উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগসাক্ষাৎকার

কঠিন পথ পেরিয়ে শিখরে: অধ্যাপক ইসমাইল মো. মফিজুর রহমানের অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা!

Share
Share

যদি কেউ বলে, সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে হলে সংগ্রাম এবং অধ্যবসায়ের দরকার, তবে অধ্যাপক ইসমাইল মো. মফিজুর রহমান সেই কথার জীবন্ত উদাহরণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন তরুণ শিক্ষক থেকে শুরু করে জাপানের ফুকুশিমা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা পর্যন্ত, তার প্রতিটি ধাপই সংগ্রাম, পরিশ্রম এবং জ্ঞানার্জনের গল্প বলে।

প্রথম আলোর দিকে যাত্রা:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের একজন প্রভাষক হিসেবে ইসমাইল স্যার তার কর্মজীবনের সূচনা করেন। ২০০২ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি রসায়ন বিভাগে এবং ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফলিত রসায়ন ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কর্মরত ছিলেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে শিক্ষা ও গবেষণায় নিজেকে নিযুক্ত রেখেছিলেন। তবে এখানেই তার যাত্রার সমাপ্তি ঘটেনি। তার লক্ষ্য ছিল উচ্চতর গবেষণা এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে পরিবেশগত সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা। এই লক্ষ্যে তিনি ২০১১ সালে জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশগত বিশ্লেষণীয় রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

জাপানে অধ্যাপনার দীর্ঘ সফর:


২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের পর, অধ্যাপক ইসমাইল জাপানের ফুকুশিমা ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন। সেখানকার ইনস্টিটিউট অফ এনভায়রনমেন্টাল রেডিওঅ্যাক্টিভিটিতে তিনি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তার দক্ষতা এবং নিষ্ঠার কারণে ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি, তিনি ২০১৫ সালের মার্চ থেকে জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন কোলাবোরেটিভ অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে তিনি ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ভিজিটিং রিসার্চ প্রফেসর এবং ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত জেএসপিএস পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হিসেবেও কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন।

তার গবেষণা কার্যক্রমের ব্যাপ্তি এখানেই শেষ নয়। ২০০৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি জাপানের টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (বর্তমানে ‘সায়েন্স টোকিও’) টোকিওটেক-ইউনেস্কো রিসার্চ ফেলো হিসেবে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।

শিক্ষক এবং গবেষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরুর আগে, ২০০১ সালের মে থেকে ২০০২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাজ্যের কোটস পিএলসির অন্তর্গত কোটস বাংলাদেশ লিমিটেডে কাজ করেছেন।

অধ্যাপক ইসমাইল ২০১১ সালে কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশগত বিশ্লেষণীয় রসায়নে পিএইচডি অর্জন করেন। এর পাশাপাশি তিনি ২০০৫ সালে টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে পরিবেশ বিষয়ে ডিপ্লোমা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়নে এমএসসি এবং রসায়নে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

বর্তমানে তিনি তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে জাপানের ফুকুশিমা শহরে বসবাস করছেন। পেশায় তার স্ত্রীও একজন গবেষক, যিনি ইসমাইল স্যারের সাফল্যের নিরব সঙ্গী।

গবেষণার ক্ষেত্র ও লক্ষ্য:

অধ্যাপক ইসমাইল মো. মফিজুর রহমান পরিবেশ দূষণ এবং পুনরুদ্ধারের ওপর কাজ করছেন। তার গবেষণা বিশেষ করে পরিবেশ দূষণকারী পদার্থের আচরণ এবং জীবমণ্ডলে তাদের প্রভাবের ওপর কেন্দ্রীভূত। টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং শক্তি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তার কাজ ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশনা দেবে। তিনি শিল্পক্ষেত্রে জৈব তরল মিশ্রণের সম্ভাব্য প্রয়োগ নিয়েও গবেষণা করছেন, যা প্রক্রিয়া প্রকৌশল নকশায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

তরুণ গবেষকদের জন্য পরামর্শ:

অধ্যাপক ইসমাইলের মতে, বাংলাদেশে গবেষণা করা অনেক সময় চ্যালেঞ্জের মতো মনে হতে পারে। তবে তার বার্তা স্পষ্ট: “নিজের উপর বিশ্বাস রাখো। প্রচুর বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ পড়ো এবং সীমিত সম্পদের মধ্যেও নতুন কিছু করার চেষ্টা করো। সঠিক পরিকল্পনা এবং অধ্যবসায়ই তোমাকে সাফল্য এনে দেবে।”

উদ্দীপনার গল্প:

একজন তরুণ শিক্ষক থেকে শুরু করে বৈশ্বিক গবেষণার নেতৃত্বে আসা পর্যন্ত, অধ্যাপক ইসমাইল মো. মফিজুর রহমানের যাত্রা আমাদের শেখায় যে, সঠিক লক্ষ্য, কঠোর পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি যে কোনো সীমাবদ্ধতাকে জয় করতে পারে।

তরুণ প্রজন্মের জন্য অধ্যাপক ইসমাইল একটি অনুপ্রেরণা। তার কর্মজীবন আমাদের দেখিয়ে দেয়, কীভাবে নিজের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখা সম্ভব।

যোগাযোগ করুন অধ্যাপক ইসমাইল মো. মফিজুর রহমানের সাথে:


ইমেইল:
[email protected]
লিংকডইন: https://www.linkedin.com/in/immrahman/
গবেষণা কাজ: https://www.ier.fukushima-u.ac.jp/en/about/staff/497

Rising Above Challenges: The Inspirational Journey of Professor Ismail Md. Mofizur Rahman!

