হয়ত জেনে আপনি অবাক হবেন যে আমাদের মস্তিষ্ক নতুন যা কিছু ভাবে, সেই ভাবনা আসলে আমাদেরই মস্তিষ্কে থাকা কোন না কোন স্মৃতির এনক্রিপ্টেড্ বা গূঢ়লেখিত রূপ। অন্যভাবে বললে, যে কোন আবিষ্কার বস্তুত আমাদের জানা কোন বিষয়কেই এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ছাড়া আর কিছুই নয়। যুগ যুগ ধরে মানুষ প্রকৃতির ক্রিয়াকলাপের নানা দিক বিশেষ করে প্রকৃতির সৃষ্টি করা জীব ও তাদের জীবন-ধারণ পর্যবেক্ষণ করছে, সেগুলিকে স্মৃতিবদ্ধ করেছে – প্রকৃতির সাথে এই রসায়নেই মনুষ্য-মস্তিষ্ক হয়েছে গর্ভবতী, প্রসব করেছে প্রযুক্তি ! কিছু রসায়ন সত্যই সুপরিকল্পিত, আর কিছু নিতান্তই নিয়তি ও নিমিত্তের মিলন। অর্থাৎ সজ্ঞানে হোক কিংবা অজান্তে, মানুষ প্রযুক্তির নামে প্রকৃতিকেই পুর্নসৃষ্টি করে চলেছে !
গাছের ডাল থেকে ঝাঁপ দেওয়া পাখিটা তার ডানা দুই মলে ধরে বাতাসে। তার বিস্তৃত ডানার ঊর্ধ্বপৃষ্ঠ সাধারণত ঈষৎ বক্র হয় আর নিম্নপৃষ্ঠ হয় প্রায় সমতল, ফলে তার দেহ দুই ডানার সাহায্যে যখন বাতাস চিরে এগিয়ে চলে, ডানার ঊর্ধ্বপৃষ্ঠ ছুঁয়ে বয়ে চলা বাতাসের বেগ নিম্নপৃষ্ঠ ঘেঁষা বাতাসের বেগ অপেক্ষা কিছু বেশী হয়। ফলে তার মেলে ধরা ডানাদুটির ঠিক নীচের ঊর্ধমুখী বায়ুচাপ ডানাযুগলের উপরিভাগের নিম্নমুখী বায়ুচাপ অপেক্ষা কিছু বেশী। বায়ুচাপের এই তারতম্যের সহায়তায় দুই ডানা সহ পাখির দেহ ভেসে ওঠে বাতাসে। বায়ুর মত যে কোন প্রবাহীরই ভর অপরিবর্তিত থেকে গিয়ে বেগ বেড়ে গেলে তার চাপ কমে যায় – এই তত্ত্ব “বার্নৌলী নীতি” নামে খ্যাত। “বার্নৌলী নীতি”-র সাহায্যে পাখির বাতাসে ভেসে থাকার কারণ তো বোঝা গেল, কিন্তু ভেবে দেখুন যে শুধুই কি পাখি বা উড়ুক্কু প্রাণীরাই “বার্নৌলী নীতি”-কে কাজে লাগিয়ে ওড়ে ? রানওয়ে-র উপর দিয়ে ছুটে চলা “এরোপ্লেন” সেই “বার্নৌলী নীতি”-কে কাজে লাগিয়েই নির্দিষ্ট সময় পর মাটি ছেড়ে বাতাসকে আঁকড়ে ধরে ও বাতাসে ভর করেই এগিয়ে চলে – উড়তে আমরাও শিখেছি, উড়ুক্কুদের প্রবৃত্তি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমাদের বুদ্ধিকে !
