কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে ওয়েব ব্রাউজিংয়ে স্বয়ংক্রিয়তা আনার জন্য ব্রাউজার-ইউজ এজেন্টের উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এমন এআই এজেন্ট তৈরি করছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েবসাইট নেভিগেট করা, তথ্য সংগ্রহ করা এবং এমনকি লেনদেন সম্পন্ন করার মতো কাজ করতে সক্ষম। তবে, এই প্রযুক্তির বাস্তবতা কি প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মিলছে? বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি কীভাবে উপকারী হতে পারে?
এআই ব্রাউজার এজেন্টের উত্থান
ওপেনএআই সম্প্রতি তাদের নতুন ব্রাউজার-ইউজ এজেন্ট ‘অপারেটর’ চালু করেছে, যা ওয়েব স্বয়ংক্রিয়তার একটি যুগান্তকারী উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে। এটি ব্যবহারকারীদের পক্ষে পিৎজা অর্ডার করা, গেমের টিকিট কেনা, এমনকি ওয়েবসাইট থেকে কাঙ্ক্ষিত তথ্য সংগ্রহ করার মতো কাজ সম্পন্ন করতে পারে। তবে, কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এর ব্যবহার এখনো নির্দিষ্ট কিছু কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
‘রেড ড্রাগন’ কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্যাম উইটিভিন বলেন, “আমরা এখনো নিশ্চিত নই যে এর প্রধান অ্যাপ্লিকেশন কী হবে। আমার ধারণা, এটি এমন কাজের জন্য ব্যবহৃত হবে যা মানুষের জন্য সময়সাপেক্ষ কিন্তু উপভোগ্য নয়, যেমন সেরা দামে পণ্য খোঁজা বা হোটেল বুকিং করা।”
প্রতিযোগিতার দৌড়ে কারা এগিয়ে?
এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপ দ্রুত প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি কিছু নতুন স্টার্টআপও এই বাজারে প্রবেশ করেছে। চলুন দেখি, কারা এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে—
- ওপেনএআই-এর অপারেটর (জানুয়ারি ২০২৫-এ চালু): চ্যাটজিপিটি প্রো গ্রাহকদের জন্য ($২০০/মাস) উপলব্ধ, যা মূলত ভোক্তাবান্ধব ওয়েব স্বয়ংক্রিয়তার ওপর গুরুত্ব দেয়।
- কনভার্জেন্স-এর প্রক্সি (ডিসেম্বর ২০২৪-এ চালু): যুক্তরাজ্যের স্টার্টআপ, যা বিনামূল্যে সীমিত ব্যবহার (প্রতিদিন ৫টি সেশন) বা আনলিমিটেড অ্যাক্সেসের জন্য $২০/মাস প্রদান করে। কিছু ক্ষেত্রে অপারেটরের চেয়েও ভালো পারফরম্যান্স প্রদান করছে।
- গুগলের প্রজেক্ট মেরিনার: বর্তমানে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং পরীক্ষার জন্য ব্যবহারকারীদের অপেক্ষা তালিকায় নাম লেখাতে হচ্ছে।
- অ্যানথ্রপিক-এর কম্পিউটার ইউজ (অক্টোবর ২০২৪-এ চালু): এআই ব্রাউজিংয়ের আরও উন্নত সংস্করণ নিয়ে কাজ করছে।
- মাইক্রোসফট-এর ওমনিপার্সার ভি২ (ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ চালু): এটি একটি ওপেন-সোর্স প্রকল্প, যা ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহকে সহজতর করতে পারে।
- বাইটড্যান্স-এর ইউআই-টার্স: এতে গভীর সিস্টেম অ্যাক্সেস প্রয়োজন, যা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
- ব্রাউজার-ইউজ: ডেভেলপারদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি টুল, যা গুগলের জেমিনি ২.০ ফ্ল্যাশসহ বিভিন্ন এআই মডেলের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এর সম্ভাবনা কতটুকু?
বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এআই-চালিত ব্রাউজার এজেন্টগুলো গবেষকদের, ফ্রিল্যান্সারদের এবং ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা সংগ্রহ এবং গবেষণার জন্য উপযোগী তথ্য বিশ্লেষণ করতে এসব এজেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
তবে, এ ধরনের প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যয় একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অপারেটর-এর মতো সেবার মাসিক ফি অনেক শিক্ষার্থীর জন্য ব্যয়বহুল, তবে প্রক্সি-এর মতো তুলনামূলক সস্তা সেবা শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হতে পারে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
বিশ্বব্যাপী ওয়েব স্বয়ংক্রিয়তা প্রযুক্তির অগ্রগতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, এআই চালিত ব্রাউজার এজেন্টগুলোর নিরাপত্তা এবং তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এ ধরনের এজেন্ট বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের বাজারের জন্য কতটা উপযোগী হবে, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে এক বিষয় নিশ্চিত—এআই আমাদের ওয়েব ব্যবহারের অভ্যাসকে বদলে দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও পরিপূর্ণ ও কার্যকর হয়ে উঠবে।
Leave a comment