কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শুধু কি টিচিং এসেসমেন্টই শুধু আবশ্যকীয়, রিসার্চ এসেসমেন্টেরের কি তাহলে প্রয়োজন নেই?

Share
Share

অতিথি লেখক:
প্রফেসর ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

উত্তর পেতে আজকের লেখাটা, সময় পেলে প্লিজ পড়বেন! সাথে কিভাবে এসেসমেন্ট করা হয় বিশ্বব্যাপী তাও দেওয়া হলো:

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য টিচিং এসেসমেন্ট এবং রিসার্চ এসেসমেন্ট উভয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, প্রশ্ন উঠতে পারে যে, শুধুমাত্র টিচিং এসেসমেন্ট আবশ্যকীয় এবং রিসার্চ এসেসমেন্টের কোনো প্রয়োজন নেই কি না। এটি বিশ্লেষণ করতে নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

টিচিং এসেসমেন্টের প্রয়োজনীয়তা

১. শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন:

টিচিং এসেসমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষকের পাঠদান কৌশল, শিক্ষণ পদ্ধতি এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়বস্তু কেমন তা মূল্যায়ন করা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা আরও উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

২. শিক্ষণ পদ্ধতির মান উন্নয়ন:

শিক্ষকদের পাঠদান কৌশলের মান বুঝতে সাহায্য করে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও উন্নতির সুযোগ তৈরি করে।

৩. শিক্ষার গুণগত মান:

– একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান নির্ভর করে তার শিক্ষকগণের পাঠদান পদ্ধতির উপর। শিক্ষকদের কার্যকারিতা বুঝতে টিচিং এসেসমেন্ট আবশ্যক।

৪. ফিডব্যাক প্রদান:

শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাক থেকে শিক্ষকের উন্নতির সুযোগ পাওয়া যায়, যা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করে।

রিসার্চ এসেসমেন্টের প্রয়োজনীয়তা

১. গবেষণার গুণগত মান:

রিসার্চ এসেসমেন্টের মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল এবং কাজের গুণগত মান মূল্যায়ন করা হয়, যা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে এবং গবেষকদের অবদান বোঝায়।

২. একাডেমিক পরিচিতি:

গবেষণার ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং শিক্ষকের একাডেমিক পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।

৩. অর্থায়ন এবং তহবিল:

গবেষণার সফলতা এবং গুণগত মান তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তহবিল পাওয়ার জন্য গবেষণার মান নিশ্চিত করা আবশ্যক।

৪. সমাজে অবদান:

গবেষণার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার প্রচেষ্টা এবং তা কিভাবে কার্যকর হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করা।

একসঙ্গে টিচিং এবং রিসার্চ এসেসমেন্টের প্রয়োজন

শিক্ষা ও গবেষণা সম্পর্ক:

শিক্ষকরা যদি গবেষণায় যুক্ত হন, তাহলে তাদের গবেষণা শিক্ষার মানকে উন্নত করতে সাহায্য করে। গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন বিষয়বস্তু জানতে পারে, যা তাদের শিক্ষা জীবনে অত্যন্ত সহায়ক।

একাডেমিক সংস্কৃতি:

বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সমৃদ্ধ একাডেমিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে টিচিং ও রিসার্চ এসেসমেন্টের একটি সমন্বিত ব্যবস্থা আবশ্যক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন:

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য উভয় এসেসমেন্টের কার্যকরী ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এটি শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি গবেষণার মান উন্নয়নে সহায়ক।

আবার ও বলা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য টিচিং এসেসমেন্ট ও রিসার্চ এসেসমেন্ট উভয়ই প্রয়োজনীয়। যেখানে টিচিং এসেসমেন্ট শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণমান এবং শিক্ষকদের দক্ষতা মূল্যায়ন করে, সেখানে রিসার্চ এসেসমেন্ট নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বৃদ্ধি করে। ফলে, দুটি এসেসমেন্টের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকা জরুরি, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ও গবেষণার মানের উন্নতি সাধন করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টিচিং এবং রিসার্চ এসেসমেন্টের পদ্ধতি এবং তা কার্যকরভাবে সম্পাদনের জন্য কিছু বিস্তারিত দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:

ক. টিচিং এসেসমেন্ট (Teaching Assessment)

১. শিক্ষণ মূল্যায়ন:

কোর্স সিলেবাস:

® সিলেবাস তৈরির সময় শিক্ষকের পাঠ্যসূচির উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, শিক্ষার পদ্ধতি, এবং মূল্যায়ন কৌশল স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

® সিলেবাসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করা উচিত যাতে তারা তাদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

শিক্ষণ পদ্ধতি:

® শিক্ষকের বিভিন্ন শিক্ষণ কৌশল যেমন লেকচার, গোষ্ঠী আলোচনা, প্রজেক্ট, এবং ইন্টারেক্টিভ সেশনের ব্যবহার বিশ্লেষণ করা।

