[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনার সমন্ধে একটু বলুন।
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ জন্ম ঢাকার খিলগাঁও এলাকায়। বাবা-মার্ তিন সন্তানের সর্ব কনিষ্ঠ। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত খিলগাঁও গভর্নমেন্ট হাই স্কুল এ পড়াশোনা। তারপর জীবনের সেরা ছয় বছর কেটেছে সিলেট ক্যাডেট কলেজে। বাবার খুব শখ ছিল ছেলে আর্মি অফিসার হবে। কিন্তু ভাগ্যের ফের ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহের জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রী (ফার্স্ট ক্লাস উইথ অনার্স) অর্জন করা হয় গাজীপুরে অবস্থিত ওআইসি কর্তৃক পরিচালিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (IUT) থেকে ২০১১ সালে । এরপর মাস ছয়েক শিক্ষকতা করা হয় গ্রীন ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ এ । জিআরই (গ্রাজুয়েট রেকর্ডস এক্সামিনেশন) এর স্কোর থাকা সত্ত্বেও গবেষণার বিষয়, ভালো স্কলারশিপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ranking এর কথা মাথায় রেখে পাড়ি জমানো হয় UNSW অস্ট্রেলিয়া তে। চার বছর আট মাসের খাটুনির পর মেলে ডক্টর উপাধি। থিসিস জমা দেয়ার পরেই গবেষকের কাজ পাই মালয়েশিয়ার জাতীয় গবেষণাগার (MIMOS) এর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডিভিশন এ। কিছুদিন পরেই ডাক পাই ক্যানবেরা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (CIT) তে প্রভাষক হিসাবে যোগদানের জন্য। বর্তমানে CIT সেন্টার ফর সাইবার সিকিউরিটি এন্ড গেমস এ শিক্ষকতা ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও ক্যারিয়ার শুরুর দিকে একাডেমিয়া অনেক চ্যালেঞ্জিং তারপর ও অর্ধাঙ্গিনীকে নিয়ে ক্যানবেরার জীবন ভালোই উপভোগ করছি। শখ: গল্পের বই পড়া আর খেলনা গাড়ি জমানো![/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি পিএইচডি তে কি নিয়ে কাজ করেছেন?
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ পিএইচডি গবেষণা ছিল মেশিন লার্নিং ও সাইবার সিকিউরিটি কেন্দ্রিক। সংক্ষেপে বলতে গেলে, প্রচুর পরিমান ডাটা (বিগ ডাটা!) বিশ্লেষণ করতে অনেক সময় লাগে এবং কাজটি ব্যায়বহুল। আমার চেষ্টা ছিল নতুন কিছু এলগোরিদম বানানো যা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যায় এবং আমি নতুন কিছু এলগোরিদম (unsupervised লার্নিং based Summarization) প্রপোজ করেছি যেগুলো মোটামুটি ভালো কাজ করে। আমার প্রোপোসড এলগোরিদম গুলো সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য বেশ উপকারী আর এই কাজ গুলো ভালো কিছু জার্নাল, কনফারেন্স আর বই এর অধ্যায় হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য আমার গুগল স্কলার প্রোফাইল (Link) এ ঢুঁ মারতে পারেন। ভালো কিছু পাবলিকেশন এর জন্য UNSW তে মেলে হাই ইমপ্যাক্ট রিসার্চ পাবলিকেশন্স অ্যাওয়ার্ড। কনফারেন্স এ অংশগ্রহণ করার জন্য ভালো কিছু বৃত্তি ও পাই।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ বর্তমানে কি নিয়ে কাজ করছেন?
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ বর্তমানে শিক্ষকতার মূল বিষয় হলো সাইবার সিকিউরিটি এবং গেমস ডেভেলপমেন্ট। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রিসার্চ প্রজেক্ট এ কাজ করছি। আমাদের জীবন এখন ডাটা নির্ভর। এই ডাটার নিরাপত্তা দেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন এক ধরণের সমস্যা হলো, সিস্টেম এ ভুল ডাটা ইচ্ছে করে দেয়া হয়েছে কিনা তা ধরতে পারা। গবেষণার ভাষায় আমরা বলি False Data Injection Attack. হ্যাকাররা চেষ্টা করে যেকোনো সিস্টেম এ ভুল ডাটা অনুপ্রবেশ করিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতে। এরকম ঘটনা গত ২-৩ বছরে হাসপাতালে অনেক বেশি ঘটেছে কারণ healthcare ডাটা সব চেয়ে বেশি সেনসিটিভ এবং মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে এই ধরণের attack। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আমি ডিপ লার্নিং এবং ব্লকচেইন নিয়ে কিছু এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করছি। আশা করি খুব দ্রুত ভালো কোনো সমাধান পাবো।
সাইবার বায়ো-সিকিউরিটি নতুন আরেক ধরণের চ্যালেঞ্জ। অপরাধীদের ডিএনএ সিকোয়েন্স বদলে দিতে পারে এই ধরণের আক্রমণ। নতুন এই সমস্যা নিয়ে আমি কিছু কলাবরেটিভ কাজ করছি।
এছাড়া, Data Analytics নিয়ে একটি বই সম্পাদনার কাজ শেষের দিকে। বইটি জুলাই নাগাদ প্রকাশিত হবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক CRC প্রেস থেকে।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ সাইবার সিকিউরিটি এখন অনেক বড় একটি ইন্ডাস্ট্রি। এটি সমন্ধে একটু বলুন।
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ আমার মতে ইন্ডাস্ট্রি আর একাডেমিয়ার মাঝে অনেক ব্যাবধান রয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য যারা রুট লেভেল এ কাজ করে তাদের সাথে যারা গবেষণা ধর্মী কাজ করে তাদের চিন্তাধারার পার্থক্য আমি বেশ কিছু জায়গায় দেখেছি। সিসকো সার্টিফিকেশন এ যা শেখানো হয় আর রিসার্চ ডিগ্রী তে যে ধরণের কাজ হয় তার সাথে ব্যাবধান কমিয়ে আনাটা জরুরি। বাইরের দেশ গুলোতে সাইবার সিকিউরিটি ইতিমধ্যে স্ট্যান্ড-অ্যালোন ব্যাচেলর, মাস্টার্স ডিগ্রী হিসেবে পড়ানো হচ্ছে। নতুন এই কাররিকুলাম এর প্রাকটিক্যাল এবং থিওরিটিক্যাল নলেজ এর সামঞ্জস্য থাকতে হবে। ফলে, সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা আরো সহজ হবে বলে আমি মনে করি। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ তথ্য এখন আমাদের জীবনের সাথে মারাত্মক ভাবে যুক্ত হয়ে গেছে। আপনি এই পরিবর্তনকে কিভাবে দেখছেন?
