স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

পাখার শব্দে নাম যে পাখির

Share
Share

কোন পাখিকে পিছন দিকে উড়তে দেখেছেন কি ? আমাদের মধ্যে অনেকে যেমন চিত হয়ে জলে সাঁতার কাটতে পারেন, কোনদিন কোন পাখিকে দেখেছেন বাতাসে চিত হয়ে উড়তে ? ঈগল, বাজ ইত্যাদি পাখি মানুষকে এরোপ্লেন আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা জোগালেও ফড়িং, মৌমাছি ইত্যাদি পতঙ্গ মানুষকে হেলিকপ্টার আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল কারণ পাখিরা ওড়ার সময়ে ঐ পতঙ্গদের মত একই স্থানে ভেসে থাকতে পারে না। এক ধরনের পাখি আছে যারা বাতাসে এই সব ধরনের কসরত করতে পারে ! এই পাখি-সমাজের পুরুষেরা নারীদের মনোরঞ্জনের জন্য কখনও কখনও বাতাসে ভেসে থেকেই পেন্ডুলামের মত দোলে ! এই পাখি পিছন দিকে ওড়ার সময়ে মাথাটি পিছন দিকে না ঘুরিয়েও পিছনের সমস্ত কিছু পরিষ্কার দেখতে পায় তার মাথার দুপাশে থাকা দুটি চোখ ও মস্তিষ্কের বিশেষত্বের কারণে।

দক্ষিণ আমেরিকার পার্বত্য অরণ্যে সকালগুলোয় খুব ঠান্ডা পড়ে। কীট-পতঙ্গদের দেহের উষ্ণতা তাদের পরিপার্শ্ব দ্বারা নির্ধারিত হয় বলে অত ঠান্ডায় কীট-পতঙ্গরা এতটাই কাবু হয় যে তারা ফুলের সুধা (নেক্টার) সংগ্রহ করায় তৎপরতা দেখায় না। ফলে বিভিন্ন উদ্ভিদের পরাগ মিলনের মাধ্যমে বংশবিস্তারে বিপুল ঘাটতি দেখা দেয়। খুব সম্ভবত সেই কারণেই প্রকৃতি এই পাখির জন্ম দিয়েছিল যারা তাদের লম্বা সরু চঞ্চু ও লম্বা জিভের সাহায্যে সুধা শোষণ করে পেট ভরানোর জন্য ঐ ঠান্ডাতেও ফুল থেকে ফুলে উড়ে বেড়ায়।

এদের পাখাদুটি দেহের সাথে “কোটরসন্ধি” বা “বল অ্যান্ড সকেট জয়েন্ট” ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যুক্ত থাকে যেখানে দুটি কাঁধকে একশোআশি ডিগ্রী পর্যন্ত ঘোরানো যায়। তাই অন্যান্য পাখিদের মত শুধু উপর-নীচে নয় বরং সমস্ত দিকে এরা তাদের পাখাদুটি ঝাপটাতে পারে ! শুধু তাই নয়, ওড়ার সময়ে এরা লেজের পালকগুলিকে নাড়িয়ে বায়ুর ঘর্ষণজনিত বাধা অনায়াসেই কমাতে পারে। সেইজন্যই প্রয়োজনে পিছন দিকেও এরা উড়তে পারে। অনেক জনের ভিড়ে ফুল থেকে ফুলে খুব দ্রুত পৌঁছে সুধা পান করার সময়ে পিছন দিকে ওড়ার সামর্থ্যটি এদের খুব কাজে লাগে।

নির্বাচিত ফুল থেকে সুধা শোষণ করায় যাতে সুবিধা হয় সেইজন্যই প্রকৃতি এই পাখিদেরকে বাতাসের একই স্থানে অনেকক্ষণ ভেসে থাকার সামর্থ্য দিয়েছে। বাতাসের একই স্থানে অনেকক্ষণ ভেসে থাকার সময়ে পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে প্রশমিত করার জন্য এদেরকে উচ্চ হারে পাখা ঝাপটাতে হয় – এক সেকেন্ডে সবচেয়ে বেশি আশি বার ! এদের দেহের বিপাকীয় হার খুব বেশি যা এদের হৃৎপিন্ডকে এক মিনিটে হাজারেরও বেশি সংখ্যায় স্পন্দিত হতে শক্তি জোগায় ! ফলে হৃৎপিন্ড ডানার পেশীগুলিতে উচ্চ হারে রক্ত সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। তাই এরা সহজেই উচ্চ হারে পাখা ঝাপটাতে পারে।

