিক) হয়, তবে তা “ব্রেইন ওয়েভ” বা “মস্তিষ্ক তরঙ্গ” নামে পরিচিত।

               বিভিন্ন প্রকার মস্তিষ্ক-তরঙ্গ

 

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের “ব্রেইন ওয়েভ” বা “মস্তিষ্ক তরঙ্গ”-র প্রাচুর্য্যের ভিত্তিতে মনুষ্য-মস্তিষ্কের প্রধান প্রধান কতগুলি অবস্থা রয়েছে যারা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পক্ষে বেশ জটিল। আমি যতটা সম্ভব সঠিকভাবে ও সহজ করে সেগুলি বোঝানোর চেষ্টা করব দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে (এই প্রবন্ধের পরবর্তী অধ্যায়গুলো পরের পেজ বা পাতাগুলিতে একে একে তুলে ধরা হলো) –

Share
Written by
Diganta Paul -

জন্ম: ১৯৮৯ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলায়। শিক্ষা: প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা হাওড়া জিলা স্কুলে। এরপর কলকাতার "সেইন্ট থমাস্ কলেজ অফ এঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি" কলেজ থেকে বৈদ্যুতিক কারিগরিবিদ্যা নিয়ে প্রযুক্তিতে স্নাতক (B.Tech. in Electrical Engineering)। পেশা: তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদার (IT Professional)। নেশা: বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা। এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞান প্রবন্ধ, বিজ্ঞান নিবন্ধ, কল্পবিজ্ঞান ভিত্তিক গল্প, কল্পবিজ্ঞান কবিতা, গাণিতিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান নাটক, ও বিজ্ঞান কবিতা লেখা। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি রৌপ্য পদক। প্রকাশিত বই: উদ্দীপনার খেলাঘর। যোগাযোগ: [email protected]

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচিকিৎসা বিদ্যাসাক্ষাৎকারস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

আমাদের গর্ব ড. ফারিয়াহ মাহযাবীন

কৃতি বিজ্ঞানীদের সিরিজে আমি কথা বলেছি ড. ফারিয়াহ মাহযাবীন এর সাথে। তিনি...

GenZপরিবেশ ও পৃথিবীসাক্ষাৎকারস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

ই-বর্জ্য এর গবেষক হৃদয় রায়

ই-বর্জ এর গবেষক হৃদয় রায়। বাংলাদেশের মধ্যে ই-বর্জ নিয়ে কাজ করছে এমন...

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

অন্ধকারে ভয়

কোন ব্যক্তি বাস্তবে যতই সাহসী হোন না কেন, গভীর রাতে অন্ধকার জনশূন্য...

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

পাখার শব্দে নাম যে পাখির

ঈগল, বাজ ইত্যাদি পাখি মানুষকে এরোপ্লেন আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা জোগালেও ফড়িং, মৌমাছি ইত্যাদি...

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

মাছরাঙার মাছ ধরা

একটি মাছরাঙা প্রতিদিন নিজের ওজনের প্রায় সম পরিমাণ ছোটো মাছ শিকার করে...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.