নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি মুহাম্মদ মহসিন কাবির এর। তিনি বর্তমানে সুইডেনে PhD রিসার্চার হিসেবে Mälardalens University তে কর্মরত আছেন, Hitachi Energy এর HeatTrack প্রজেক্টে। তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন:
আমি ২০২৪ সালে স্পেনের জিরোনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাঙ্গেরির এটভোস লর্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইরাসমাস মুণ্ডুস যৌথ মাস্টার্স ইন ইন্টেলিজেন্ট ফিল্ড রোবোটিক্স সিস্টেমস সম্পন্ন করেছি। এর আগে, আমি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)-এর কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একজন প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ২০২১ সালে আমি বিইউবিটি থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করি।
গবেষণার ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা বেশ সমৃদ্ধ। আমি বিইউবিটিতে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং অ্যাডভান্সড মেশিন ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ ল্যাবের প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করেছি। এছাড়াও, জাপানের আইজু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেটাবেজ সিস্টেম ল্যাব সহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি গবেষণা ল্যাবে আমি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছি।
আমার গবেষণা কাজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে, এবং আমি ৩০টিরও বেশি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছি উচ্চ প্রভাবশালী জার্নালে, যেমন: সায়েন্টিফিক রিপোর্টস, কম্পিউটারস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেটিক্স ইন মেডিসিন আনলকড, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং জার্নাল, হেলিওন, কম্পিউটারস অ্যান্ড সিকিউরিটি, হেলথকেয়ার অ্যানালিটিক্স, জার্নাল অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড রিসার্চ, আইইইই অ্যাক্সেস, সেন্সরস, প্লস ওয়ান, কগনিটিভ কম্পিউটেশন অ্যান্ড সিস্টেমস, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট ডেটা ইনসাইটস, এবং ম্যাথমেটিক্স। এছাড়াও, আমি মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর ১২টিরও বেশি সম্মেলন প্রবন্ধ এবং ৩টি বই অধ্যায়ে অবদান রেখেছি।
আমার গবেষণার আগ্রহ অনেক বিস্তৃত, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, কম্পিউটার ভিশন, ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), এবং রোবোটিক্সের মতো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমার গবেষণার মূল বিষয় হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মেশিন লার্নিং (ML), ডিপ লার্নিং, কম্পিউটার ভিশন, এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) এর উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ। আমার গবেষণার লক্ষ্য হল মানুষের এবং প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বুদ্ধিমান সিস্টেম তৈরি করা। উদাহরণস্বরূপ, আমি স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, এবং সামাজিক মাধ্যমের মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলোর সমাধানের জন্য মেশিন লার্নিং ও ডিপ লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে কার্যকর প্রযুক্তি তৈরি করেছি।
সহজভাবে বললে, আমি এমন প্রযুক্তি তৈরি করার চেষ্টা করি যা বড় বড় ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যাগুলো আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সমাধান করতে সাহায্য করে।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?
আমার গবেষণার কাজগুলি বিভিন্নভাবে সমাজকে উপকৃত করছে। উদাহরণস্বরূপ, আমি স্বাস্থ্যসেবা খাতে রিমোট মনিটরিং এবং রোগ শনাক্তকরণে উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করেছি, যা রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে সাহায্য করছে। এই ধরনের প্রযুক্তি বিশেষ করে গ্রামীণ এবং দূরবর্তী অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সরাসরি চিকিৎসা সেবা পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।
কৃষি খাতেও আমার গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উদাহরণস্বরূপ, আমি মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে গাছের রোগ শনাক্তকরণ এবং ফসলের মান উন্নয়নের পদ্ধতি তৈরি করেছি, যা কৃষকদের ফসলের সঠিক যত্ন নিতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করছে।
এছাড়াও, আমার গবেষণা সামাজিক মাধ্যমের অপমানজনক এবং ক্ষতিকর মন্তব্যগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করার প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যা সামাজিক মাধ্যমের পরিবেশকে আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করতে সহায়ক।
সর্বোপরি, আমার গবেষণা প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ এবং কার্যকর করতে সহায়ক হচ্ছে।
গবেষনা কাজের কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?
সম্প্রতি বিইউবিটি-এর চতুর্থ বর্ষের দুটি দল খুবই মর্যাদাপূর্ণ উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে, যার একটি Q1 এবং অন্যটি Q4 জার্নালে, উভয়ই IEEE এবং Wiley-এর অধীনে। তারা আমার তত্ত্বাবধানে কাজ করেছে এবং তাদের গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়েই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। তাদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
আমি মনে করি একজন বিজ্ঞানীর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ থাকা প্রয়োজন। প্রথমত, জিজ্ঞাসু মনোভাব বা কৌতূহল থাকতে হবে, যা তাকে সবসময় নতুন জ্ঞান খুঁজে বের করতে এবং অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উদ্বুদ্ধ করবে। দ্বিতীয়ত, অধ্যবসায় বা ধৈর্য থাকা প্রয়োজন, কারণ গবেষণার পথে অনেক চ্যালেঞ্জ এবং ব্যর্থতা আসতে পারে, যা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়।
তৃতীয়ত, একজন বিজ্ঞানীর মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তা করার ক্ষমতা থাকা জরুরি, যা তাকে ডেটা এবং তথ্যের গভীর বিশ্লেষণ করতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। এছাড়াও, সৃজনশীলতা একটি অপরিহার্য গুণ, যা তাকে নতুন এবং অভিনব সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। সর্বোপরি, একজন বিজ্ঞানীকে সততা এবং নৈতিকতার সাথে কাজ করতে হবে, যাতে তার কাজ সমাজের জন্য উপকারী এবং নির্ভরযোগ্য হয়।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য আমার বার্তা হলো, বিজ্ঞানে কাজ করতে হলে কৌতূহল, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রম সবসময় আপনাকে সামনে নিয়ে যাবে। বিজ্ঞান একটি এমন ক্ষেত্র, যেখানে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ধৈর্য ও মনোযোগের প্রয়োজন হয়। ব্যর্থতা এখানে স্বাভাবিক, কিন্তু সেই ব্যর্থতা থেকেই শিখতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে।
তোমাদের সামনে অসীম সুযোগ রয়েছে, বিশেষত বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি ও তথ্যের সহজলভ্যতার কারণে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন করার জন্য সবসময় আগ্রহী থাকো, নিজের দক্ষতা উন্নত করো এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় নিজেকে যুক্ত করতে চেষ্টা করো।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তোমার কাজের প্রতি বিশ্বাস রাখো এবং সৎ থেকে কাজ করো, যাতে তোমার সাফল্য শুধু তোমার জন্য নয়, দেশ ও সমাজের জন্যও গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
আপনার লিংকডইন সাইটের ওয়েবএড্রেস
https://www.linkedin.com/in/mohsinkabir-ai
আপনার ওয়েবসাইট, গবেষনাকাজের লিংক ইত্যাদি
আমরা বিজ্ঞানী মুহাম্মদ মহসিন কাবির এর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
Leave a comment