® অনলাইনে বা অফলাইনে পরিচালিত ক্লাসের জন্য শিক্ষক কিভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন তা মূল্যায়ন করা।

শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাক:

® শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাক নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন:

® এনোনিমাস সার্ভে: শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং শিক্ষক সম্পর্কে তাদের মতামত জানাতে দেয়া।

® ফিডব্যাক সেশন: নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনা।

পরীক্ষার ফলাফল:

® শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার এবং অ্যাসাইনমেন্টের ফলাফল বিশ্লেষণ করা।

® পরীক্ষার প্রশ্নের স্তরের সাথে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সম্পর্ক বিশ্লেষণ।

২. অ্যাকাডেমিক অবদান (Academic performance)

পাঠ্যপুস্তক ও ম্যাটেরিয়াল:

⊕ যদি শিক্ষক নতুন পাঠ্যপুস্তক বা শিক্ষামূলক ম্যাটেরিয়াল তৈরি করেন, তবে তা তার শিক্ষণের মান নির্ধারণে সহায়তা করবে।

⊕ শিক্ষকের লেখা গবেষণাপত্র এবং গাইড বইয়ের গুরুত্ব এবং তা কিভাবে শিক্ষার্থীদের উপকারে এসেছে তা মূল্যায়ন করা।

সেমিনার ও ওয়ার্কশপ:

⊕ শিক্ষকের দ্বারা পরিচালিত সেমিনার এবং ওয়ার্কশপে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও আগ্রহের স্তর পর্যবেক্ষণ করা।

⊕ এসব কার্যক্রমের প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া এবং তা থেকে শেখার সুযোগের বিশ্লেষণ।

৩. প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট: (Professional Development)

⊕ কনফারেন্স ও সেমিনারে অংশগ্রহণ:

শিক্ষকরা কতটি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সেখান থেকে তারা কী শিখেছেন তা মূল্যায়ন করা।

কনফারেন্সে তাদের উপস্থাপনার সফলতা এবং সেখান থেকে শিক্ষার অগ্রগতি।

খ. রিসার্চ এসেসমেন্ট (Research Assessment)

১. গবেষণার গুণগত মান

⊕ পাবলিকেশন:

গবেষণা কাজের জন্য কতগুলো গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে এবং সেগুলোর মান ও স্তর (যেমন, স্কোপাস, ওয়েব অফ সায়েন্স) বিশ্লেষণ করা।

গবেষণাপত্রগুলোর সিটেশন ইন্ডেক্স পর্যালোচনা করা, অর্থাৎ অন্যান্য গবেষকরা কতবার তাদের কাজকে উদ্ধৃত করেছেন।

⊕ গবেষণার প্রভাব:

গবেষণার ফলাফলগুলি কীভাবে সমাজে বা শিল্পে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে তা বিশ্লেষণ।

গবেষণা ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষকের কার্যক্রম কেমন পরিবর্তন হয়েছে।

২. গবেষণা প্রকল্প:

ফান্ডিং:

গবেষণার জন্য শিক্ষকরা কীভাবে তহবিল সংগ্রহ করছেন এবং তা কিভাবে গবেষণার মান উন্নত করেছে তা মূল্যায়ন।

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তহবিলের সংখ্যা এবং প্রকল্পের সফলতা।

গবেষণা ফলাফল:

® প্রকল্পের ফলাফল কিভাবে বাস্তব জীবনে কার্যকর হয়েছে তা বিশ্লেষণ করা।

® গবেষণার ফলাফল শেয়ার করার পদ্ধতি (যেমন, সেমিনার, জার্নাল, ব্লগ) এবং এর ফলাফল।

৩. সহযোগিতা ও নেটওয়ার্কিং

⊕ অন্য গবেষকদের সাথে সহযোগিতা:

® শিক্ষকরা কি গবেষণা প্রকল্পে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় যুক্ত আছেন তা পর্যালোচনা।

® গবেষণায় অংশীদারিত্বের গুণমান এবং তা কিভাবে একাডেমিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে।

⊕ গবেষণা গ্রুপে অংশগ্রহণ:

® গবেষণা গ্রুপের সভায় অংশগ্রহণের সংখ্যা এবং সেই সভাগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণ করা।

® গবেষণা গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যৌথ প্রকল্প এবং তা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল।

উপসংহার

শিক্ষকদের টিচিং এবং রিসার্চ এসেসমেন্ট একটি সংহত প্রক্রিয়া যা শিক্ষকের শিক্ষণ কার্যক্রম এবং গবেষণার গুণগত মানের মূল্যায়ন করে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের শিক্ষক ও গবেষকদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত শিক্ষণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে। নিয়মিত মূল্যায়ন এবং ফিডব্যাকের মাধ্যমে শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি আনা সম্ভব।

বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–

https://www.facebook.com/share/p/15fa7ccFbC

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.