অতিথি লেখক: রউফুল আলম
লেখক ও গবেষক
ইমেইল: [email protected]
বিজ্ঞানের ইতিহাসে দুইজন মানুষ “নক্ষত্রদের গুরু” হিসেবে পরিচিত। কারণ তাদের হাত দিয়ে তৈরি হয়েছে সবচেয়ে বেশি সফল বিজ্ঞানী, যারা বিজ্ঞানাকাশে নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে। সে শিক্ষকদের একজন হলেন জে জে থমসন, অন্যজন আরনল্ড সমারফেল্ড (Arnold Sommerfeld)।
সমারফেল্ডকে নিয়ে আজকে কয়েকটি কথা লিখবো। সমারফেল্ড বহু ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টকে সুপারভাইজ করেছেন—তাদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটির নাম ভার্নার হাইজেনবার্গ। হাইজেনবার্গের বয়স যখন মাত্র কুড়ি বছর, তখন সে সমারফেল্ডের কাছে পিএইচডি করতে যায়। সমারফেল্ড তাকে নিয়ে সে সময়ের তরুণ খ্যাতনামা বিজ্ঞানী নীলস বোরের লেকচারে নিয়ে যান। বোরের সাথে হাইজেনবার্গের সেটাই প্রথম সাক্ষাতকার এবং তাদের সেই সাক্ষাত পরবর্তীতে বিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন সম্ভাবনা এনে দেয়।
একজন ভালো শিক্ষককের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি তার স্টুডেন্টদেরকে সেরা সেরা শিক্ষক ও গবেষকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন। ভবিষ্যতের সম্ভাবনা তৈরির সুযোগ করে দিবেন। ইউরোপ-আমেরিকায় আমি সেটা এখনো দেখি। এ কারণেই, সেরা সেরা বিজ্ঞানীরা সবসময়ই একটা নিদির্ষ্ট নেটওয়ার্কের মধ্য থেকেই তৈরি হয়!
হাইজেনবার্গ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে, ১৯৩২ সালে। সমারফেল্ডের প্রথম স্টুডেন্ট, যে কিনা নোবেল পুরস্কার পেলো। তারপর অবশ্য সমারফেল্ডার আরো কয়েকজন পিএইচডি ছাত্র নোবেল পেয়েছেন। তাদের মধ্যে পিটার ডিবাই এবং উলফগ্যাং পাউলি (Known for Pauli’s exclusion principle) উল্লেখযোগ্য। সমারফেল্ডের অধীন পোস্টডক করেছেন এমন কিছু বিজ্ঞানীও নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, যাদের মধ্যে লিনাস পাউলিং উল্লেখযোগ্য। শুধু নোবেল পুরস্কার দিয়ে সমাফিল্ডের স্টুডেন্টদের বিচার করা যাবে না। কারণ, তার বহু স্টুডেন্ট নোবেল পুরস্কার না পেলেও, নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভাস্বর হয়ে আছেন।
সমারফেল্ড পিএইচডি করেছিলেন মাত্র বাইশ বছর বয়সে, সে সময়ের খ্যাতিমান জার্মান গণিতবিদের অধীন। তারপর ফিজিক্সের বহু এরিয়াতে তিনি কাজ করেছেন, অবদান রেখেছেন। আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি থিউরিকে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সমারফেল্ডের গাণিতিক অবদান ছিলো উল্লেখযোগ্য। সমারফেল্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফিজিক্সের জন্য সেসময়ের বিখ্যাত জার্নাল Zeitschrift für Physik (Journal for Physics)। সে জার্নালেই ১৯২৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো সত্যেন বোসের বিখ্যাত কাজ। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবেও সমারফেল্ডের নাম উচ্চারিত হয়। বহু নক্ষত্রেদর তৈরি করা এই শিক্ষক, ৮৪ বার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি।
১৯২৮ সালে সমারফেল্ড কোলকাতা ভ্রমণ করেন এবং সেখানে সি. ভি. রমনের সাথে তার দেখা হয়। সে বছরই বিজ্ঞানী রমন, স্পেকট্রোসকপিতে এক বিখ্যাত আবিষ্কার (রমন ইফেক্ট) করেন এবং সমারফেল্ডের উপস্থিতিতে সেটা প্রেজেন্ট করেন। সমারফেল্ডের কোলকাতা ভ্রমণের কথা শুনে, ঢাকা থেকে ছুটে গিয়েছিলেন সত্যেন বোস। রমনের লেকচারের শেষে, সত্যেন বোস বলেছিলেন—প্রফেসর রমন, আপনি এক অসামান্য উদ্ভাবন করেছেন। এটা “রমন ইফেক্ট” নামে পরিচিতি পাবে এবং আপনি দ্রুত নোবেল পুরস্কার পাবেন (সূত্র: Satyendra Nath Bose—His life and times)। সত্যেন বোসের ভবিষ্যতবাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়েছিলো। সি. ভি. রমন মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
একটি ভিন্ন তথ্য: সি. ভি. রমনের যে ছাত্র মূলত এই রমন ইফেক্টের উদ্ভাবক তার নাম ছিলো শ্রিনিবাস কৃষ্ণণ। তিনি যে বছর রমন ইফেক্ট উদ্ভাবন করেন সে বছরই (১৯২৮) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে রিডার হিসেবে যোগ দেন। পাঁচ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছিলেন। এস. কৃষ্ণন বিজ্ঞানে অবদানের জন্য নাইটহুড পেয়েছিলেন।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–
https://www.facebook.com/share/p/19wvhkJU6u/
Leave a comment