একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি দেখলেন, আকাশে উড়ছে শত শত স্টারলিংক স্যাটেলাইট, রাস্তার প্রতিটি গাড়ি বৈদ্যুতিক, আপনার ফোনে ইন্টারনেট আসছে তারবিহীন মহাকাশ থেকে, আর ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস ব্যবহার করে মানুষ প্রযুক্তির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করছে।
এটা কোনো সাই-ফাই সিনেমার কল্পনা নয়, বরং এক বাস্তবতা যা গড়ে তুলছেন একজন মানুষ— এলন মাস্ক।
মাস্কের সাম্রাজ্য
এলন মাস্ক শুধু একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা নন; তিনি একাধারে মহাকাশ, পরিবহন, যোগাযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), নবায়নযোগ্য জ্বালানি—সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর ওপর তার একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মহাকাশ: SpaceX এখন বেসরকারি মহাকাশ অভিযানের শীর্ষে, এমনকি NASA-ও তাদের ওপর নির্ভরশীল।
বিদ্যুৎচালিত যানবাহন ও নবায়নযোগ্য শক্তি: Tesla বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রিক গাড়ি শিল্পে বিপ্লব এনেছে।
মস্তিষ্ক-কম্পিউটার সংযোগ: Neuralink মানব মস্তিষ্ক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে কাজ করছে।
নগর উন্নয়ন: The Boring Company মাটির নিচ দিয়ে সুপারফাস্ট ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক গড়ার পরিকল্পনা করছে।
সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ: X (সাবেক টুইটার) কেনার পর তিনি হয়ে উঠেছেন ডিজিটাল যোগাযোগের কেন্দ্রীয় চরিত্র।
ইন্টারনেট: Starlink ইতোমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সরবরাহ করছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: xAI একটি উন্নত AI তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যা বর্তমান AI মডেলগুলোর বিকল্প হবে।
প্রযুক্তির ঈশ্বর না একক ক্ষমতার হুমকি?
একজন ব্যক্তি এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও প্রযুক্তি খাতকে পরিচালনা করলে সেটি কি সমাজের জন্য ভালো, নাকি এটি এক ধরনের একক আধিপত্যের সংকেত?
সাধারণত, এমন শক্তিগুলো সরকারের হাতে থাকে, অথবা বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিন্তু এলন মাস্ক প্রায় একাই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। এর ফলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে:
গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের জায়গায় একক সিদ্ধান্ত: তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির গতিপথ বদলে যেতে পারে।
নিয়ন্ত্রণহীন শক্তি: একজন ধনী উদ্যোক্তার হাতে এত শক্তি থাকলে তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কারা দাঁড়াতে পারবে?
ভবিষ্যতের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ: AI, স্পেস ট্র্যাভেল, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, এমনকি মানুষের মস্তিষ্কের ওপরও তার নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে।
উন্নতির ইঞ্জিন নাকি অনিয়ন্ত্রিত আধিপত্য?
অনেকে বলেন, মাস্ক আধুনিক প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটাচ্ছেন এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া এসব সম্ভব হতো না। কিন্তু অন্যদিকে, এক ব্যক্তি বা একটি কোম্পানি যদি এতগুলো সেক্টরের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রাখে, তাহলে সেটা গণতন্ত্র, নিরাপত্তা ও স্বাধীন প্রতিযোগিতার জন্য হুমকি হতে পারে।
কেউ কেউ মনে করেন, ভবিষ্যৎ গঠনে মাস্কের মতো উদ্যোগী মানুষ দরকার। আবার অনেকেই শঙ্কিত, কারণ এত শক্তি এক ব্যক্তির হাতে থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।
আপনি কী ভাবেন? এলন মাস্ক কি আধুনিক প্রযুক্তির ত্রাণকর্তা, নাকি ভবিষ্যতের একক ক্ষমতার প্রতীক
Leave a comment