নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ | ৫ মে ২০২৫
আজ স্কাইপ (Skype)-এর আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় ঘটল। এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও কলিং এবং চ্যাট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত এই অ্যাপ্লিকেশনটি প্রযুক্তির ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। মাইক্রোসফট অবশেষে ঘোষণা করেছে, ২০২৫ সালের ৫ মে থেকে স্কাইপ আর চলবে না।
স্কাইপের ইতিহাস
স্কাইপ যাত্রা শুরু করেছিল ২০০৩ সালে, নিকলাস জেনস্ট্রম (Niklas Zennström) ও জানুস ফ্রিস (Janus Friis) নামের দুই উদ্যোক্তার হাত ধরে। এটি ছিল এক ধরণের ভয়েস ওভার আইপি (VoIP) সিস্টেম, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা একে অপরকে কল করতে পারত। এর প্রযুক্তিগত কাঠামো তৈরি করেছিল এস্তোনিয়ার কিছু মেধাবী ডেভেলপার।
২০০৫ সাল নাগাদ স্কাইপ ৫০ মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী অর্জন করে এবং ২০১১ সালে মাইক্রোসফট এটি ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে। এরপর এটি উইন্ডোজ, ম্যাক, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সহজেই ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে।
করোনার সময় স্কাইপ বনাম জুম
স্কাইপ এক সময় অফিস মিটিং থেকে শুরু করে পারিবারিক যোগাযোগ—সব ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের করোনাভাইরাস মহামারির সময়, জুম (Zoom), গুগল মিট (Google Meet) এবং মাইক্রোসফট টিমস (Microsoft Teams)-এর মতো নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়।
মজার বিষয় হলো, যখন মানুষ ভিডিও কলে অভ্যস্ত হচ্ছিল, তখন স্কাইপের পরিবর্তে সবাই অন্য অ্যাপগুলো বেছে নিচ্ছিল। ধীরে ধীরে স্কাইপ হারিয়ে যায়, এবং ২০২৫ সালে এসে মাইক্রোসফট জানিয়ে দেয়, এটি বন্ধ করে দিচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য শেখার বিষয়
স্কাইপের বিদায় আমাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়ে আসে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য:
- প্রযুক্তির পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়: এক সময়ের শীর্ষ অ্যাপ আজ আর ব্যবহৃত হয় না। তাই প্রযুক্তি নিয়ে যারা কাজ করতে চায়, তাদের সবসময় নতুন ট্রেন্ড ও ব্যবহারকারীর প্রয়োজন বুঝে প্রস্তুত থাকতে হবে।
- ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) ও পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ: জুম বা গুগল মিট সহজ ইন্টারফেস ও দ্রুত সংযোগের সুবিধা দিয়েছিল, যা স্কাইপ দিতে পারেনি। তাই সফটওয়্যার ডিজাইন করার সময় ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।
- নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্তের প্রভাব: স্কাইপ মাইক্রোসফটের অধীনে আসার পর যথাযথভাবে রিব্র্যান্ড বা উন্নয়ন হয়নি। এর থেকে বোঝা যায় যে, ব্যবসার সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকলে ভালো প্রযুক্তিও টিকে থাকতে পারে না।
- ইতিহাস থেকে শিখে সামনে এগিয়ে যাওয়া: স্কাইপের উদ্ভাবন, জনপ্রিয়তা এবং পতন—তিনটিই একটি পরিপূর্ণ পাঠ। প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি কেস স্টাডি হয়ে থাকবে।
উপসংহার
স্কাইপ আমাদের শিখিয়েছে, প্রযুক্তিতে অগ্রগতি মানেই টিকে থাকা নয়, বরং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোই সফলতার মূল চাবিকাঠি। নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কাইপের এই গল্প একটি বাস্তব শিক্ষা—তারা যেন শুধু নতুন কিছু বানানো নয়, বরং টেকসই ও ব্যবহারকারীর প্রয়োজনে উপযোগী সমাধান তৈরিতে মনোযোগ দেয়।
আপনি কি চান আমি একটি স্কাইপের টাইমলাইন বা পোস্টার তৈরি করে দিই সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য?
Leave a comment