H-index: এটি গবেষকের প্রকাশনা সংখ্যা এবং সাইটেশনের প্রভাব একসাথে মূল্যায়ন করে। একজন গবেষকের H-index হবে n, যদি তার nটি আর্টিকেলে অন্তত nটি সাইটেশন থাকে।Eigenfactor Score: এটি একটি জার্নালের প্রভাব মাপার সূচক, যা সাইটেশন সংখ্যা এবং সাইটেশন উৎসের গুণমানকে গুরুত্ব দেয়।SNIP: এটি সাইটেশন প্রভাব মাপার সূচক, যা একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের গড় সাইটেশন সংখ্যার সাথে তুলনা করে। প্রবন্ধটি বিস্তারিত পড়ুন:
H-index!
আর্টিকেল সংখ্যা এবং তার সাইটেশন সংখ্যা একসাথে মূল্যায়ন করার একটি জনপ্রিয় মাপকাঠি হলো H-index। ২০০৫ সালে UC San Diego-এর আর্জেন্টাইন-মার্কিন পদার্থবিদ Jorge E. Hirsch প্রথম এটি প্রস্তাব করেন। এজন্য, একে কখনও কখনও Hirsch index বা Hirsch number হিসেবেও অভিহিত করা হয়। একজন গবেষকের H-index n হবে, যদি তার nটি আর্টিকেল থাকে এবং প্রতিটি আর্টিকেলে অন্তত nটি সাইটেশন থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো গবেষকের পাঁচটি আর্টিকেল থাকে এবং তাদের সাইটেশন যথাক্রমে ৯, ৭, ৬, ২, এবং ১ হয়, তবে তার H-index হবে ৩। কারণ তিনটি আর্টিকেলে অন্তত তিনটি সাইটেশন রয়েছে, তবে চারটি প্রবন্ধে ৪ বা তার বেশি citation নেই। এই সূচকের আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক: যদি কোনো গবেষকের ৫টি আর্টিকেলে সাইটেশন যথাক্রমে ১০, ৮, ৫, ৪, এবং ৩ হয়, তাহলে তার H-index হবে ৪, কারণ চতুর্থ আর্টিকেলে ৪টি citation রয়েছে এবং পঞ্চম আর্টিকেলে ৩টি। অন্যদিকে, যদি সাইটেশনগুলো হয় ২৫, ৮, ৫, ৩, এবং ৩, তবে H-index হবে ৩, কারণ তৃতীয় আর্টিকেলে ৫টি সাইটেশন হলেও চতুর্থটি মাত্র ৩টি সাইটেশন। H-index এর বিশেষত্ব হলো এটি গবেষণার পরিমাণ এবং গবেষণার প্রভাব (Impact) দুইটিকেই সমানভাবে মূল্যায়ন করে। তবে, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি শুধু সাইটেশন সংখ্যার উপর নির্ভর করে, কিন্তু সাইটেশনের মান বা গবেষণার গভীরতা (depth) পরিমাপ করে না। তাছাড়া, H-index মূলত অভিজ্ঞ গবেষকদের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর, কারণ তারা সময়ের সাথে বেশি সাইটেশন অর্জন করতে পারেন, কিন্তু নবীন গবেষকদের ক্ষেত্রে এটি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারে না। H-index নির্ধারণের জন্য সাধারণত Web of Science, Scopus, এবং Google Scholar ডাটাবেস ব্যবহার করা হয়। এই ডাটাবেসগুলির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়, কারণ বিভিন্ন ডাটাবেসে প্রকাশিত আর্টিকেলের coverage এবং সাইটেশন-এর হিসাবের পদ্ধতি আলাদা।
Eigenfactor Score!
জার্নালের গুরুত্ব পরিমাপের আরেকটি আধুনিক পদ্ধতি হল Eigenfactor স্কোর। এই সূচকটি ২০০৭ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের Jevin West এবং Carl Bergstrom উদ্ভাবন করেন। Eigenfactor স্কোর হিসাব করতে প্রথমে একটি জার্নালের প্রতিটি আর্টিকেলের সাইটেশন সংখ্যা জানা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি জার্নালের পাঁচটি আর্টিকেলে সাইটেশনের সংখ্যা যথাক্রমে ২০, ১৫, ১০, ৫, এবং ২ হয়, তবে এগুলো বড় থেকে ছোট মান অনুযায়ী সাজানো হবে: ২০, ১৫, ১০, ৫, ২। এরপর, Eigenfactor স্কোর হিসাব করার সময়, উচ্চ র্যাঙ্কের জার্নাল থেকে প্রাপ্ত সাইটেশন এর মূল্য বেশি দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যদি কোনো আর্টিকেল একটি উচ্চ র্যাঙ্কের জার্নাল থেকে সাইটেশন পায়, তবে তার Eigenfactor স্কোর বৃদ্ধি পাবে। এই স্কোর শুধুমাত্র সাইটেশন সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, বরং সাইটেশন এর উৎস বা origin এরও গুরুত্ব রয়েছে। বিনামূল্যে eigenfactor. org ওয়েবসাইটে এই স্কোর হিসাব করা যায়। তবে, জার্নালের আকারও স্কোরে প্রভাব ফেলে; কারণ যদি একটি জার্নাল প্রতি বছরে অনেক আর্টিকেল প্রকাশ করে, তবে তার Eigenfactor স্কোর দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
snip!
