—নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
একটি গল্প দিয়ে শুরু:
দুবাইয়ের একটি বিলাসবহুল হোটেলে এক সন্ধ্যায় রিয়াজ চৌধুরীর ৬৫তম জন্মদিনের আয়োজন। অতিথিরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিস্মিত, কারণ দেখতে তিনি চল্লিশের কোঠায়। হাসতে হাসতে বললেন, “২ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছি বছরে, শুধু বার্ধক্য ঠেকানোর জন্য।”
এ যেন এক নতুন যুগের সূচনা—যেখানে ‘স্বাস্থ্যকর জীবন’ শুধু ব্যায়াম বা সুষম খাদ্য নয়; এটি এখন লাখো-কোটি টাকার বাণিজ্য, যা বিশেষ করে ধনীদের জন্য একটি নতুন ধরনের বিলাসিতা ও প্রতিযোগিতা হয়ে উঠেছে।
বিলিয়নিয়ারদের প্রতিযোগিতা:
গবেষণা বলছে, বিশ্বের ১% ধনী ব্যক্তিদের বার্ধক্য প্রতিরোধে বার্ষিক গড় খরচ বর্তমানে ১.৫ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে (ব্লুমবার্গ রিপোর্ট, ২০২৪)। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা পিটার ডায়ামান্ডিসের নেতৃত্বে Fountain Life স্টার্টআপটি ‘longevity retreat’-এর মাধ্যমে সম্পদশালী ব্যক্তিদের আয়ু বাড়ানোর চিকিৎসা প্রদান করে। পিটার বলেন, “বর্তমানে ব্যয়বহুল হলেও আগামী ২০-২৫ বছরে এটি একটি সাধারণ চিকিৎসায় পরিণত হবে।”
অ্যামাজনের জেফ বেজোস Altos Labs-এ ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এই কোম্পানি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে কোষ পুনঃপ্রোগ্রামিং নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালাচ্ছে। কোষের পুনরায় যৌবন ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তারা সম্প্রতি মাউসের উপর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে, যেখানে কোষগুলোকে ‘young state’-এ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে (Nature, ২০২৩)।
সফটওয়্যার উদ্যোক্তা ব্রায়ান জনসন (Kernel ও Blueprint-এর প্রতিষ্ঠাতা) প্রতি বছর ২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছেন। তিনি দৈনিক ১০০টির বেশি পিল গ্রহণ, সপ্তাহে একবার MRI স্ক্যান এবং নিজের ছেলের প্লাজমা ট্রান্সফিউশন নিয়েছেন। ২০২৪ সালে তার শরীরের বয়স ৪৭ থেকে ৪২-এ নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী স্টার্টআপ বিপ্লব:
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্টার্টআপ Calico (গুগলের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান) বার্ধক্যের জেনেটিক ও জৈবিক ভিত্তি নিয়ে গবেষণা করছে। সিঙ্গাপুরের Gero স্টার্টআপ বায়োমার্কার ব্যবহার করে বার্ধক্যের গতি নির্ণয় ও মনিটরিং করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার Daewoong Pharmaceutical মাইটোকন্ড্রিয়াল স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে ওষুধ তৈরি করছে, যা বার্ধক্যজনিত অসুখ রোধ করতে পারে।
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অগ্রযাত্রা:
হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড সিনক্লেয়ার সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন যে, NAD+ মলিকিউলের বৃদ্ধির মাধ্যমে কোষের বার্ধক্য বিলম্বিত করা সম্ভব। তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে, NAD+ গ্রহণকারী মাউসের আয়ু প্রায় ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। একই ধরনের গবেষণায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিত করেছে, কোষ পুনঃপ্রোগ্রামিং প্রযুক্তি মানুষের জন্য প্রয়োগ করা সম্ভব হলে গড় আয়ু ২০ বছর বাড়ানো সম্ভব (Stanford Medicine, ২০২৪)।
জনগণের মতামত:
তবে এই বিশাল ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে জনমত বিভক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদা রহমান বলেন, “এ ধরনের প্রযুক্তি প্রথমে সবসময় ধনীদের জন্যই আসে। তবে এটি যদি সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে, তাহলে পুরো মানবজাতিই উপকৃত হবে।”
সাইফুল ইসলাম, একজন তরুণ ব্যাংকার মন্তব্য করেন, “আমি নিশ্চিত যদি হতাম যে এ পদ্ধতি আমার আয়ু ১০-২০ বছর বাড়িয়ে দেবে, তাহলে অবশ্যই বিনিয়োগ করতাম। তবে এটি নিশ্চিত নয় বলে আমার কাছে এখনো কেবল বিলাসিতা।”
ভবিষ্যতের হাতছানি:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দশকেই হয়তো এই ধরনের প্রযুক্তি হবে আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী। যেমনটি আগে ঘটেছে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে।
আপনার কাছে প্রশ্ন: যৌবন ধরে রাখতে ২ মিলিয়ন ডলার খরচ করবেন?
আপনার মতামত জানান: [email protected]। আরও তথ্যের জন্য: www.biggani.org
Leave a comment