ইতিহাসের এই দিনেজেনেটিকস

৮ লক্ষ বছর আগের মানবজাতির বেঁচে থাকার গল্প যখন পৃথিবীতে আমরা ছিলাম প্রায় বিলুপ্তির পথে

Share
Share

ভাবুন তো, একদিন যদি খবর আসে— পৃথিবীতে আপনার মতো মানুষ বেঁচে আছে মাত্র হাজার খানেক! বাকি সবাই হারিয়ে গেছে। এমন এক সময় সত্যিই ঘটেছিল আমাদের বহু দূরের পূর্বপুরুষদের জীবনে— প্রায় ৮ থেকে ৯ লক্ষ বছর আগে।

সংকটের শুরু

পৃথিবীর জলবায়ু তখন ছিল ভয়ঙ্কর রকম অস্থির। তাপমাত্রা হঠাৎ কমে বরফে ঢেকে যাচ্ছিল বিশাল অঞ্চল, আবার কোথাও দীর্ঘ খরা। নদী শুকিয়ে যাচ্ছিল, বনাঞ্চল উধাও হচ্ছিল। খাদ্য সংকট এতটাই তীব্র ছিল যে, তখনকার বড় বড় প্রাণী— যেমন ম্যামথ, মাস্টোডন বা দৈত্যাকার স্লথ— বিলুপ্ত হতে শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতি মানুষদের জন্যও ছিল এক দুঃস্বপ্ন।

জনসংখ্যার পতন

যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং চীনের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, এই সময় মানব পূর্বপুরুষদের জনসংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ১,২৮০ জন প্রজননক্ষম ব্যক্তিতে। অর্থাৎ পুরো পৃথিবীতে হাতেগোনা কয়েকশো পরিবারের মতো মানুষই তখন টিকে ছিল!
এই ঘটনাকে বলা হয় “Ancestral Bottleneck”— যেমন বোতলের গলার মতো সরু হয়ে যায় একটি বড় জনসংখ্যা, ঠিক তেমনই কমে গিয়েছিল মানুষের সংখ্যা।

এত পুরনো ঘটনা জানা গেল কীভাবে?

বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন FitCoal নামের এক নতুন পদ্ধতি (পুরো নাম fast infinitesimal time coalescent process)। সহজভাবে বললে, এটি বর্তমান মানুষের DNA দেখে অতীতে কতজন মানুষ ছিল, সেটা আন্দাজ করতে পারে— যেমন গাছের কাণ্ড দেখে বোঝা যায় কত বছরের পুরনো, ঠিক তেমন।
গবেষকরা ৩,১৫৪ জন আধুনিক মানুষের DNA বিশ্লেষণ করে এই সংকটের প্রমাণ পেয়েছেন।

বেঁচে থাকার লড়াই

প্রশ্ন জাগে— এই ১,২৮০ জন মানুষ কোথায় ছিলেন? কীভাবে বেঁচে ছিলেন?
সম্ভবত তারা আগুন ব্যবহার শেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, যা ঠান্ডা ও খাবার রান্নায় সাহায্য করেছিল। সময়ের সাথে জলবায়ুও কিছুটা সহনীয় হতে শুরু করে, আর ধীরে ধীরে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

জিনগত পরিবর্তন ও নতুন প্রজাতি

এই দীর্ঘ সংকট মানুষের জিনের বৈচিত্র্যের প্রায় ৬৫.৮৫% কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু একই সঙ্গে বড় এক পরিবর্তনের পথও খুলে দেয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই সময়েই মানুষের ক্রোমোজোম ২ তৈরি হয়— দুটি পূর্বপুরুষ ক্রোমোজোম মিলিত হয়ে।
এটি হয়তো আধুনিক মানুষ (Homo sapiens), নিঅ্যান্ডারথাল এবং ডেনিসোভানদের শেষ যৌথ পূর্বপুরুষের সময়কালকে নির্দেশ করে।

ইতিহাসের শিক্ষা

এই গবেষণা আমাদের শেখায়— মানবজাতি এক সময় প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল, তবুও টিকে থেকেছে। আজ আমরা পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশে ছড়িয়ে আছি, কিন্তু সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়— জলবায়ু ও পরিবেশ আমাদের অস্তিত্বের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
ইতিহাসের এই দিনেসাধারণ বিজ্ঞান

বয়সের হদিস: প্রাচীন জিনিসের বয়স কীভাবে নির্ধারণ করেন বিজ্ঞানীরা?

সহজ বাংলা ভাষায় কার্বন-১৪, পটাসিয়াম-আর্গন এবং অন্যান্য ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা...

জেনেটিকসবায়োটেকনলজি

ক্রিসপারের জন্মদিন: বৈপ্লবিক এক প্রযুক্তির এক দশক পূর্তি

জিন সম্পাদনায় CRISPR প্রযুক্তির ১০ বছরের যাত্রা আবিষ্কার করুন। বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী...

জেনেটিকসস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

নতুন যুগের দৃষ্টির আলো: এক শিশুর চোখে ফিরে এলো আলো জিন থেরাপির মাধ্যমে

জন্মগত অন্ধ শিশু জেস ব্রডবিনের আংশিক দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার যুগান্তকারী জিন থেরাপি...

জেনেটিকসবায়োটেকনলজি

ডিএনএ: আমাদের জীবনের রহস্যভাণ্ডার

ডিএনএর অবিশ্বাস্য রহস্য বাংলায় আবিষ্কার করুন — এর আবিষ্কার থেকে শুরু করে...

ইতিহাসের এই দিনেবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

একটি উদ্ভাবন সারা দুনিয়া বদলে দিতে পারে

আবিষ্কার করুন কিভাবে একটি বিপ্লবী আবিষ্কার—যেমন বাষ্পীয় ইঞ্জিন—বিশ্বকে রূপান্তরিত করেছে। জানুন কিভাবে...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.