উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ

স্কলারশিপে বিদেশে উচ্চশিক্ষা: মেয়েদের জন্য বাঁধা নয়, সম্ভাবনার দুয়ার !

Share
Share

লেখক: প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন
ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশের মেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যেতে দ্বিধাবোধ করাটা একটি গভীর সামাজিক বাস্তবতা, যা নানা কারণ থেকে উদ্ভূত। অনেক পরিবার ও সমাজে মেয়েদের বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে অনেক প্রতিভাবান মেয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এই সমস্যার আসল চিত্র তুলে ধরতে গেলে কয়েকটি মূল দিক বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন:

১. নিরাপত্তার ব্যাপারে আতঙ্ক এবং বিদেশি পরিবেশের চ্যালেঞ্জ:

বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা হলো, বিদেশি পরিবেশে একা বসবাস করা অত্যন্ত কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে একা থাকা, রাতের বেলা কাজ করা বা বাইরে বেরোনো নিয়ে তাদের এবং তাদের পরিবারের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার চিন্তা মাথায় কাজ করে। অপরিচিত দেশের অপরিচিত নিয়ম-কানুন, বিশেষ করে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে অনেকেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। এছাড়া, হোস্টেল বা একা থাকার অভিজ্ঞতা অনেকেরই নেই, যা নতুন পরিবেশে নিজেকে স্থাপন করার ক্ষেত্রে আরো জটিলতা তৈরি করে।

২. সমাজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাংস্কৃতিক বাধা:

বাংলাদেশে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো অনেক অভিভাবকের জন্য সামাজিক রীতিনীতি এবং কুসংস্কারের সাথে সম্পর্কিত। অনেক অভিভাবক মনে করেন, মেয়েরা বিদেশে গিয়ে “পশ্চিমা প্রভাব” দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে বা সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির বাইরে গিয়ে স্বাধীন জীবনযাপন শুরু করতে পারে, যা তাদেরকে “খারাপ প্রভাবিত” করতে পারে বলে তারা ভাবেন। এই ধরনের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি মেয়েদের শিক্ষাগত উন্নয়ন এবং স্বপ্ন পূরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে বিবাহের প্রসঙ্গ চলে আসে, এবং মেয়েদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো “অপ্রয়োজনীয়” বলে মনে করা হয়।

৩. আর্থিক বাধা এবং কর্মসংস্থানের বাস্তবতা:

অনেক অভিভাবক মনে করেন যে মেয়েদের জন্য এত অর্থ ব্যয় করা প্রয়োজন নেই, কারণ তারা ভবিষ্যতে পারিবারিক জীবনে আবদ্ধ থাকবে এবং তাদের কর্মসংস্থান বা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ কম থাকবে। অনেক পরিবার মেয়েদের বিদেশে পড়াশোনার খরচ বহন করতে সক্ষম হলেও, তারা মনে করেন যে মেয়েরা উচ্চশিক্ষা শেষে বিদেশে থাকবেন না এবং দেশে ফিরে এসে এমন কিছু করবেন না যা তাদের বিনিয়োগকে সার্থক করবে। এর ফলে, মেধাবী মেয়েরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে গেকে আসলেতো কোন খরচ নেই।

৪. পরিবারের চাপ এবং মানসিক বাধা

বাংলাদেশে বেশিরভাগ মেয়েরা পরিবারের বিশেষত পিতা-মাতার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেন এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি মেয়েদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছার উপর বড় প্রভাব ফেলে। অনেক মেয়ের পরিবারে মা-বাবা মনে করেন, বিদেশে পাঠানো তাদের দায়িত্বের বাইরে বা এতে মেয়ের প্রতি তাদের নিয়ন্ত্রণ কমে যাবে। ফলস্বরূপ, মেধাবী মেয়েরা অনেক সময় নিজেদের প্রতিভাকে পূর্ণরূপে বিকশিত করার সুযোগ পান না।

৫. স্কলারশিপ সম্পর্কে তথ্যের অভাব এবং অপর্যাপ্ত উৎসাহ:

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মেয়ের মধ্যে বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে তথ্যের ঘাটতি থাকে। স্কলারশিপ এবং গবেষণার সুযোগের বিষয়ে সচেতনতা অনেক কম এবং অনেক ক্ষেত্রে উৎসাহের অভাবও পরিলক্ষিত হয়। মেয়েরা এবং তাদের অভিভাবকরা মনে করেন যে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পেতে কঠিন হতে পারে এবং এতে সময় ও শ্রমের বিনিয়োগের পরও সফল না হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সমাধানের পথে কিছু উদ্যোগ:

সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং মেয়েদের উচ্চশিক্ষার বিষয়ে উৎসাহিত করতে হলে কয়েকটি উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ:

⊕ পরিবারের সচেতনতা বৃদ্ধি:

মেয়েদের বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে এমন কর্মশালা বা সেমিনার আয়োজন করা দরকার। তাদের মধ্যে বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ এবং মেয়েদের দক্ষতা উন্নয়নের গুরুত্ব বোঝানো দরকার।

⊕নিরাপত্তার বিষয়ে সহায়তা:

উচ্চশিক্ষার জন্য যারা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক তাদের জন্য নিরাপত্তা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও গাইডলাইন প্রদান করা প্রয়োজন। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে মেন্টরশিপ এবং সমর্থন নিশ্চিত করা যেতে পারে।

⊕ স্কলারশিপের সুযোগ এবং তথ্য সরবরাহ:

বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম এবং শিক্ষাবৃত্তির বিষয়ে মেয়েদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষত প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং গবেষণার ক্ষেত্রে মেয়েদের উৎসাহিত করতে কিছু বিশেষ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে।

⊕ সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা:

শিক্ষিত এবং সচেতন সমাজ গঠনে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে মেয়েদের সাফল্যের গল্পগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে মেয়েদের মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যেতে পারে।

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মেয়েদের জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা তাদের জীবনে শুধু নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নিরাপত্তা এবং সামাজিক বাধা অতিক্রম করে মেয়েরা যখন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে, তখন সমাজও তাদের সাফল্যের অংশীদার হবে।

বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত—–https://www.facebook.com/share/p/12F1SYarms6/?mibextid=ZbWKwL

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ইমেইল নিউজলেটার, টেলিগ্রাম, টুইটার X, WhatsApp এবং ফেসবুক -এ সাবস্ক্রাইব করে নিন।

Copyright 2024 biggani.org