হাওয়ার সাথে চুক্তি করে সময়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষ ছুটতে শিখেছিল ঠিকই কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সময়কে টেক্কা দেওয়ার আকাঙ্খা মাথা চাড়া দিয়েছে । ফলে মানুষ আরও গতির সন্ধান করেছে ! “জেট প্লেন”-র এঞ্জিন একটা পাখার সাহায্যে সম্মুখভাগ থেকে বায়ুমন্ডলের বায়ু শোষণ করে কম্প্রেসার-র সাহায্যে তাকে কমপ্রেস বা সংনমন করে। তারপর সেই সংনমিত বায়ুতে জ্বালানী মিশিয়ে সেই মিশ্রণে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ যোগ করতেই সেই গ্যাস-মিশ্রণ প্রসারিত হয়ে প্রবল বিস্ফোরণের সঙ্গে এঞ্জিন-র পশ্চাৎভাগের নল দিয়ে তীব্র বেগে বেরিয়ে আসে, ফলে এঞ্জিন সহ জেট প্লেন “রৈখিক ভরবেগের সংরক্ষণ নীতি” অনুসারে প্রবল বেগে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো যে, সাধারণ এরোপ্লেন অপেক্ষা অনেক বেশী গতিতে এগিয়ে চলার এই উপায় মানুষের হৃদয়ঙ্গম্ হলো কিভাবে ? বলাই বাহুল্য – প্রকৃতির বদান্যতায়। জলে সাঁতার কাটার সময়ে ব্যাঙাচিরা নিজেদের দেহকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ঠিক এমনই এক পদ্ধতি ব্যবহার করে ! ব্যাঙাচি মুখ দিয়ে জল শোষণ করে সেই জল তার দেহের পিছনের ছিদ্র দিয়ে তীব্র বেগে নির্গত করে, ফলস্বরূপ সে এগিয়ে যায় সামনের দিকে।
দ্রুত বেগে এগিয়ে যাওয়া যেমন জরুরি, কখনও কখনও থমকে দাঁড়াতেও হয়। স্থলভাগে এই গতিবিধি অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাতাসে ভেসে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সময়ে ব্রেক কষে দাঁড়ানো সহজ কাজ নয় কারণ সেক্ষেত্রে মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল ! কিছু কিছু পাখি যেমন হামিংবার্ড, বেশ কিছু পতঙ্গ যেমন ফড়িং কিন্তু উড়তে উড়তে সাবলীলভাবেই থেমে যেতে পারে ও একই স্থানে বাতাসে ভেসে থাকতে পারে ! তারা যখন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশী জোরে তাদের পাখা ঝাপটে বাতাসে নিম্নমুখী বল প্রয়োগ করে, বাতাসও তখন তাদের পাখার উপর “নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র” অনুসারে সমান ঊর্ধ্বমুখী বল প্রয়োগ করে, ফলে তারা একই স্থানে বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। এখন বলুন তো, এই হামিং বার্ড বা ফড়িংকে দেখে মানুষ ঠিক কোন্ আকাশযানের জন্ম দিয়েছে বলে আপনার মনে হয় ? একটা সূত্র দিচ্ছি। এই যান এরোপ্লেনের মত “বার্নৌলী নীতি” ব্যবহার করে ঠিকই কিন্তু ওড়ানোর জন্য সেটিকে রানওয়ে-তে ছোটাতে হয় না, তার বদলে বাতাসে ঘূর্ণিস্রোত তৈরি করেই এই যান বাতাসে ভেসে উঠতে পারে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে আমি “হেলিকপ্টার”-র কথা বলছি !
