অধ্যাপক আবিদুর রহমান বর্তমানে জাপানের ইওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এডজাংকট অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিশ্বের শীর্ষ ২% বিজ্ঞানীদের একজন হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এলসেভিয়ারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমরা বিজ্ঞানী অর্গ তার বৈজ্ঞানিক সফলতায় গর্বিত। তার উদ্ভিদের তাপমাত্রাজনিত এবং অন্যান্য পরিবেশগত স্ট্রেসের প্রভাব, উদ্ভিদের হরমোন নিয়ন্ত্রণের জটিল প্রক্রিয়া, এবং ফাইটোরিমিডিয়েশন প্রযুক্তির মাধ্যমে দূষিত মাটি পুনর্সংস্কারের ওপর গবেষণা করেন।
ফাইটোরিমিডিয়েশন হলো একটি স্বল্প খরচে এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, যা উদ্ভিদ ব্যবহার করে মাটি থেকে ভারী ধাতু এবং অন্যান্য দূষণ দূর করে। অধ্যাপক রহমানের গবেষণা দল নতুন ধাতু পরিবহনকারী প্রোটিন খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছে, যা বিশেষ ধাতুগুলোকে উদ্ভিদের মাধ্যমে মাটি থেকে দূর করতে সহায়ক হবে। ইতোমধ্যে তারা দুটি সিজিয়াম পরিবহনকারী প্রোটিন আবিষ্কার করেছেন, যা দূষণমুক্ত কৃষি পদ্ধতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
আমরা অধ্যাপক আবিদুর রহমানের সাথে আমাদের ভিডিও সাক্ষাৎকারে তার জীবন এবং গবেষণা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছি। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রির উপর পড়াশোনা করার পরে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়। তিনি তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি-তে গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত হন। পরবর্তিতে তিনি জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য যান, যেখানে তিনি উদ্ভিদ গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তার পোস্টডক্টরাল গবেষণা তিনি আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়, আমহার্স্টে সম্পন্ন করেন।
ইওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আবিদুর রহমান তার নিজস্ব গবেষণাগার পরিচালনা করছেন, যেখানে উদ্ভিদের পরিবেশগত সহনশীলতা, পরিবেশ বান্ধব হার্বিসাইড, এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধি সম্পর্কিত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। হার্বিসাইড এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা উদ্ভিদের অপ্রয়োজনীয় বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে, এবং কৃষিক্ষেত্রে এর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক রহমানের নেতৃত্বে ইওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবনী এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তির বিকাশ ঘটছে, যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তার গবেষণার মাধ্যমে তাপমাত্রা সহনশীল উদ্ভিদ প্রজাতি তৈরি এবং পরিবেশবান্ধব কীটনাশক বিকাশে ভবিষ্যৎ কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটতে পারে।
অধ্যাপক রহমান নতুন গবেষকদের উপদেশ দিয়েছেন, যারা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী, যে ভালো একাডেমিক ফলাফল রাখা জরুরি এবং উচ্চশিক্ষার জন্য গবেষকদের সাথে যোগাযোগ করার আগে সংশ্লিষ্ট প্রফেসরের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তারপর আবেদন করা উচিত। তিনি বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান GLOBAL NETWORK OF BANGLADESHI BIOTECHNOLOGISTS, এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। এই সংস্থাটি গবেষণা অনুদান প্রদান, অনলাইন সেমিনার আয়োজন, আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন, একাডেমিক ও গবেষণা কৃতিত্বের জন্য বিজ্ঞানীদের পুরস্কার প্রদান এবং তাদের কৃতিত্বের খবর তুলে ধরার মাধ্যমে জীববিজ্ঞানের সকল শাখার কার্যক্রম প্রচার করে। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: https://gnobb.org/
ধন্যবাদ অধ্যাপক আবিদুর রহমান আমাদের মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য। তার পুরো সাক্ষাৎকারটি দেখতে আমাদের ভিডিওটি দেখুন।
Leave a comment