“দাদা, প্লাস্টিক কীভাবে ধ্বংস হয়?” — রাসেলের এই প্রশ্ন শুনে তার দাদু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, “প্লাস্টিক তো খুব ধীরগতিতে নষ্ট হয়, কয়েক শত বছর লেগে যায়! কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন এক আশ্চর্য সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।“
রাসেল অবাক হয়ে বলল, “কি সমাধান দাদা?”
দাদু মৃদু হেসে বললেন, “এক প্রকার কৃমি, যা প্লাস্টিক খেতে পারে!”
প্লাস্টিক বর্জ্য: এক বিশ্বব্যাপী সংকট
বর্তমানে পৃথিবীতে বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক তৈরি হয়, যার মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি হতে পারে। বাংলাদেশেও প্লাস্টিক দূষণ একটি বড় সমস্যা। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ঢাকাতেই প্রতিদিন ৮৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়।
প্লাস্টিক খাওয়া কৃমি: প্রাকৃতিক সমাধান
সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির (NTU) গবেষকরা সম্প্রতি এক ধরনের কৃমি নিয়ে গবেষণা করেছেন, যা প্লাস্টিক খেয়ে ফেলতে পারে। এই কৃমির নাম Zophobas atratus বা সুপারওয়ার্ম। গবেষণায় দেখা গেছে, এই কৃমির অন্ত্রে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যা প্লাস্টিককে ভেঙে ফেলে এবং এটি খাদ্য হিসেবে হজম করতে পারে।
গবেষক ড. উইলিয়াম চেন জানান, “আমরা দেখতে পেয়েছি যে এই কৃমিগুলো স্টাইরোফোমের মতো কঠিন প্লাস্টিকও হজম করতে সক্ষম। কিন্তু সমস্যা হলো, এদের সংখ্যা খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই আমরা প্রযুক্তির সাহায্যে এই কৃমির হজম প্রক্রিয়া অনুকরণ করার চেষ্টা করছি।”
কৃত্রিম অন্ত্র: প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যার সমাধান?
কৃমির সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠতে, NTU গবেষকরা কৃত্রিম অন্ত্র তৈরি করেছেন, যা প্লাস্টিককে দ্রুত ভেঙে ফেলতে পারে।
ড. চেন বলেন, “আমরা কৃমির অন্ত্রে থাকা এনজাইম সংগ্রহ করে তা কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছি। ফলে আমরা কোনো জীবন্ত কৃমির ওপর নির্ভর না করেও প্লাস্টিক ধ্বংস করতে পারবো।”
এই বায়োলজিক্যাল রিসাইক্লিং প্রযুক্তি রাসায়নিক পুনর্ব্যবহার পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। বর্তমানে প্রচলিত প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ায় উচ্চ তাপমাত্রায় গলানোর ফলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। কিন্তু এই নতুন জৈবিক প্রযুক্তি প্রকৃতির মতো করেই প্লাস্টিককে ধ্বংস করতে পারে।
বাংলাদেশে এর প্রভাব
বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান WBB Trust জানিয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মাত্র ৩৬% পুনর্ব্যবহারযোগ্য, বাকি অংশ মাটিতে বা নদীতে জমা হয়।
এই প্রযুক্তি যদি বাণিজ্যিকভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, তবে এটি বাংলাদেশের জন্য এক বড় সমাধান হতে পারে। গবেষকরা মনে করেন, এটি ল্যান্ডফিল ও নদীতে জমে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
এখনও এই গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এটি শিল্প পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আব্দুল হাকিম বলেন, “এটি যদি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের পর্যায়ে আসে, তবে আমাদের শহরগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এক নতুন যুগ শুরু হবে। তবে আমাদের নীতি নির্ধারকদের উচিত এই প্রযুক্তির উপর আরও গবেষণার জন্য তহবিল বরাদ্দ করা।”
উপসংহার
দাদু রাসেলকে বোঝালেন, “যখন বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির কাছ থেকে শেখে, তখন অসাধারণ নতুন প্রযুক্তির জন্ম হয়। হয়তো ভবিষ্যতে তোমার মতো ছেলেমেয়েরাই এই প্রযুক্তি আরও উন্নত করবে!“
রাসেল মুগ্ধ হয়ে বলল, “আমি বড় হয়ে বিজ্ঞানী হতে চাই, দাদা! যেন আমিও এমন কিছু উদ্ভাবন করতে পারি!”
এটাই বিজ্ঞানের সৌন্দর্য—অনুপ্রেরণা থেকে উদ্ভাবন এবং এক নতুন ভবিষ্যতের সন্ধান।
বিস্তারিত জানতে ও গবেষণার ভিডিও দেখতে:
https://www.channelnewsasia.com/watch/ntu-scientists-use-superworms-digest-plastic-4203591
Leave a comment