উত্তরোওর বেড়ে চলা সময়ের অভাবে ভুগতে থাকা মানবসভ্যতা জনবিস্ফোরণের সম্মুখীন হয়েছে। ফলে আকাশপথে অধিক দ্রুত যাতায়াত সম্ভব হলেও স্থলপথ বা জলপথকে মানুষ বাতিলের খাতায় রাখতে তো পারেইনি, উপরন্তু স্থলপথ বা জলপথে আরও দ্রুত কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই বিষয়ে সচেষ্ট হয়েছে। মানুষ যাতায়াতের জন্য যে ট্রেন ব্যবহার করেছে সেই ট্রেনে যত শক্তিশালী এঞ্জিন-ই ব্যবহার করা হোক্ না কেন, ট্রেনের চাকা আর মাটিতে বিছানো রেল লাইনের ঘর্ষণ বল ট্রেনকে দ্রুত এগিয়ে যেতে সর্বদাই বাধ সেধেছে। এছাড়াও এঞ্জিন-কে ট্রেনের ভারী চাকাগুলো বইতেও শক্তি ব্যয় করতে হয়। এই শক্তির অপব্যয় বন্ধ করতে আর ঘর্ষণ বলকে উপেক্ষা করতে তৈরি হয়েছে “ম্যাগলেভ্ ট্রেন” বা “ম্যাগনেটিক লেভিটেটিং ট্রেন” যা “ম্যাগনেটিক লেভিটেশন্” বা “চুম্বকীয় উত্তোলন” পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে মাটিকে স্পর্শ না করেই সাধারণ ট্রেনের মত একটি নির্দিষ্ট পথ ধরে কিন্তু সাধারণ ট্রেন অপেক্ষা অনেক বেশী গতিতে ছুটে চলে। কিন্তু ছোটার সময়ে বায়ুর বাধা রয়েই যায় ! সেই বায়ুর বাধা কমানোর উপায় প্রকৃতিই মানুষকে শিখিয়েছে ! কোনদিন মাছরাঙা পাখিকে জলে ঝাঁপ দিয়ে মাছ ধরতে দেখেছেন ? লক্ষ্য করবেন যে মাছরাঙা পাখি জলে ঝাঁপ দেওয়ার সময়ে জল খুব একটা ছলকে ওঠে না, ফলে খুব একটা শব্দও হয় না, কারণ প্রকৃতি মাছরাঙার ঠোঁট সমেত মাথাটিকে যে আকৃতি দিয়েছে তাকে আমরা বলতে পারি “এয়ারোডায়ন্যামিক্ শেইপ্”। এই বিশেষ আকৃতির জন্যই মাছরাঙা কোন মাছকে লক্ষ্য করে তীব্র বেগে জলে প্রবেশ করলে জলকণাসমূহ মাছরাঙার গতির বিরূদ্ধে খুব একটা বাধা সৃষ্টি করে না। ফলে জলে থাকা মাছটি কিছু টের পাওয়ার আগেই মাছরাঙার ঠোঁটের নাগালে চলে আসে। ম্যাগলেভ ট্রেন-র গতির বিরূদ্ধে বায়ুর বাধা যাতে নাম মাত্র হয়, মানুষ সেই ট্রেনের সম্মুখভাগ তৈরি করেছে এই “এয়ারোডায়ন্যামিক্ শেইপ্”-কে মাথায় রেখেই। ফলে ম্যাগলেভ্ ট্রেন সাধারণ ট্রেনের প্রায় এক চতুর্থাংশ সময়ে যাত্রীদের পৌঁছে দিতে পারে তাঁদের গন্তব্যে !
গতি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা তো অনেকটাই হলো, এবার মাথা গোঁজার ঠাঁই প্রসঙ্গে আসি। শীত তাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবহার যখন শুরু হয়নি তখন অধিকাংশ বাড়িতেই ঘরের দেওয়ালে ঘুলঘুলি থাকত যাতে ঘরের বাতাস গরম হলেই তা হালকা হয়ে উপরের দিকে ওঠে ও ঘুলঘুলি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে; ফলে ঘরে শুধুমাত্র স্বাভাবিক তাপমাত্রার বাতাসই পাওয়া যায়। এই ঘুলঘুলির ধারণাও কিন্তু মানুষের নিজস্ব নয় ! জানলে হয়ত অবাক হবেন যে মানুষের মত উন্নত মস্তিষ্কের প্রাণীর অনেক আগে থেকেই উইপোকারা ঘুলঘুলি ব্যবহার করে ! উইপোকারা তাদের তৈরি ঢিপির ভিতরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য ঢিপির মাথায় এবং ধারের দেওয়ালগুলিতে ছিদ্র রাখে।
