🗞️ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
📅 প্রকাশিত: ৭ জুলাই ২০২৫
✍️ নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
📩 যোগাযোগ: biggani.org
চীনের বিখ্যাত ইয়াংজে নদীর তলদেশে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু অদ্ভুত ‘জীব’। দেখলে মনে হবে মাছ, কিন্তু আসলে তারা জীবন্ত নয়—তারা হচ্ছে এআই প্রযুক্তিতে চালিত অত্যাধুনিক বায়োনিক রোবট মাছ।
চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন এই আশ্চর্য যন্ত্রযান, যারা পানির গুণগত মান বিশ্লেষণ, দূষণ শনাক্তকরণ ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। প্রযুক্তিবিদদের মতে, এটি হতে চলেছে পরিবেশ বিজ্ঞান ও রোবোটিক্সের এক যুগান্তকারী সংযোজন।
দেখতে মাছ, কিন্তু ভেতরে প্রযুক্তির জটিল সমাহার
প্রায় ৫৩ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই রোবট মাছ দেখতে পুরোপুরি আসল মাছের মতো। মাথা ও লেজে দুটি চলনক্ষম জয়েন্ট থাকায় এরা পানির মধ্যে স্বাভাবিক মাছের মতোই চলাফেরা করতে পারে। তবে বাইরের মাছ-মতো চেহারার ভেতর লুকিয়ে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), সেন্সর, এলইডি আলো এবং উন্নত তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থা।
গবেষকদের মতে, এই বায়োনিক মাছ নদীর পানির নিচে সাঁতরে বেড়ায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচের উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে:
- পানি কতটা অম্ল বা ক্ষারীয় (pH)
- পানির তাপমাত্রা
- পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ
- রাসায়নিক দূষণের মাত্রা
এই সমস্ত তথ্য রিয়েল টাইমে গবেষকদের কাছে পাঠানো হয়, ফলে তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
কেন এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বের বিভিন্ন নদী, বিশেষ করে চীনের ইয়াংজে, আজ মারাত্মক দূষণের শিকার। শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক, কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক—সব কিছু মিলে পানির মান বিপর্যস্ত। প্রচলিত পদ্ধতিতে পানি পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা সময়ে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে, যা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
এই ক্ষেত্রে AI চালিত রোবট মাছ এক বিশাল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এটি:
✅ সতত ও নিরবিচারে কাজ করতে পারে
✅ মানবসম্পদের পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে
✅ জলজ পরিবেশে কোনো বিঘ্ন না ঘটিয়ে দূষণের হটস্পট চিহ্নিত করে
প্রযুক্তির অন্তর্নিহিত কাঠামো
🔧 প্রযুক্তি | 🎯 ব্যবহার |
---|---|
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) | পানির মান বিশ্লেষণ ও ডেটা পাঠানো |
স্মার্ট সেন্সর | দূষণ ও রাসায়নিক পরিমাপক |
LED আলো | পানির নিচে দৃষ্টিসহায়ক সংকেত |
শক্তিশালী ব্যাটারি | দীর্ঘস্থায়ী অপারেশন |
ওয়্যারলেস ট্রান্সমিশন | রিয়েল টাইমে তথ্য প্রেরণ |
আগামী দিনে প্রযুক্তির সম্ভাবনা
গবেষকরা জানিয়েছেন, আগামীতে এই রোবট মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্তকরণ, পানির নিচের ভিডিও পর্যবেক্ষণ, এমনকি স্বয়ংক্রিয় ফিল্টারিং সিস্টেম যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু চীন নয়, অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ—যেখানে হাজারো নদী, খাল ও জলাধার রয়েছে। কিন্তু সেই নদীগুলোর অনেকেই এখন প্লাস্টিক, পয়ঃবর্জ্য, ও শিল্পবর্জ্যে দূষিত। এ ধরনের রোবট মাছ বা অনুরূপ প্রযুক্তি বাংলাদেশেও প্রয়োগ করা হলে পানির মান পর্যবেক্ষণ অনেক সহজ ও কার্যকর হয়ে উঠবে।
বিশেষ করে গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে আগ্রহী তরুণরা এই ধারণাকে নিজেদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করতে পারে। এআই, সেন্সর প্রযুক্তি ও রোবোটিক্স নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে এক চমৎকার উদ্ভাবনী অনুপ্রেরণা।
উপসংহার
প্রযুক্তি ভালো না খারাপ—তা নির্ভর করে আমরা কীভাবে ব্যবহার করি তার ওপর। AI দিয়ে কেউ বানাতে পারে অশ্লীল কনটেন্ট, আবার কেউ চাইলে তৈরি করতে পারে এমন রোবট মাছ যারা নদী বাঁচাতে পারে।
চীনের এই রোবট মাছ প্রকল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রযুক্তিকে মানুষ ও প্রকৃতির কল্যাণে ব্যবহার করাই সত্যিকারের অগ্রগতি। উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এমন প্রযুক্তিই হয়ে উঠুক আমাদের অনুপ্রেরণা।
বিজ্ঞানী অর্গ সবসময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের পক্ষে। আপনি যদি পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবন, এআই প্রকল্প, বা নদী সংরক্ষণে আগ্রহী হন—তাহলে আজই যুক্ত হোন বিজ্ঞানী অর্গের বিভিন্ন প্রজেক্টে।
Leave a comment