এরা প্রত্যেক পনেরো মিলিসেকেন্ডে দশ ফোঁটা হারে সুধা শোষণ করতে পারে। এই পাখি নিজের ওজনের অর্ধেক পরিমাণ সুধা সারাদিনে বিভিন্ন ফুল থেকে শোষণ করে। এদের স্মৃতিশক্তি মৌমাছির মতই প্রখর। কোন অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ফুটে থাকা অজস্র ফুলের মধ্যে কোন্ ফুলে বা ফুলগুলিতে বেশী পরিমাণে সুধা পাওয়া যায় তা একবার জেনে গেলে এত ফুলের ভিড়ে সেই ফুলটিকে বা ফুলগুলিকে খুঁজে নিতে এদের অসুবিধা হয় না।

আকারে অনেক কীট-পতঙ্গের সাথে তুলনীয় এই পাখিরাই পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হিসাবে পরিচিত – এদের প্রজাতিগুলির মধ্যে যারা আকারে সবচেয়ে ছোট তাদের চঞ্চু থেকে লেজ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য মাত্র পাঁচ সেন্টিমিটার ! এরা খুব দ্রুত পাখা ঝাপটায় বলে পাখার ঊর্ধতল ও নিম্মতলে বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য একরকমের বিশেষ শব্দ উৎপন্ন হয়। এই ধরনের শব্দকে ইংরাজী ভাষায় বলা হয় “হামিং”। তাই এই পাখিরা “হামিং বার্ড” নামে খ্যাত।

Share
Written by
Diganta Paul -

জন্ম: ১৯৮৯ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলায়। শিক্ষা: প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা হাওড়া জিলা স্কুলে। এরপর কলকাতার "সেইন্ট থমাস্ কলেজ অফ এঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি" কলেজ থেকে বৈদ্যুতিক কারিগরিবিদ্যা নিয়ে প্রযুক্তিতে স্নাতক (B.Tech. in Electrical Engineering)। পেশা: তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদার (IT Professional)। নেশা: বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা। এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞান প্রবন্ধ, বিজ্ঞান নিবন্ধ, কল্পবিজ্ঞান ভিত্তিক গল্প, কল্পবিজ্ঞান কবিতা, গাণিতিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান নাটক, ও বিজ্ঞান কবিতা লেখা। প্রসার ভারতীর একজন বিজ্ঞান-কথিকা লেখক ও শিল্পী। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি রৌপ্য পদক। প্রকাশিত বই: উদ্দীপনার খেলাঘর। যোগাযোগ: [email protected]

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
চিকিৎসা বিদ্যাস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

আবহাওয়া বদল আর মাইগ্রেন: মাথাব্যথার সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক কী?

হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন - যেমন তাপমাত্রার পরিবর্তন, ব্যারোমেট্রিক চাপের হ্রাস, বা দূষণ...

চিকিৎসা বিদ্যাস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

বয়স ধীর বা দ্রুত বাড়ে কেন? রাজনীতি ও বৈষম্যের অদৃশ্য প্রভাব

বিভিন্ন দেশে বার্ধক্যের গতি কীভাবে ভিন্ন হয় এবং রাজনীতি, বৈষম্য এবং সামাজিক...

চিকিৎসা বিদ্যাস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

ডিজিটাল সেতুবন্ধন: গ্রাম থেকে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের যাত্রা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, টেলিমেডিসিন এবং উইকিমেডিক্সের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে গ্রামীণ...

পরিবেশ ও পৃথিবীস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ও নীল অর্থনীতি।

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য এবং নীল অর্থনীতি অন্বেষণ করুন — সুন্দরবন এবং সামুদ্রিক সম্পদ...

চিকিৎসা বিদ্যাস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

গাঁজনের জাদু: ফার্মান্টেড খাবারের গুণাগুণ ও গুরত্ব

দই, কিমচি এবং রুটির মতো গাঁজানো খাবারের স্বাস্থ্য উপকারিতা, প্রস্তুতি প্রক্রিয়া এবং...

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org