লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ওমিক্স (Omics) হল আধুনিক জীববিজ্ঞানের এমন একটি ক্ষেত্র, যা জীবের বিভিন্ন জেনেটিক এবং কোষীয় তথ্যকে বিশ্লেষণ করে। এই ডেটা জীববিজ্ঞানে এক বিপ্লব ঘটিয়েছে, কারণ এর মাধ্যমে আমরা জীবের সামগ্রিক জেনেটিক তথ্য এবং বিভিন্ন কোষীয় কার্যকলাপ সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারি। ওমিক্স ডেটা বলতে এমন ধরনের তথ্য বোঝানো হয়, যা জীবের বিভিন্ন স্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে, যেমন ডিএনএ, প্রোটিন, মেটাবলাইট, ইত্যাদি।
ওমিক্স ডেটা হল জীবের বিভিন্ন জৈবিক স্তরের বড় ধরনের তথ্যের সমষ্টি। এই ডেটা কয়েকটি প্রধান ভাগে বিভক্ত, যেমন:
1. জেনোমিক্স (GENOMICS): ডিএনএ বা জেনেটিক তথ্য সম্পর্কিত ডেটা।
2. প্রোটিওমিক্স (Proteomics): প্রোটিনের কার্যকলাপ এবং গঠন সম্পর্কিত ডেটা।
3. মেটাবোলোমিক্স (Metabolomics): কোষে বিভিন্ন মেটাবলাইট বা জৈব রাসায়নিকের স্তর সম্পর্কিত ডেটা।
4. ট্রান্সক্রিপটোমিক্স (Transcriptomics): ডিএনএ থেকে আরএনএ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত ডেটা।
ওমিক্স ডেটার ইতিহাস তেমন পুরনো নয়। ১৯৯০-এর দশকে মানুষের জিনোম প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জীবের জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ শুরু হয়। এই প্রজেক্টের সাফল্যের পর বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, জীবের শুধু ডিএনএ-ই নয়, বরং কোষে আরও অনেক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে। এরপর ওমিক্স গবেষণা শুরু হয় এবং বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন স্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন, যা জেনেটিক্স, প্রোটিন স্টাডি, মেটাবলিজম এবং অন্যান্য কোষীয় কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে।
ওমিক্স ডেটার সবচেয়ে বড় গুরুত্ব হলো এর মাধ্যমে আমরা জীবের জৈবিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারি। এটি বিভিন্ন রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ক্যান্সার বা হৃদরোগের মতো জটিল রোগগুলো কীভাবে শরীরে ছড়ায়, কোন জেনেটিক বা প্রোটিন লেভেলের পরিবর্তন রোগের কারণ হতে পারে, তা ওমিক্স ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা সম্ভব।
বর্তমান যুগে, ওমিক্স ডেটার গুরুত্ব অপরিসীম। মেডিক্যাল গবেষণায় এটি নতুন নতুন রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার পথ খুলে দিচ্ছে। জিনোমিক্সের মাধ্যমে রোগের জেনেটিক কারণগুলো বোঝা যাচ্ছে, প্রোটিওমিক্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রোটিনের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং মেটাবোলোমিক্সের মাধ্যমে মেটাবলিজমের উপর এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এই তথ্যগুলোর সমন্বয়ে ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যেখানে একজন ব্যক্তির জেনেটিক বা প্রোটিন ডেটা ব্যবহার করে তার জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে।
ওমিক্স ডেটার ব্যবহার শুধু চিকিৎসাশাস্ত্রে নয়, কৃষি এবং প্রাণিসম্পদ গবেষণায়ও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাণিসম্পদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় জেনোমিক্স এবং প্রোটিওমিক্স ব্যবহার করে উন্নত বংশ নির্বাচন করা হচ্ছে, যা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করছে।
ওমিক্স ডেটা আধুনিক জীববিজ্ঞানে এক নতুন বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এটি শুধু বিভিন্ন রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কৃষি, প্রাণিসম্পদ, এবং পরিবেশ বিজ্ঞানেও এর ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। ভবিষ্যতে, ওমিক্স ডেটার মাধ্যমে আরও উন্নত এবং কার্যকর পদ্ধতিতে জীববিজ্ঞান এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–
https://www.facebook.com/share/p/1PJMzziHgF/
Leave a comment