গতি হোক্ কিংবা বসতি, সভ্যতার স্তম্ভগুলিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা যোগ করেছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি অন্যতম পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি হলো বায়ুশক্তি। কিন্তু বায়ুশক্তি চালিত শিল্পে একসাথে অনেক বায়ু-টারবাইন-র ব্যবহার একসময়ে শব্দ দূষণের কারণ হত। ফ্র্যাঙ্ক ফিশ্ নামক একজন জীববিজ্ঞানী হাম্পব্যাক্ তিমি-র পাখনার গঠন অনুকরণ করে বায়ু-টারবাইন-র প্রত্যেকটি ব্লেড বানানোর প্রস্তাব রাখেন। এক্ষেত্রে টারবাইন-টির প্রত্যেকটি ব্লেড সারিবদ্ধ ছোটো ছোটো স্ফীত অংশ নিয়ে তৈরি হয় যারা টারবাইন-টি ঘোরার সময়ে টারবাইন-র প্রতিটি ব্লেডের উপর বায়ুর বাধা কমাতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। ফলে সেই বাধার দরুণ উৎপন্ন শব্দের প্রাবল্যও কম হয়।
আমরা জানি যে, প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রাণীর রক্ত জমে যায়, সজীব কোষ মারা যায়। কিন্তু উত্তর মেরুর অঞ্চলগুলির বরফ গোলা ঠান্ডা জলে কড্ মাছেরা বহাল তবিয়াতে বেঁচে থাকে ! কিভাবে ? আসলে এদের রক্তে “অ্যান্টিফ্রীজ্ গ্লাইকোপ্রোটিন” নামে এক বিশেষ প্রকার প্রোটিন থাকে যা তাদের রক্তকে ঐ প্রচণ্ড ঠান্ডাতেও তরল থাকতে সাহায্য করে। এরই অনুপ্রেরণায় ওয়ারউইক্ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা “পলিভিনাইল অ্যালকোহল” নামক এক পলিমার তৈরি করেছেন যা খুব ঠান্ডাতেও রক্ত সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রকৃতি মানুষকে রক্ত সংরক্ষণ করতে শেখালেও প্রকৃতিরই সমর্থনে মানুষের রক্ত বিশেষ বিশেষ সময়ে অসুরক্ষিতও বটে ! কখনও কখনও আপনি টেরই পান না যে একটা মশা আপনার গায়ে বসে বহুক্ষণ ধরে আপনার রক্ত শোষণ করছে ! মশা তার সরু ছুঁচের মত মুখ অর্থাৎ “প্রোবোসিস”-কে খুব অল্প কম্পাঙ্কে কাঁপাতে কাঁপাতে আপনার ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করায় যাতে আপনাকে অতি সামান্য ব্যথা দিয়েই রক্ত শুষে নেওয়া যায় ! এই অতি সামান্য ব্যথা দেওয়া বা কোন রকম ব্যথাই না দেওয়ার উদ্দেশ্য আশা করি বুঝতেই পারছেন, সে চায়ই না যে আপনি রক্ত-চুরির ব্যাপারটা ঠাওর করতে পারেন। এক্ষেত্রেও অবশ্য প্রকৃতি একটা প্রযুক্তি-শিক্ষা আমাদেরকে দিয়েছে। জাপানের কানসাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও প্রকৌশলীগণ মশার রক্ত শোষণ করার এই পদ্ধতিকে অনুসরণ করে নতুন এক সার্জিকাল ছুঁচ তৈরি করেছেন। এই ছুঁচকে প্রায় ১৫ হার্ৎজ্ কম্পাঙ্কে কম্পিত করে অতি সহজেই রোগীর ত্বকে প্রবেশ করানো যায়। ফলে কোন রোগীর অস্ত্রোপচারে এই ছুঁচের ব্যবহার রোগীকে নাম মাত্র ব্যথা দেয় !
