কিছুদিন আগে অস্ট্রেলীয় গণিতবিদ ডঃ ড্যানিয়েল ম্যানসফিল্ড (Dr Daniel Mansfield ) ৩,৭০০ বছর পুরনো একটি ব্যাবিলনীয় মাটির তৈরী কাঠামো যাতে বিভিন্ন অংকের মতন ট্যাবলেট বা স্লেট নিয়ে গবেষনা করছিলেন। সেই স্লেটে লিপিবদ্ধ কোডের মর্মোদ্ধার করতে সক্ষম হোন। তিনি আবিষ্কার করলেন যে, গ্রীক গণিতবিদদের আগে এক সহস্রাব্দেরও বেশি সময় আগে উন্নত ত্রিকোণমিতির জ্ঞানের অস্তিত্ব ছিল। এই আবিষ্কারটি গণিতের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করছে।
ছবি: ডঃ ড্যানিয়েল ম্যানসফিল্ড (ইন্টারনেট থেকে সংগ্রীহিত, https://www.unsw.edu.au/news/2021/08/daniel-mansfield-uncovers-world-s-oldest-known-example-of-applie)
২০১৭ সালে, নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের (UNSW) ডঃ ড্যানিয়েল ম্যানসফিল্ড এবং তাঁর দল প্লিম্পটন ৩২২ নামের একটি স্লেট বিশ্লেষণ করেন। এই ট্যাবলেটটি বিশ শতকের প্রথম দিকে দক্ষিণ ইরাকে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এতে চারটি কলাম এবং ১৫টি সারিতে সাজানো একগুচ্ছ সংখ্যা রয়েছে, যা অনেকটা অংকের সংখ্যার মতন।
ডঃ ম্যানসফিল্ড এবং তাঁর সহকর্মী ডঃ নরম্যান ওয়াইল্ডবার্গার এই সংখ্যাগুলি মর্মোদ্ধার করে দেখেন যে এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ত্রিকোণমিতিক টেবিল। গ্রীক ত্রিকোণমিতি যেখানে কোণ এবং বৃত্তের উপর নির্ভর করে, ব্যাবিলনীয় ত্রিকোণমিতি সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলির অনুপাত এবং একটি ৬০-ভিত্তিক (ষাটভিত্তিক) সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতি ব্যাবিলনীয়দের অত্যন্ত নির্ভুলভাবে জটিল গণনা করতে সক্ষম করেছিল, যা জরিপ এবং স্থাপত্যের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাজনক ছিল। এই আবিষ্কারটি এটি প্রমান করে যে সেই সময়ের মানুষজন এই বাহুগুলো সম্পর্কিত সমস্যাগুলো অসাধারণ নির্ভুলতার সাথে সমাধান করতে পারত।
এই আবিষ্কারের আগে, অনেকেই মনে করতেন যে গ্রীক গণিতবিদরাই প্রথম উন্নত ত্রিকোণমিতির ধারণা প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু নতুন এই আবিষ্কারটি প্রমান করে যে ব্যাবিলনীয়রা ইতিমধ্যেই এই জ্ঞান অর্জন করেছিল, যা গ্রীকদের থেকে কমপক্ষে ১,০০০ বছর আগের। এটি প্রাচীন সভ্যতাগুলির গাণিতিক দক্ষতা সম্পর্কে আমাদের বর্তমান ধারণাকে পুনরায় পর্যালোচনা করতে হচ্ছে।
Leave a comment