গবেষণায় হাতে খড়ি

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষকের নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকা উচিত!

Share
Share

প্রফেসর- ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন

ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের দায়িত্ব কেবলমাত্র ক্লাস নেওয়া বা বিদ্যমান জ্ঞান বিতরণ করা নয়। তাদের মূল দায়িত্বের মধ্যে একটি হলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং গবেষণার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। এই কাজগুলো সফলভাবে সম্পাদন করতে একটি নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাবরেটরী হলো গবেষণার প্রাণকেন্দ্র, যেখানে নতুন উদ্ভাবন এবং গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য একটি নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকা উচিত, যাতে তারা নিজেদের গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গবেষণার দক্ষতাও বৃদ্ধি করতে পারেন।

কেন প্রতিটি শিক্ষকের নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকা উচিত?

১. গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়তা:

ল্যাবরেটরী গবেষণা কার্যক্রমের কেন্দ্র। এটি শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, প্রযুক্তি এবং স্থান সরবরাহ করে, যা গবেষণার জন্য অপরিহার্য।

উদাহরণ:

পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পার্টিকল এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য ল্যাবরেটরী ছাড়া গবেষণা সম্ভব নয়।

২. নতুন জ্ঞান সৃষ্টি:

ল্যাবরেটরী একটি সৃজনশীল পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে শিক্ষকরা নতুন ধারণা পরীক্ষা করতে পারেন।

উদাহরণ: কেমিস্ট্রি বা বায়োলজির ক্ষেত্রে নতুন রাসায়নিক উপাদান বা জীবাণু নিয়ে গবেষণা করা শুধুমাত্র একটি ল্যাবরেটরীতেই সম্ভব।

৩. শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করা:

শিক্ষকের নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকলে শিক্ষার্থীরা সেখানে কাজ করার সুযোগ পায়। এটি তাদের হাতে-কলমে গবেষণার অভিজ্ঞতা দেয়।

উদাহরণ: ভারতের IIT-গুলোতে প্রতিটি অধ্যাপকের নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকে, যেখানে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারে।

৪. প্রতিযোগিতামূলক একাডেমিক পরিবেশ তৈরি:

একটি ল্যাবরেটরী শিক্ষকদের প্রতিযোগিতামূলক গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান বৃদ্ধি পায়।

উদাহরণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের MIT এবং স্ট্যানফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিটি প্রফেসরের নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকে, যা তাদের গবেষণাকে বিশ্বমানের করে তোলে।

৫. সমস্যার সমাধানে ভূমিকা:

নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকলে শিক্ষকরা স্থানীয় এবং বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে কাজ করতে পারেন।

উদাহরণ: বাংলাদেশের শিক্ষকরা যদি জলবায়ু পরিবর্তন বা কৃষি উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করতে চান, তবে একটি ল্যাবরেটরী ছাড়া তা সম্ভব নয়।

ল্যাবরেটরীর ভূমিকা শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নয়নে:

১. একাডেমিক মানোন্নয়ন:

ল্যাবরেটরী শিক্ষকদের গবেষণার সুযোগ দিয়ে তাদের পাঠদানের মান উন্নত করে।

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং বৃদ্ধিতে সহায়তা:

আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং নির্ধারণে গবেষণা এবং গবেষণার মান একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

উদাহরণ: হার্ভার্ড বা অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ল্যাবরেটরী-কেন্দ্রিক গবেষণার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে।

৩. ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংযোগ:

ল্যাবরেটরী ইন্ডাস্ট্রির জন্য প্রয়োজনীয় সমাধান প্রদান করতে পারে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সংযোগ বাড়ায়।

চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধান:

চ্যালেঞ্জ:

১. অর্থায়নের অভাব:

ল্যাবরেটরী স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের অভাব অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সমস্যা।

২. সুবিধার অভাব:

উন্নয়নশীল দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত জায়গা বা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।

৩. যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার অভাব:

অনেক শিক্ষকের কাছে ল্যাব পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা নেই।

সমাধান:

১. সরকারি এবং বেসরকারি অর্থায়ন:

গবেষণার জন্য সরকারি অনুদান এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।

২. ট্রেনিং এবং প্রশিক্ষণ:

শিক্ষকদের ল্যাব পরিচালনা এবং গবেষণার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

৩. সুবিধা বাড়ানো:

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাবরেটরীর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা এবং সরঞ্জাম বরাদ্দ করতে হবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট:

বর্তমান অবস্থা:

বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরী সুবিধা নেই। যেসব ল্যাব আছে, সেগুলোও অনেক ক্ষেত্রে যুগোপযোগী সরঞ্জামের অভাবে পিছিয়ে রয়েছে।

উন্নয়নের সম্ভাবনা:

১. সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একত্রে কাজ করে গবেষণার জন্য ল্যাবরেটরী স্থাপন করতে পারে।

২. দেশীয় সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য শিক্ষকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

আর্টস বা কমার্স ফেকাল্টিদের ক্ষেত্রে:

কলা /বানিজ্যের জন্যে কম্পিউটারাইজড সফওয়ারসহ, প্রিন্টার, স্কানার, প্রোজেক্টের, ডিজিটাল লাইব্রেরিসহ একটা বড় রুম যেখানে ১০/ ১২ জন ফেলো কাজ করবেন। এটাই তাঁদের ল্যাবরেটরী!

উপসংহার:

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষকের নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকা উচিত, কারণ এটি শুধু তার গবেষণার জন্য নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং শিক্ষাব্যবস্থার মান বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাবরেটরী শিক্ষকদের নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

একটি ল্যাবরেটরী গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। এটি শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, প্রতিটি শিক্ষকের জন্য ল্যাবরেটরী নিশ্চিত করার বিষয়টি নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য এবং সময়োপযোগী।

বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–https://www.facebook.com/share/p/12CFk5WVbLy/

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org