অতিথি লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে “রিসার্চ পেপার না থাকলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া সম্ভব নয়”। এর একটি বড় কারণ হলো অনেক ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সার বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট প্রায়ই বলে বেড়ান যে রিসার্চ পেপার ছাড়া স্কলারশিপ পাওয়া যায় না বা পেপার না থাকলে বিদেশে যাওয়া যাবে না। এই ধরনের কথা শুনে অনেক শিক্ষার্থী বিভ্রান্ত হয়ে যায়। কিন্তু আসলেই কি তাই?
বাস্তবতা হলো বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মাস্টার্স প্রোগ্রামে অ্যাপ্লিকেশনের জন্য রিসার্চ পেপার থাকা বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি অনেক সময় PhD বা MS leading PhD প্রোগ্রামেও রিসার্চ পেপার ছাড়া স্কলারশিপ পাওয়া যায়। আমার পরিচিত অনেকেই আছেন, যাদের একটি পেপারও ছিল না, অথচ এখন তারা বিদেশে এসে একাধিক রিসার্চ পেপারে first author। কেউ কেউ আবার টপ ৫% র্যাংকড জার্নালেও পেপার প্রকাশ করেছে। রিসার্চ পেপার থাকলে অবশ্যই ভালো তবে যদি না থাকে, তাহলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
আসলে রিসার্চ শেখা মানে শুধু একাডেমিক পেপার পড়া বা লেখা না। রিসার্চ শেখা মানে হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট সমস্যা চিনতে পারা, সেই সমস্যার পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করা, ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে শেখা এবং ধাপে ধাপে একটা valid outcome তৈরি করা। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটা শেখার আগে সবচেয়ে জরুরি বিষয়টি হলো নিজের সাবজেক্টের বেসিক কনসেপ্ট ভালোভাবে বোঝা। আপনি যেই বিষয়ে পড়ছেন, সেই বিষয়ের মৌলিক ধারণা যদি পরিষ্কার না থাকে, তাহলে গবেষণায় সফল হওয়া খুব কঠিন। পাশাপাশি আপনার CGPA যেন গ্রহণযোগ্য মানের থাকে, সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে কারণ স্কলারশিপের প্রতিযোগিতায় CGPA অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার যদি লক্ষ্য থাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা, তাহলে আপনি যে দেশেই যেতে চান না কেন IELTS বা TOEFL এর প্রয়োজন হবে। তাই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি IELTS/TOEFL/GRE-এর ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন এবং একটি ভালো স্কোর করার চেষ্টা করুন। একইসাথে চেষ্টা করুন একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ (Python বা R) শেখার। আজকের গবেষণায় প্রোগ্রামিং অত্যন্ত দরকারি।
তাছাড়া, SOP (Statement of Purpose) এবং Personal Statement লেখার কৌশল শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই লেখাগুলোতেই আপনার আগ্রহ, লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকে। আবেদনের আগে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে কীভাবে Supervisor বা Professor-কে ইমেইল লিখতে হয়। প্রফেশনাল ইমেইলের পাশাপাশি একটি standard CV তৈরির চেষ্টাও করুন।
সুযোগ থাকলে বিভিন্ন Extra-curricular activities যেমন অলিম্পিয়াড, সায়েন্স ফেস্ট, বিতর্ক, সামাজিক বা স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন। এসব অভিজ্ঞতা আপনার প্রোফাইলকে আলাদা করবে এবং SOP-তেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো networking বাড়ানো। যারা ইতোমধ্যেই বিদেশে পড়ছেন বা কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা, তাদের অভিজ্ঞতা শোনা ও শেয়ার করা আপনাকে অনেক দিক থেকেই এগিয়ে রাখবে। অনেক সময় দেখা যায় কোনো Professor তার পরিচিতদের কাছ থেকে তার ল্যাবে নতুন শিক্ষার্থী নেয়ার কথা বলেন। সেক্ষেত্রে যদি আপনার সঙ্গে কারো ভালো যোগাযোগ থাকে এবং তিনি আপনাকে যদি রেফার করেন, তাহলে আপনার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
রিসার্চ শেখার জন্য দরকার একটা প্রপার গাইডলাইন আর উপযুক্ত পরিবেশ, যেটা আপনি বিদেশে গেলে পাবেন। কারণ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুপারভাইজরদের সঙ্গে ছাত্রদের সম্পর্ক প্রফেশনাল। তারা আপনাকে গাইড করবেই কারণ সেটা তার কাজের অংশ। আপনার শেখা এবং সফলতা তারও সফলতা।
তাই যাদের এখনো কোনো রিসার্চ পেপার নাই, তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং এখনই সময় নিজেকে বিশ্বাস করার, শেখার মানসিকতা গড়ে তোলার, ধৈর্য ধরে সময়ের সঠিক ব্যবহার করার। এই গুণগুলো থাকলে আপনি ঠিকই একদিন সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন যেখানে যাওয়াটা এখন হয়তো স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে।
Leave a comment