চিকিৎসা বিদ্যারসায়নবিদ্যা

ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে গ্রিন কেমিস্ট্রির কি কি বিষয় জানা প্রয়োজন?

Share
Share

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে গ্রিন কেমিস্ট্রির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ওষুধ উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কেমিক্যাল বর্জ্য কমানো, শক্তি সাশ্রয় এবং মানবদেহের জন্য নিরাপদ ওষুধ তৈরি করাই এই ধারার মূল লক্ষ্য।

১. গ্রিন কেমিস্ট্রির ১২টি নীতিমালা জানা

গ্রিন কেমিস্ট্রির মূল ভিত্তি হলো এর ১২টি নীতিমালা। যেমন:

✪বর্জ্য প্রতিরোধ

✪নিরাপদ সলভেন্ট ব্যবহার

✪শক্তির কার্যকর ব্যবহার

✪নবায়নযোগ্য কাঁচামালের ব্যবহার

✪পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদি।

২. প্রসেস ডিজাইন ও রিএকশন অপ্টিমাইজেশন

ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক প্রক্রিয়া কিভাবে আরও কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব করা যায়—তা জানাও জরুরি। এতে সলভেন্টের ব্যবহার কমানো, টক্সিক সাবস্ট্যান্স এড়িয়ে যাওয়া, এবং রিএকশন কন্ডিশন সহজ ও কম শক্তি-নির্ভর রাখা অন্তর্ভুক্ত।

৩. সাসটেইনেবল রিসোর্স ব্যবহারের জ্ঞান

প্রাকৃতিক উৎস থেকে রাসায়নিক সংগ্রহের ক্ষেত্রে পরিবেশের উপর প্রভাব কমানো, এবং নবায়নযোগ্য উৎস ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ।

৪. বায়োক্যাটালাইসিস ও এনজাইম প্রযুক্তি

প্রাকৃতিক এনজাইম বা জীবাণু-নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেমিক্যাল সিন্থেসিসে গ্রিন অপশন তৈরি করা সম্ভব। এটি গ্রিন কেমিস্ট্রির একটি দ্রুত উন্নয়নশীল শাখা।

৫. লাইফ সাইকেল এনালাইসিস (LCA)

একটি ওষুধ উৎপাদনের সময় তার পুরো জীবনচক্র (raw material থেকে শুরু করে disposal পর্যন্ত) কিভাবে পরিবেশে প্রভাব ফেলে, সেই বিশ্লেষণ করতে জানতে হবে।

৬. রেগুলেটরি ও ইথিক্যাল দিক

গ্রিন কেমিস্ট্রি শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়, এর সাথে রয়েছে আইনি ও নৈতিক দিক। ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট তৈরিতে পরিবেশবান্ধব উপাদানের ব্যবহারে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা যেমন US FDA, EMA, WHO-এর গাইডলাইন জানা প্রয়োজন।

৭. ডিজাইন ফর ডিগ্রেডেশন

যে ওষুধ বা কেমিক্যাল পরিবেশে ব্যবহারের পর সহজে ভেঙে গিয়ে ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশ তৈরি করে না, সেরকম ডিজাইন করা—এটি গ্রিন কেমিস্ট্রির মূল দর্শনের অন্যতম অংশ।

উপসংহার:
ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে গ্রিন কেমিস্ট্রির ব্যবহার শুধু পরিবেশ সুরক্ষার দিক থেকেই নয়, বরং অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক। একজন কেমিস্ট হিসেবে এই জ্ঞান অর্জন করলে একজন গবেষক, প্রডাকশন কেমিস্ট বা ফার্মা-সায়েন্টিস্ট হিসেবে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।


হোসেন মোঃ আরাফাত
রসায়ন বিভাগ,চট্টগ্রাম কলেজ।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
বিজ্ঞানীদের জীবনীরসায়নবিদ্যা

নাইলনের সৃষ্টিকথা

ওয়ালেস ক্যারোথার্সের নাইলন আবিষ্কারের পেছনের আকর্ষণীয় গল্পটি আবিষ্কার করুন, একজন প্রতিভাবান রসায়নবিদ...

চিকিৎসা বিদ্যানতুন প্রযুক্তি

যৌবন ধরে রাখতে বছরে ২ মিলিয়ন ডলার: বিপ্লব না বিলাসিতা?

ভবিষ্যতের বিজ্ঞান এবং দীর্ঘায়ু স্টার্টআপ ব্যবহার করে বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য...

কলামচিকিৎসা বিদ্যা

কলাম: মস্তিষ্ক কি বদলাতে পারে? – নিউরোপ্লাস্টিসিটি ও মানুষের সম্ভাবনার নতুন মানচিত্র

নিউরোপ্লাস্টিসিটি কীভাবে মস্তিষ্ককে পুনর্গঠিত করে তা আবিষ্কার করুন। অভ্যাস, থেরাপি এবং মননশীলতা...

চিকিৎসা বিদ্যাসাধারণ বিজ্ঞান

ভাইরাস, ভাইরাস কী ও প্রভাব।

ভাইরাস কীভাবে কাজ করে, কীভাবে তারা মানবদেহে সংক্রামিত হয় এবং কী কারণে...

চিকিৎসা বিদ্যাবিজ্ঞানীদের জীবনী

ইনসুলিন দিয়ে জীবন জয়

ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিনের বিপ্লবী ইতিহাস আবিষ্কার করুন। ফ্রেডেরিক ব্যান্টিংয়ের সাফল্য থেকে শুরু...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.