আজ থেকে কয়েক বছর পরের কথা। এক সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে সায়ন্তন অফিস থেকে ফিরলেন। দরজায় ঢুকতেই তিনি বললেন, “আজ একটু হালকা কিছু খেতে ইচ্ছা করছে।” সেই মুহূর্তেই ঘরের কোণে রাখা স্মার্ট স্পিকার তার কথা বুঝে নিয়ে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অ্যাপের সঙ্গে যোগাযোগ করল। অ্যাপটি জানাল, “আজ তোমার ব্লাড সুগার একটু বেশি, তাই স্যুপ আর ভেজিটেবল খাওয়া ভালো হবে।” পরক্ষণেই রান্নাঘরের রোবট কুক সেই তথ্য পেয়ে রান্না শুরু করল—একবারও মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই।
এই চিত্রটি হয়তো আজকের বাস্তব নয়, কিন্তু একদম অদূর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। কারণ, যন্ত্রগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ শিখে ফেলছে। আর এই যুগান্তকারী পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে Google-এর নতুন এজেন্টিক প্রটোকল: Agent2Agent (A2A)।
Agent2Agent (A2A) কী?
Google সম্প্রতি উন্মোচন করেছে তাদের এজেন্টিক কমিউনিকেশনের নতুন প্রটোকল Agent2Agent বা A2A। এর মূল লক্ষ্য হলো—বিভিন্ন AI এজেন্ট যেন একে অপরের সঙ্গে অর্থপূর্ণভাবে কথা বলতে পারে, ঠিক যেমন মানুষ করে।
Google Cloud-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রাও সুরাপানেনি বলেন,
“প্রতিটি এজেন্টের থাকে আলাদা দক্ষতা—কেউ ডেটা বোঝে, কেউ সিদ্ধান্ত নেয়, কেউ ব্যবহারকারী অভ্যাসে পারদর্শী। কিন্তু একজন ব্যবহারকারী যদি একাধিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, তাহলে আলাদা করে প্রতিটিকে পরিচালনা করাটা ক্লান্তিকর। আমরা চাই এজেন্টগুলো একে অপরের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলুক।”
এই চিন্তা থেকেই তৈরি হয়েছে A2A—একটি ওপেন সোর্স প্রটোকল যা ইতিমধ্যেই ৫০টিরও বেশি সংস্থার সহায়তায় গঠিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে Salesforce, SAP, Atlassian, MongoDB, LangChain ইত্যাদি।
কীভাবে কাজ করে এই প্রটোকল?
Agent2Agent মূলত দুই ধরণের এজেন্টের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ তৈরি করে—ক্লায়েন্ট এজেন্ট এবং রিমোট এজেন্ট।
- Capability Discovery: JSON ফরম্যাটে এজেন্ট তার ক্ষমতা প্রকাশ করে।
- Task Lifecycle Management: একটি নির্দিষ্ট কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে।
- Collaboration Messaging: কাজের সময় তথ্য, নির্দেশনা বা ফলাফল আদানপ্রদান করে।
- User Experience Negotiation: কোন ফরম্যাটে তথ্য উপস্থাপিত হবে, তা নির্ধারণ করে।
রাও বলেন,
“আমরা এটিকে সম্পূর্ণ ওপেন রেখেছি যেন সম্প্রদায় এটি নিয়ে কাজ করতে পারে। এটা ঠিক যেমন HTTP বা JSON আমাদের প্রযুক্তির ভিত্তি হয়েছে।”
এজেন্টদের একসাথে কাজ করাটা এত জরুরি কেন?
আজকের AI জগৎ বহু কোম্পানি ও মডেলের সংমিশ্রণে গড়ে উঠছে। কেউ বানাচ্ছে মেইল ম্যানেজ করার এজেন্ট, কেউ বা ক্যালেন্ডার বোঝে এমন বট।
এই ভিন্ন এজেন্টদের মধ্যে যদি যোগাযোগ না হয়, তাহলে এই অসংলগ্নতা ভবিষ্যতের AI ইকোসিস্টেমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
তরুণ সফটওয়্যার ডেভেলপার তামান্না আফরোজ বলেন,
“আগে API নিয়ে যুদ্ধ হত, এখন হচ্ছে এজেন্টদের ভাষা নিয়ে। Google-এর A2A যদি ঠিকমতো দাঁড়ায়, এটা প্রযুক্তির ইতিহাসে নতুন ভাষার সূচনা করতে পারে।”
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রটোকলগুলো কারা?
A2A ছাড়াও বাজারে রয়েছে—
- Anthropic-এর Model Context Protocol (MCP)
- Cisco, LangChain ও LlamaIndex-এর AGNTCY
- Microsoft-এর AutoGen
Google চায় এগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকুক। A2A এমনভাবে তৈরি হয়েছে যাতে অন্য প্রটোকলের সঙ্গে একইসাথে কাজ করতেও পারে।
রাও বলেন,
“MCP কাজ করে LLM-এর টুল ও ডেটার সাথে। A2A কাজ করে আরও ওপরে—যেখানে এজেন্ট ও অ্যাপ্লিকেশন একে অপরকে বুঝে।”
ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে A2A। যদিও বড় বড় সংস্থা যুক্ত হয়েছে, এটি এখনো স্ট্যান্ডার্ড হয়ে ওঠেনি।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার যদি A2A গৃহীত হয়, তাহলে একটিই প্রোটোকল পুরো এজেন্ট বিশ্বকে যুক্ত করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়াৎ ইসলাম বলেন,
“Agent2Agent পড়ে মনে হয়—এআই শুধু বুদ্ধিমান হবে না, একে অপরের বন্ধু হতে পারবে। মানুষ হতে হলে তো সেটাই দরকার।”
উপসংহার
যেমনটা TCP/IP এক সময় বদলে দিয়েছিল ইন্টারনেটের পথচলা, তেমনি Agent2Agent হয়তো হবে সেই ‘ভাষা’ যা এআই দুনিয়ায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
এবার যন্ত্ররা শুধু কাজ করবে না, তারা কথা বলবে। এবং এটাই—একটি নতুন যুগের সূচনা।
আপনার মতামত জানান biggani.org-এ। যন্ত্রের ভাষায় লেখা এই নতুন অধ্যায়ে আপনিও একজন পাঠক হিসেবে যুক্ত হোন।
Leave a comment