কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

ছোট্ট ইঁদুর থেকে এআই বিপ্লব: যেভাবে শুরু হলো যন্ত্রের শেখার গল্প

Share
Share

মুহাম্মদ রেদওয়ান | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক |৮ মে ২০২৫

ছোট্ট ‘থিসিউস’-এর বড় অভিযান

ছোট্ট একটা ধাতব ইঁদুর—নাম ‘থিসিউস’। হঠাৎ ঢুকে পড়েছে গোলকধাঁধার ভেতর। শুরুতে দ্বিধান্বিত হলেও দ্রুত সে নিজেই রাস্তা খুঁজতে শুরু করলো। বারবার ভুল হচ্ছে। কিন্তু প্রতিটি ভুল থেকেই কিছু না কিছু শিখছে। অবশেষে সঠিক পথটা পেলো সে। দ্বিতীয়বারে আর ভুল করেনি—সোজা পৌঁছে গেলো লক্ষ্যে।

এই অবাক করা ঘটনাটি ১৯৫০-এর দশকের। ‘থিসিউস’ নামের সেই ছোট রোবটটি তৈরি করেছিলেন বিখ্যাত গণিতবিদ ও আধুনিক তথ্যতত্ত্বের জনক ক্লদ শ্যানন। তখন কেউ ভাবেনি, একটি ধাতব ইঁদুর থেকেই শুরু হবে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর বিপ্লব।

মাইক্রোমাউস: প্রযুক্তির নতুন অধ্যায়

১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো আয়োজন হয় ‘মাইক্রোমাউস’ নামের এক অভিনব প্রতিযোগিতা। প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছিল: এমন ক্ষুদ্র রোবট বানানো, যা বাইরের সাহায্য ছাড়াই গোলকধাঁধার পথ বের করতে পারবে। পূর্ব-তৈরি মানচিত্র, মানুষ বা জিপিএসের সাহায্য ছাড়াই এই চ্যালেঞ্জ তখন ছিল যুগান্তকারী। ছোট্ট রোবটের সেন্সর ও অ্যালগরিদমের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সবাইকে চমকে দিয়েছিল।

বাংলাদেশের প্রবীণ রোবোটিক্স গবেষক ড. রাশেদা তাসনিম বলেন,

“আজকের বিশাল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলোর শিকড় কিন্তু এই ছোট্ট ছোট্ট রোবট থেকেই এসেছে। তখনকার মাইক্রোমাউস এখনকার আধুনিক এআই রোবটেরই পূর্বপুরুষ।”

আজকের এআই: শুধু মেজ নয়, পুরো শহর নিয়ন্ত্রণ

সেই ছোট্ট রোবটের ক্ষমতা ছিল সীমিত। কিন্তু বর্তমানে এআই-এর ক্ষমতা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। গোলকধাঁধা নয়, এখন এআই নিয়ন্ত্রণ করছে গাড়ি, রোগ শনাক্ত করছে, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবিদ হাসান বলেন,

“পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে কেউ ভাবেনি যে এআই মানবজীবনে এত গভীরভাবে প্রবেশ করবে। এখন এআই ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করাই কঠিন।”

ছোট উদ্ভাবন, বড় সম্ভাবনা

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানের শীর্ষ প্রযুক্তিগুলো অতীতে ছিল নিছক খেলনা বা পরীক্ষামূলক প্রকল্প। গুগল, অ্যাপল কিংবা টেসলার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এমন ছোট উদ্ভাবন থেকেই আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ ডেভেলপার সালমান জুবায়ের বলেন,

“আমাদের দেশে ছোট প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই হাল ছেড়ে দেয়। অথচ এই ছোট আইডিয়াগুলোই একদিন বিশাল শিল্পের ভিত্তি তৈরি করে।”

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ও এআই গবেষক ডেমিস হাসাবিস বলেন,

“প্রযুক্তির ইতিহাস প্রমাণ করেছে, আজকের ছোট আবিষ্কারই আগামী দিনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ক্লদ শ্যাননের থিসিউস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কখনোই ছোট উদ্ভাবনকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়।”

আগামী দশকে এআই কোথায় যাবে?

বিশ্বজুড়ে গবেষকরা বলছেন, আগামী দশ বছরে এআই হবে মানুষের সবচেয়ে কাছের সহযোগী। সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে নতুন আবিষ্কারে সহায়তা করবে এআই।

প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক বলেন,

“আগামী দশ বছরে এআই শুধু সাহায্যকারী নয়, সঙ্গী হয়ে উঠবে। এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীরভাবে যুক্ত থাকবে।”

পাঠকের মতামত

প্রিয় পাঠক, আপনিও কি এমন কোনো ছোট উদ্ভাবনের কথা ভাবছেন, যা বড় পরিবর্তন আনতে পারে? জানিয়ে দিন আমাদের।


মতামত পাঠান: [email protected]

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
তথ্যপ্রযুক্তিপ্রযুক্তি বিষয়ক খবর

স্কাইপের যুগ শেষ

৫ মে, ২০২৫ তারিখে স্কাইপ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই আইকনিক যোগাযোগ...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগতথ্যপ্রযুক্তি

জাপান মনবুশো স্কলারশিপ: বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কীভাবে জাপান মেক্সট স্কলারশিপ ২০২৫-এর জন্য আবেদন করতে পারে তা...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানতুন প্রযুক্তি

২০৩১: মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?

২০৩১ সালের মধ্যে কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাবে? এরিক শ্মিটের...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচিকিৎসা বিদ্যা

এআইয়ের কাছে হার মানল মৃত্যু: ‘অপরিচিত’ ওষুধেই মিলল নতুন জীবন

আবিষ্কার করুন কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি অপ্রচলিত ওষুধ ব্যবহার করে একটি বিরল...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হল রোবট ম্যারাথন

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট হাফ-ম্যারাথন আবিষ্কার করুন, যেখানে মানুষ এবং...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.