মানুষ তার হাতদুটিকে নানা কাজে ব্যবহার করে ঠিকই তবে হাতযুগলের ব্যবহার খুবই সীমিত। এই দুই হাতে খুব বেশী ওজন তোলা যায় না, আবার হাতদুটিকে ইচ্ছামত সকল দিকে প্রসারিতও করা যায় না। এই ব্যাপারে হাতির শুঁড় কিন্তু সিদ্ধহস্ত কারণ হাতির শুঁড়ে একটিও হাড় থাকে না বরং থাকে চল্লিশ হাজারেরও বেশী মাংসপেশী। জার্মান প্রতিষ্ঠান “ফেস্টো” তাই হাতির শুঁড়ের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য অনুকরণ করে এক প্রকার কৃত্রিম শুঁড় বা “বায়োনিক ট্রাঙ্ক” তৈরি করেছে যা কারখানায় ভারী জিনিসপত্র তোলার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বা প্রতিবন্ধীদের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে তুলতে পারে।
কিছু কিছু উদ্ভিদের শুকনো ফল বা বীজের গায়ে অজস্র কাঁটা থাকে। এই সকল উদ্ভিদগুলিকে তৃণভোজী প্রাণীদের থেকে রক্ষা করতে অথবা এই উদ্ভিদগুলির ফল বা বীজ যাতে বিভিন্ন পাখির পালকে বা পশুর লোমে আটকে গিয়ে দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে – মূলত এই দুই কারণেই প্রকৃতি এই উদ্ভিদগুলির ফল বা বীজের গায়ে কাঁটা প্রদান করে। স্যুইস্ প্রকৌশলী জর্জ দ্য মেস্ট্রাল একবার শিকারে গিয়ে হঠাৎ লক্ষ্য করেছিলেন যে তাঁর প্যান্ট ও তাঁর কুকুরটির গায়ের লোমে এমন অজস্র কাঁটাফল লেগে গেছে ! তিনি নিতান্তই বৈজ্ঞানিক কৌতুহলবশতঃ সেই কাঁটাফলগুলিকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণের পরই হঠাৎ এক চিলতে হাসি তাঁর ঠোঁটের কোণে জায়গা করে নিয়েছিল কারণ সেই অণুবীক্ষণ যন্ত্রে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন এক নতুন প্রযুক্তির হাতছানি, যে প্রযুক্তি আজ “ভেলক্রো” নামক প্রতিষ্ঠানের “হুক্ অ্যান্ড লুপ ফ্যাসেনিং” প্রযুক্তি নামে খ্যাত ! শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জামা-কাপড় এবং জুতায় বোতাম, জিপার, বা ফিতের পরিবর্তে এই প্রযুক্তির ব্যবহার তাদেরকে স্বনির্ভর করেছে।
প্রকৃতিই যে প্রযুক্তির প্রেরণা তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে প্রযুক্তির মজ্জায় মজ্জায়, সেগুলির মধ্যে কয়েকটা মাত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। প্রকৃতির কাছ থেকে প্রযুক্তির পাঠ পড়ে মানুষের মস্তিষ্কে এমনও অনেক প্রযুক্তি দানা বেঁধেছে যারা এখনও সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি। “মেশিন লার্নিং” নামক তথ্য বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষ যন্ত্রকে নিজের মস্তিষ্কের মতই যৌক্তিকতা, সজ্ঞা, ও কল্পনাশক্তি সমৃদ্ধ চিন্তাশক্তি প্রদানের চেষ্টা করছে। অর্থাৎ মানুষ এমন কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে যা প্রদত্ত তথ্য ভান্ডারকে বিশ্লেষণ করবে, সেই তথ্য ভান্ডারে উপস্থিত তথ্যদের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজবে, ও অবশেষে মানুষের অত্যল্প সাহায্য বা কোন সাহায্য ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। শুধু তাই নয়, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবে কতটা সফল হলো তা বিবেচনা করে কৃত্রিম মস্তিষ্ক নিজেই নিজের তথ্য বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনমত পরিবর্তন আনবে, অন্যভাবে বললে, সে মনুষ্য-মস্তিষ্কের মত নিজেই নিজের কৃত কর্মের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে যাতে ভবিষ্যতে তাকে আর বিফল না হতে হয় বা তার সাফল্যের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।
Leave a comment