ছোট্ট লি ঝাও’র সকাল শুরু হয় প্রিয় কার্টুন দেখে। এরপর দুধ, বইয়ের ব্যাগ আর স্কুলে দৌড়—সবই তার প্রতিদিনের অংশ। কিন্তু এবার তার রুটিনে যুক্ত হচ্ছে নতুন একটি বিষয়—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI। সে শিখবে কিভাবে রোবট চিন্তা করে, কিভাবে মোবাইল অ্যাপে “বুদ্ধি” কাজ করে, এবং এই জ্ঞান কীভাবে তাকে ভবিষ্যতের উদ্ভাবক হতে সাহায্য করবে।
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে চালু হচ্ছে AI শিক্ষা। প্রতি শিক্ষার্থীকে বছরে অন্তত ৮ ঘণ্টা AI শেখানো হবে। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বয়সভেদে কনটেন্ট সাজানো হবে—ছোটদের জন্য থাকবে মজার গেম, গল্প ও সহজবোধ্য উপকরণ, আর বড়দের জন্য থাকবে অ্যালগরিদম, ডেটা বিশ্লেষণ ও মেশিন লার্নিংয়ের প্রাথমিক ধারণা।
কেন এই উদ্যোগ?
চীনের শিক্ষামন্ত্রী হুয়াই জিনপেং বলেন, “AI এমন এক প্রযুক্তি যা ভবিষ্যতের সমাজকে গঠন করবে। তাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এর জন্য প্রস্তুত করতে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
চীন সরকার ইতোমধ্যে একটি National AI Education White Paper প্রস্তুতের ঘোষণা দিয়েছে, যা এই শিক্ষানীতির কাঠামো নির্ধারণ করবে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পাঠ্যবই তৈরির গাইডলাইন দেবে।
বিশ্বজুড়েই চলছে AI শিক্ষার প্রবণতা। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে AI অন্তর্ভুক্ত হয়েছে STEM কারিকুলামে। ইতালিতেও শুরু হয়েছে AI শিক্ষার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় দেশটির নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
বিশিষ্ট প্রযুক্তি বিশ্লেষক লি হং বলেন, “একটা সময় ছিল যখন কোডিং উচ্চশ্রেণির দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হত। এখন AI হচ্ছে নতুন সাক্ষরতা।”
চীনের এক অভিভাবক, ওয়েই লান বলেন, “শুরুতে ভয় লাগছিল, আমার ছয় বছরের ছেলেকে AI শেখানো কি সম্ভব? কিন্তু এখন দেখি সে খেলতে খেলতেই শিখছে। ও বলে—‘আমি আমার রোবটকে চিন্তা করতে শিখাচ্ছি!’”
তবে কিছু শিক্ষাবিদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, শিশুদের ওপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়, বরং তাদের মানসিক বিকাশের দিকটিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখা উচিত।
বাংলাদেশের জন্য বার্তা
চীনের এই সিদ্ধান্ত আমাদেরও ভাবতে বাধ্য করে—আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কোন পথে এগিয়ে নিচ্ছি? AI এখন আর কল্পবিজ্ঞান নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময় এসেছে, আমাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তিশিক্ষার পথ তৈরি করার।
ড. মাশিউর রহমান, একজন প্রযুক্তি ও শিক্ষা বিশ্লেষক বলেন, “যে দেশ যত আগে AI শিক্ষা শুরু করবে, ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তার হাতেই থাকবে। বাংলাদেশ যদি এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়, তবে আমাদের শিশুরাও হতে পারে আগামী দিনের উদ্ভাবক।”
উপসংহার
লি ঝাও আজ শিখছে কীভাবে একটি স্মার্ট ক্যামেরা কাজ করে। দশ বছর পর, হয়তো সে নিজেই তৈরি করবে এমন কোনো প্রযুক্তি যা বদলে দেবে পুরো পৃথিবীকে। চীনের এই উদ্যোগ শুধু শিক্ষাব্যবস্থার নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির বার্তা।
প্রশ্ন হলো, আমাদের শিশুরা কি শুধু মোবাইলে গেম খেলবে, নাকি একদিন তারাই তৈরি করবে নতুন নতুন প্রযুক্তি? সিদ্ধান্ত আমাদের।
Leave a comment