নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
যোগাযোগ: biggani.org
বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অসাধারণ সাফল্যের নাম এখন জেস ব্রডবিন। মাত্র ছয় বছর বয়সী এই শিশুটি জন্ম থেকেই অন্ধ ছিলেন, একটি বিরল জেনেটিক রোগ Leber Congenital Amaurosis (LCA)-এর কারণে। এই রোগটি AIPL1 নামক একটি জিনের ত্রুটির ফলে হয়, যা দৃষ্টিশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় রেটিনাল কোষগুলোর বিকাশ ব্যাহত করে। এর ফলে শিশুরা জন্ম থেকেই অন্ধ বা আইনগতভাবে অন্ধ থাকে।
কিন্তু ২০২০ সালে লন্ডনের Great Ormond Street Hospital এবং Moorfields Eye Hospital-এর চিকিৎসক দল এক যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করেন জেসের উপর—জিন থেরাপি। এই চিকিৎসার মাধ্যমে তার চোখে আবার ফিরে এসেছে আলো, ফিরে এসেছে খেলনা চেনার ক্ষমতা, এবং এমনকি নিজেই চলাফেরা করার আত্মবিশ্বাস।
কীভাবে কাজ করে এই জিন থেরাপি?
জিন থেরাপি এমন এক আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত বা কাজ না করা জিনের পরিবর্তে সুস্থ জিন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। জেসের ক্ষেত্রে, চিকিৎসকরা একটি keyhole surgery (অর্থাৎ খুব ছোট ছিদ্র করে অস্ত্রোপচার) করে চোখের রেটিনায় AIPL1 জিনের স্বাস্থ্যবান কপি ইনজেকশন দিয়ে পৌঁছে দেন।
এই জিনটিকে চোখের ভিতরে ঢুকানোর জন্য একটি ভাইরাসকে “পরিবহনযান” (vector) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত harmless (অক্ষতিকারী) ভাইরাসকে গবেষণাগারে সংশোধন করে, তার ভিতরে জিন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, এবং সেটি রেটিনার কোষে গিয়ে সঠিক জিনটি কাজ করতে সাহায্য করে। এতে করে রেটিনাল কোষগুলো আবার আলো ধরার ক্ষমতা ফিরে পায়।
চিকিৎসার পর কী হয়েছিল?
অস্ত্রোপচারের এক মাস পরেই জেস হালকা আলোয় সাড়া দিতে শুরু করে। এর পর ধীরে ধীরে খেলনা চেনা, ঘরের মধ্যে চলাফেরা ইত্যাদিতে উন্নতি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা প্রথমে শুধু একটি চোখে এই চিকিৎসা করেন যাতে করে এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা যায়। আরেকটি চোখে কোনো চিকিৎসা না করা হয়েছিল তুলনার জন্য। দেখা গেছে, অচিকিত্সিত চোখ ধীরে ধীরে আরও খারাপ হতে থাকে, কিন্তু চিকিৎসিত চোখে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে।
এই সাফল্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
এই চিকিৎসা পদ্ধতির সাফল্যকে The Lancet মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে এবং এটি বিশ্বের প্রথম কার্যকর জিন থেরাপি যা শৈশবকালীন অন্ধত্ব-এর সবচেয়ে মারাত্মক রূপের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য জেনেটিক চোখের রোগের ক্ষেত্রেও চিকিৎসার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।
এই প্রকল্পটি পরিচালনা করেছে University College London Institute of Ophthalmology, এবং ইতিমধ্যে আরও কিছু শিশুদের উপর এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এই ধরনের জিন থেরাপি কেবল চোখের রোগ নয়, বরং বিভিন্ন জেনেটিক রোগের ক্ষেত্রেও আশার আলো দেখাচ্ছে। যেমন—Muscular Dystrophy, Cystic Fibrosis, Hemophilia প্রভৃতি। তবে এখনও এই চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল এবং সীমিতভাবে করা হয়। তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এটি আরও সুলভ ও সহজলভ্য হবে।
শেষ কথা
জেস ব্রডবিনের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া শুধু এক শিশুর জীবনে আলো ফেরানো নয়, এটি ভবিষ্যতের লক্ষ লক্ষ শিশুর জন্য আশার আলো। জিন থেরাপি আমাদের দেখাচ্ছে—বিজ্ঞান কতটা অগ্রসর হয়েছে, এবং মানব সভ্যতা কীভাবে নিজস্ব সীমা অতিক্রম করে নতুন পৃথিবীর দুয়ার খুলে দিচ্ছে।
আপনি যদি শিশুদের জন্য আধুনিক চিকিৎসা ও জিন থেরাপি সম্পর্কে আরও জানতে চান, কিংবা এই বিষয়ে সচেতনতামূলক উদ্যোগে অংশ নিতে চান, তাহলে biggani.org-এ যোগাযোগ করুন।
Leave a comment