If success is a testament to perseverance and dedication, then Professor Ismail Md. Mofizur Rahman is its living embodiment. From beginning as a young lecturer at the University of Chittagong to becoming a full professor at Fukushima University in Japan, his journey is a story of relentless hard work, resilience, and a passion for learning.

The First Steps Towards the Light:

Professor Ismail’s career began in 2002 as a lecturer in the Department of Chemistry at the University of Chittagong. For over a decade, from October 2002 to March 2012, he devoted himself to teaching and research in the Chemistry Department and then transitioned to the Department of Applied Chemistry and Chemical Engineering, where he served until September 2015. His time at the university was marked by his unwavering commitment to education and a vision for solving global environmental challenges.

But he didn’t stop there. With an eye on advanced research, he embarked on a transformative academic journey that led him to Kanazawa University in Japan. In 2011, he earned a Ph.D. in Environmental Analytical Chemistry, focusing on finding innovative solutions to pressing environmental problems.

A Long Journey in Academia in Japan:

After voluntarily retiring from the University of Chittagong in 2015, Professor Ismail took on a new challenge and joined Fukushima University in Japan. At its prestigious Institute of Environmental Radioactivity, he began his role as an Associate Professor, contributing to groundbreaking research in the field of environmental contamination and sustainability.

His dedication and expertise earned him a promotion to full Professor in April 2024, a milestone that underscores his significant contributions to academia and research. Alongside his responsibilities at Fukushima University, Professor Ismail has been serving as a Collaborative Professor at Kanazawa University since March 2015, further solidifying his ties with Japan’s academic community.

His impressive academic journey also includes earlier roles at Kanazawa University as a Visiting Research Professor (2014–2015) and a JSPS Postdoctoral Research Fellow (2012–2014). Even before that, from 2004 to 2005, he worked at Tokyo Institute of Technology (now Tokyo Science), where he pursued research as a UNESCO Fellow.

Educational Achievements:

Professor Ismail’s academic credentials are equally impressive. Along with his Ph.D. from Kanazawa University, he holds a diploma in Environmental Science from Tokyo Institute of Technology. He also earned his MSc in Applied Chemistry and BSc in Chemistry from the University of Chittagong, marking the foundation of his illustrious career.

Research Focus and Vision:

Currently residing in Fukushima with his wife and two children, Professor Ismail dedicates his life to addressing environmental challenges. His research revolves around the behavior of environmental pollutants and their impact on ecosystems. He is also pioneering sustainable waste management and energy-efficient technologies that hold the potential to transform industries.

Another critical area of his work focuses on the practical applications of organic liquid mixtures in industrial processes, opening new avenues in process engineering design. His innovative approaches continue to offer solutions to some of the most pressing environmental and industrial challenges of our time.

Advice to Aspiring Researchers:

To young researchers, Professor Ismail shares a clear and encouraging message:
“Believe in yourself. Read extensively and make the best out of the resources you have. Success comes with meticulous planning, persistence, and a passion for learning.”

A Source of Inspiration:

From a young lecturer to a global leader in research, Professor Ismail Md. Mofizur Rahman’s journey exemplifies how determination, hard work, and vision can overcome any obstacle. His story is a source of inspiration for young minds, demonstrating that even with limited resources, it is possible to achieve excellence and make a meaningful impact on the global stage.

Connect with Professor Ismail Md. Mofizur Rahman

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
সাক্ষাৎকার

কৌতূহল ও সহিষ্ণুতার এক সুর: অধ্যাপক ফারুক সাত্তারের যাত্রা!

একজন গবেষকের জন্য কৌতূহল হলো দিকনির্দেশক, আর সহিষ্ণুতা হলো সেই জ্বালানি যা...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

এআই এবং স্বাস্থ্যখাতে ড. ফারদিব আল ইসলামের অনুপ্রেরণাদায়ক যাত্রা!

খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ক্যাম্পাস প্রতিদিনই জ্ঞানের আলোয় আলোকিত...

সাক্ষাৎকার

গবেষণার মাধ্যমে জীবনমান বদলে দেওয়া: আশিকুর রহমানের গল্প!

যিনি ছোটবেলায় বিজ্ঞান নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ তিনি সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ...

সাক্ষাৎকার

ভবিষ্যৎ জ্বালানির স্বপ্নদ্রষ্টা: ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান!

Biggani.org গর্বিতভাবে উপস্থাপন করছে ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমানের একটি অনুপ্রেরণামূলক সাক্ষাৎকার। তাঁর...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভবিষ্যৎ নির্মাণে ড. আব্দুর রহিমের পথচলা!

বিজ্ঞানী.অর্গ সম্প্রতি কথা বলেছে ইনস্টিটিউট অফ এনার্জি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (IERD), বিসিএসআইআর-এ...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.