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ আমি আশাবাদী মানুষ এবং এই পরিবর্তনের জন্য যে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে তা নিয়ে আমি গর্বিত। দিন যতই যাবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তথ্যের পরিমান বাড়তেই থাকবে। কিন্তু আমরা যেই বিষয়েই পড়াশুনা অথবা চাকরি করিনা কেন, তথ্য বিশ্লেষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে করতে পাড়ার স্কিল থাকা খুব জরুরি। ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী সবার উচিত এই দক্ষতা অর্জন করা, নাহলে অপরাধীদের ছড়ানো জালে আটক পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, আমাদের গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যেতে হবে।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সমন্ধে আমাদের একটু বলুন। কিভাবে এটি আমাদের সাহায্য করতে পারে?
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কম্পিউটার বিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। সহজ করে বলতে গেলে, আমাদের জীবন এখন ইন্টারনেট ভিত্তিক আর এইজন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। AI -আর ভালো, খারাপ দুই দিক এ রয়েছে। যেমন, গুগল অথবা ফেইসবুক এ আপনি কিছু সার্চ করলে পরবর্তীতে আপনার হোমপেইজ/ব্রাউজারে ওই জিনিস এর অনেক ধরণের রেকমেন্ডেশন আসতে থাকে। স্বাস্থসেবার জন্য এটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ফ্যাশন আইটেম এর জন্য এটি অর্থনৈতিক ভাবে ঝামেলাপূর্ণ। অনেক সময় আপনি কিছু কিনতে না চাইলেও, মনের অজান্তে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বসেন!
আমাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে (ইন্টারনেট অফ এভরিথিং) এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভূমিকা অপরিসীম এবং প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন ব্যবহার দেখছি। বিশেষ করে স্বাস্থসেবার জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার বেশ ভালো সমাধান।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ বর্তমানে আপনি Taylor & Francis Group এ কাজ করছেন। কি ধরনের কাজ করছেন?
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ জার্নাল পেপার এর মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেশ কয়েকজন অ্যাসোসিয়েট এডিটর দরকার হয় একজন এডিটর-ইন-চিফ এর অধীনে কাজ করার। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ কমপিউটারস এন্ড অ্যাপ্লিকেশনস এর একজন অ্যাসোসিয়েট এডিটর (Link) হিসাবে আমি সাইবার সিকিউরিটি আর ডাটা মাইনিং বিষয়ের পেপারগুলো সম্পাদনার কাজ করি। এছাড়া, আমি কেমব্রিজ স্কলার্স পাবলিশিং এর সাইবার সিকিউরিটি এডিটোরিয়াল অ্যাডভাইসারি বোর্ড মেম্বার (Link) হিসেবে কাজ করছি। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করতে কেমন লাগছে?
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ অস্ট্রেলিয়াতে শিক্ষকদের ছাত্র/ছাত্রীদের কাছে জবাবদিহিতার প্রচলন রয়েছে। এর জন্য নিজেকে একই সাথে ছাত্র আর শিক্ষকের ভূমিকায় দেখতে হয়। প্রতিনিয়ত লেকচার কনটেন্ট আপডেট করা আর স্টেট-অফ-টি-আর্ট টেকনোলজি পড়ানোর কাজটি চ্যালেঞ্জিং হলেও শিক্ষক হিসেবে পরিতৃপ্তির।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ নিজের একটি Data Analytics গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার ইচ্ছা এবং multi-disciplinary টীম গঠন করা যাতে অনেক বেশি মানুষের কাছে গবেষণার ফলাফল পৌঁছে দেয়া যায়। বেশিরভাগ সময় রিসার্চ ফান্ডিং এর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তাই ইচ্ছে নিজেকে পলিসি মেকার হিসেবে দেখা। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রেস্টিজিয়াস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজ (Link) থেকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি পলিসিতে মাস্টার্স শুরু করার প্ল্যান আগামী বছর থেকে। গবেষণা ও পলিসি মেকিং এর সমন্বয়ে জনগণের সেবা করতে পারাটাই আপাতত মূল ইচ্ছা। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ বিজ্ঞানী.অর্গের তরুন পাঠক/পাঠিকারা যারা আপনার মতন বিজ্ঞানী হতে চায় তাদের জন্য কোন পরামর্শ আছে আপনার?
ড. মহিউদ্দিন আহমেদঃ বেশি কিছু বলার নেই, আমি সবসময় নিজেকেই বলি : Never Give Up: Work Hard & Stay Humble![/box]
[divider style=”solid” top=”20″ bottom=”20″]
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন।
[mc4wp_form id=”3448″]
Leave a comment