কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জাহাজীদের শক্তিশালী ঢেউয়ের পূর্বাভাস দিতে পারবে

Share
Share

সমুদ্রের প্রতি আমাদের সবারই একটি বিশেষ দুর্বলতা সবসময়ই ছিল এবং সম্ভবত ভবিষ্যতেও থাকবে। সমুদ্রের ধারে বসে দিন কাটানোর আকাঙ্ক্ষা অনেকেরই আছে, যেখানে নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের সুর আমাদের মনকে আকর্ষণ করে। কিন্তু যখন এই সমুদ্রের স্রোত প্রচণ্ড রূপ ধারণ করে, তখন সেই রোমান্টিকতার জায়গায় ভয় এবং উৎকণ্ঠা নেমে আসে। সমুদ্রের তীব্র রূপ কখনও কখনও প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সমুদ্রের ভয়াবহ ঝড়ে ৩৮৬ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ২৪টি জাহাজ ডুবে গেছে।

অনেক সময়ই কোন স্রোতে জাহাজটি ডুবে যেতে পারে তা পূর্বাভাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে, বিজ্ঞানীরা থেমে থাকেননি। তাদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, প্রায় ১.৫ কোটি ডেটা পয়েন্ট সংগ্রহ করে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে স্রোতের একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আবিষ্কার করা হয়েছে। এই প্যাটার্নটি ব্যবহার করে এখন পাঁচ মিনিট আগে থেকেই সম্ভাব্য বিপদের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে।

এই গবেষণায় ১৭২টি সমুদ্রের প্রতি আধা ঘণ্টার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই প্রযুক্তি প্রায় ৭০% নির্ভুলভাবে পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী থমাস ব্রেউনাগের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে এবং এটি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

নেচার পত্রিকা, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং সম্মানিত বৈজ্ঞানিক জার্নাল। এটি জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা এবং পরিবেশ বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে উচ্চমানের গবেষণা প্রকাশের জন্য বিখ্যাত। পত্রিকাটি তার কঠোর পিয়ার-রিভিউ প্রক্রিয়ার জন্য পরিচিত, যা নিশ্চিত করে যে শুধুমাত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য গবেষণাই প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিটি হচ্ছে টেনশরফ্লো, যা গুগল দ্বারা নির্মিত একটি ওপেন সোর্স মেশিন লার্নিং ফ্রেমওয়ার্ক। এটি ডাটা ফ্লো গ্রাফের উপর ভিত্তি করে কাজ করে, যেখানে নোডগুলিতে গণনা এবং এজগুলোতে ডাটা প্রবাহ নির্দেশিত হয়। যদিও টেনশরফ্লো প্রথমে গবেষণা এবং প্রোটোটাইপিং-এর জন্য তৈরি করা হয়েছিল, এটি এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন চিত্র ও ভাষা প্রক্রিয়াকরণ, স্বয়ংচালিত গাড়ি, এবং স্বাস্থ্যসেবা।

সমুদ্রের বিপজ্জনক রূপ সম্পর্কে আগাম সতর্কতা প্রদান করতে সক্ষম হওয়া একটি বড় সাফল্য। এটি শুধুমাত্র জাহাজ এবং নাবিকদের সুরক্ষার জন্যই নয়, বরং পুরো সামুদ্রিক শিল্পের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

তথ্যসূত্র: https://www.nature.com/articles/s41598-024-66315-3
https://www.sciencenews.org/article/ai-predict-ship-sinking-freak-waves

Share
Written by
নিউজডেস্ক

আমরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাতকার প্রকাশ করি। আপনারা কোন লেখা প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করুন: [email protected], [email protected]

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org