SNIP ((Source Normalized Impact per Paper) মেট্রিক জার্নালের সাইটেশন impact পরিমাপ করে। তবে, এটি শুধুমাত্র সাইটেশন সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, বরং একটি নির্দিষ্ট subject field-এর গড় সাইটেশন সংখ্যার সাথে তুলনা করেও মূল্যায়ন করে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন subject field-এর মধ্যে সরাসরি তুলনা করা সম্ভব হয়। SNIP জার্নালের প্রতিটি আর্টিকেলের গড় সাইটেশন সংখ্যা এবং সেই subject field-এর সাইটেশন সম্ভাবনার অনুপাত হিসেব করে। ২০১০ সালে Henk F. Moed এই মেট্রিকটি প্রবর্তন করেন, যার মূল উদ্দেশ্য গবেষণার প্রকৃত প্রভাব সহজভাবে বোঝা। SNIP শুধুমাত্র সাইটেশন সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, বরং সংশ্লিষ্ট field-এর বৈশিষ্ট্যও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। একটি journal-এর SNIP = (citation count per paper)/(citation potential within its field) সূত্র অনুসারে হিসাব করা হয়। ২০১২ সালে SNIP পরিমাপের পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, যার ফলে এখন গড় SNIP মান ১-এর সমান। এর মানে হল যে, যেসব জার্নালের SNIP ১-এর বেশি, তারা তাদের বিষয়ভিত্তিক গড়ের তুলনায় ভালো। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি field-এর গড় সাইটেশন সংখ্যা ৪০ হয় এবং অন্যটি ১০ হয়, তবে প্রথম field-এর সাইটেশন সম্ভাবনা দ্বিতীয়টির তুলনায় ৪ গুণ বেশি হবে। Life sciences-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে সাইটেশন সংখ্যা সাধারণত বেশি থাকে, অন্যদিকে mathematics বা social sciences-এর ক্ষেত্রে এটি কম থাকে।
Sjr!
SJR (SCImago Journal Rank) সূচকটি ২০০৭ সালে SCImago Lab উদ্ভাবন করে, যা Impact Factor-এর একটি বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। SJR শুধুমাত্র সাইটেশন সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, বরং সাইটেশন এর গুণগত মান এবং উৎসকেও গুরুত্ব দেয়। এর মানে হলো, যদি কোনো জার্নাল একটি উচ্চ-প্রভাবশালী জার্নাল থেকে সাইটেশন পায়, তবে সেই সাইটেশন এর মূল্য বেশি হবে। এই সূচকটি জার্নালের গুণগত মান নির্ধারণে সহায়তা করে, কারণ এটি সাইটেশন এর গুণ এবং উৎসের গুরুত্ব নির্দিষ্টভাবে পরিমাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো জার্নালের তিনটি আর্টিকেল থাকে এবং প্রতিটির সাইটেশন সংখ্যা যথাক্রমে ১০, ১৫ এবং ২৫ হয়, তবে SJR ক্যালকুলেশন করার সময় সাইটেশন উৎসের গুণগত গুরুত্ব (weight) যোগ করা হয়, যেমন ০.৮।
Altmetric Score!
Altmetric Score মূলত গবেষণায় একাডেমিক প্রভাবের পাশাপাশি তার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে মূল্যায়ন করে। ২০১০ সালে Altmetric LLP প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১১ সালে ইয়ন আডি (Euan Adie) এর নেতৃত্বে এই সূচকটির যাত্রা শুরু হয়। এই স্কোরটি সামাজিক মিডিয়া, ব্লগ, সংবাদ এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে গবেষণা আলোচনার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো গবেষণা আর্টিকেল সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়, তবে তার Altmetric Score বেশি হবে। Altmetric বিভিন্ন অনলাইন সোর্স এবং সাইটে ‘mentions’ (লিঙ্ক বা লিখিত রেফারেন্স) ট্র্যাক করে, যা গবেষণার প্রভাবকে তুলে ধরে। এই সোর্সগুলির মধ্যে রয়েছে মূলধারা মিডিয়া, পাবলিক পলিসি ডকুমেন্ট, সামাজিক এবং একাডেমিক নেটওয়ার্ক, পোস্ট-পাবলিকেশন পিয়ার রিভিউ ফোরাম, এবং সম্প্রতি উইকিপিডিয়া ও ওপেন সিলেবাস প্রজেক্ট।
i10-Index!
গবেষকদের Impact ও Contribution মূল্যায়ন করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সূচকের মধ্যে i10-ইন্ডেক্স অন্যতম। ২০০৬ সালে Google Scholar এই সূচকটি চালু করে, যা একটি সহজ এবং কার্যকর মেট্রিক হিসেবে পরিচিত। i10-ইন্ডেক্স মূলত গুগল স্কলার প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন গবেষকের ২০টি আর্টিকেল থাকে এবং এর মধ্যে ১৫টি আর্টিকেলের সাইটেশন সংখ্যা ১০টির বেশি হয়, আর ৫টি আর্টিকেলের সাইটেশন সংখ্যা ১০টির কম থাকে, তবে তার i10-ইন্ডেক্স হবে ১৫। কারণ, তার ১৫টি আর্টিকেলে অন্তত ১০টি সাইটেশন রয়েছে।
বিজ্ঞানী ডট অর্গ এর পক্ষ থেকে আমরা আজিজুল হককে তার অনুপ্রেরণামূলক ও গভীরভাবে চিন্তনশীল আলোচনা জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তার বক্তব্য তরুণ গবেষকদের জন্য একটি শক্তিশালী উদাহরণ, যা তাদের বিজ্ঞান, সৃজনশীলতা এবং অধ্যবসায়ের প্রতি নতুন দৃষ্টিকোণ তৈরি করবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাদের বৈজ্ঞানিক ক্যারিয়ারের পথে সঠিক পথনির্দেশনা প্রদান করবে এবং তাদের ভবিষ্যত গবেষণার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
Leave a comment