গবেষণায় হাতে খড়ি

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ: বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা!

Share
Share

প্রফেসর- ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন

ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ এবং বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ভারত ও অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশে স্কলারশিপ প্রাপ্তির সংখ্যা এখনও অনেক কম। ২০২৩ সালে ভারতে ৩ লাখ ৩৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী আমেরিকা গিয়ে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন, তবে বাংলাদেশের সংখ্যাটি ছিল মাত্র ১৮ হাজার। এই পরিসংখ্যান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, যে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার পরিসর ব্যাপক হলেও, এখনও যথেষ্ট সুযোগ কাজে লাগানো হয়নি।

এখানে মূল বিষয় হলো—গবেষণা, পরিকল্পনা, সরকারী উদ্যোগ এবং শিক্ষকদের দায়িত্বের বিষয়টি। যদি বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন, তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আমেরিকায় ১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে, এমনকি অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতেও।

১. সরকারি উদ্যোগ এবং স্কলারশিপের সুযোগ:

যখন কোনও দেশ বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য তার ছাত্রদের সাহায্য করে, তখন তা দেশটির বৈদেশিক নীতি, অর্থনীতি এবং শিক্ষা খাতের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের উদাহরণটি যদি দেখি, ভারতের সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশে শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রাম চালু করেছে, যার ফলে তাদের শিক্ষার্থীরা ভালো স্কলারশিপ পেয়ে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে।

বাংলাদেশেও সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে বিদেশি স্কলারশিপের সুযোগ বাড়ানো সম্ভব। সরকারের উচিত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গঠন করা, স্কলারশিপের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো, এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারকে আরও নির্দিষ্ট স্কলারশিপ ফান্ড তৈরি করতে হবে এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিশেষ নজর দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা সঠিক গবেষণায় অংশ নিতে পারে এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষার্থীদের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গবেষণা এবং একাডেমিক সংযোগ বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

২. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচেষ্টা:

যতটা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি উদ্যোগ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি নিজেদের শিক্ষার্থীদের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের জন্য প্রস্তাবিত কোর্স, গবেষণা বা সহায়ক প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারে, তবে শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে আরও দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। বিশেষভাবে গবেষণা সহযোগিতার মাধ্যমে এবং স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু করে, শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে আন্তর্জাতিক মানের কোর্সগুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ল্যাব, জার্নাল পাবলিকেশন, এবং আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গবেষণা দক্ষতা বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেতে হলে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় দক্ষতা এবং একাডেমিক প্রস্তুতি জরুরি।

৩. শিক্ষকদের ভূমিকা:

বাংলাদেশের শিক্ষকরা যদি তাদের শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষার মানে আগ্রহী করে তোলেন এবং গবেষণা, সৃজনশীলতা এবং আত্মবিশ্বাসী চিন্তা-ভাবনা তৈরি করেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের বিদেশি স্কলারশিপে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

শিক্ষকরা যদি তাদের পাঠদান পদ্ধতিতে উন্নতি আনেন, নতুন গবেষণার কৌশল শিখান এবং শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করেন, তবে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি সক্ষম হবে। এছাড়া, শিক্ষকরা যদি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে মেলামেশা এবং সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন, তবে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণা করবেন এবং তাদের আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত করার সুযোগ দেবেন, তখন তারা শুধু নিজের দেশের জন্য গর্বের বিষয় সৃষ্টি করবেন, বরং সেই গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নিজের পরিচিতি তৈরি করতে পারবেন।

৪. বড় স্বপ্ন দেখা এবং সাহসী পরিকল্পনা নেওয়া:

বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বড় স্বপ্ন দেখার অভাব রয়েছে। তবে যারা বড় স্বপ্ন দেখে এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করে, তাদের সফলতা অর্জন সম্ভব। ভারতীয় শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই বিদেশে স্কলারশিপে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সাফল্য পেয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরও সেই পথে হাঁটতে হবে।

বিদেশে পড়াশোনার জন্য প্রস্তুতির সময়টা দীর্ঘ হলেও, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য। সেজন্য সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসী মনোভাবই শিক্ষার্থীদের সফল করতে পারে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আন্তর্জাতিক সংযোগ:

যত বেশি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরি করা হবে, তত বেশি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে স্কলারশিপ পাবে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণা পরিবেশ তৈরি করে এবং বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে, তবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথ গবেষণার সুযোগ এবং স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু করা, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

উপসংহার:

বর্তমানে, ২০২৩ সালে যখন ভারত থেকে ৩ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আমেরিকায় স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশের মাত্র ১৮ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছে। তবে, সরকারের উদ্যোগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচেষ্টা এবং শিক্ষকদের সহায়তায় এই সংখ্যা অল্প সময়ের মধ্যে ১ লাখ হতে পারে। এজন্য সঠিক পরিকল্পনা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষকরা যদি তাদের দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি আরও অনেক বেশি স্কলারশিপের সুযোগ সৃষ্টি করে, তবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিশ্বদরবারে নিজের স্থান করে নিতে সক্ষম হবে।

বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–https://www.facebook.com/share/p/19ZQT333TU/

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
গবেষণায় হাতে খড়িপদার্থবিদ্যা

বই অধ্যায়ের মতো একটি অনুসন্ধানমূলক বাংলা প্রবন্ধপরমাণুর স্মৃতি: এক নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের রোমাঞ্চকর যাত্রা

"পারমাণবিক স্মৃতি" সম্পর্কে ২০২৫ সালের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগান্তকারী গবেষণা আবিষ্কার করুন, যেখানে...

গবেষণায় হাতে খড়ি

কী নিয়ে পড়বো? বুঝতে পারছি না

একজন শিক্ষার্থীর চাপ, বিভ্রান্তি এবং প্রত্যাশার সাথে লড়াই এবং অবশেষে কীভাবে সে...

গবেষণায় হাতে খড়ি

AI দিয়ে লেখা কি বৈজ্ঞানিক চুরি?

একাডেমিক লেখালেখিতে AI ব্যবহার কি চুরি? নীতিশাস্ত্র, বাস্তবতা এবং একাডেমিক অসদাচরণের শিকার...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগগবেষণায় হাতে খড়ি

রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশের জন্য উপযুক্ত জার্নাল কীভাবে নির্বাচন করবেন?

আপনার গবেষণা প্রবন্ধের জন্য সঠিক জার্নাল কীভাবে নির্বাচন করবেন তা শিখুন। এই...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগগবেষণায় হাতে খড়ি

কীভাবে হাই কোয়ালিটি জার্নালে গবেষণাপত্র পাবলিশ করবেন?

বিশ্বখ্যাত জার্নাল সম্পাদকদের কাছ থেকে বিশেষজ্ঞ টিপস এবং বিনামূল্যে অনলাইন কোর্সগুলি আবিষ্কার...

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org