লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থায় শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের গবেষণার মূল্যায়নে সাইটেশন সংখ্যা ও প্রকাশনার সংখ্যা একটি প্রধান মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক, কারণ এর মাধ্যমে গবেষণার গুরুত্ব বাড়ছে এবং তরুণ গবেষকরা গবেষণায় যুক্ত হতে আগ্রহী হচ্ছেন।
গবেষণার মাধ্যমে সৃজনশীলতা ও নতুন জ্ঞান উৎপাদন দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই গবেষকদের মূল্যায়ন করা এবং তাদের কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, প্রশ্ন থেকে যায়, আমরা কি শুধুমাত্র কারো গুগল স্কলার, রিসার্চগেট, বা ওয়েব অব সায়েন্সে থাকা সাইটেশন ও প্রকাশনার সংখ্যা দেখে একজন ভালো গবেষককে চিহ্নিত করতে পারি?
এর উত্তর হতে পারে হ্যাঁ এবং না—দু’টিই।
হ্যাঁ — কারণ, গবেষক মূল্যায়নে সাইটেশন সংখ্যা এবং প্রকাশনার পরিমাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। সাইটেশন সংখ্যা বলে দেয় একটি গবেষণাপত্র কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক, কতজন গবেষক সেই কাজকে তাদের গবেষণায় ব্যবহার করছেন। একটি কাজ যত বেশি সাইট করা হয়, তার গুরুত্ব তত বেশি বলে মনে করা হয়। সুতরাং, সাইটেশন সংখ্যা একজন গবেষকের কাজের মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
না — কারণ, সাইটেশন সংখ্যা অনেক সময় বাস্তব চিত্রকে প্রতিফলিত করে না। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, নামের মিল থাকার কারণে ভিন্ন গবেষকের কাজ তার প্রোফাইলে যুক্ত হয়ে যায়, যা বাস্তব চিত্রকে প্রতিফলিত করে না। এছাড়াও, কিছু নিম্নমানের জার্নালে বা নন-ইন্ডেক্সড জার্নালে প্রকাশিত কাজের ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে সাইটেশন সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়, যা গবেষণার মানের সাথে খাপ খায় না।
আমার এক বন্ধুর একটি উদাহরণ এখানে প্রাসঙ্গিক। তিনি গুগল স্কলারের সাইটেশন সংখ্যার ভিত্তিতে তার প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ গবেষক হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। পরে তিনি নিজেই জানান যে, তার প্রোফাইলে অনেক প্রকাশনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছিল, যা তার আসল কাজ ছিল না। এটি তার নামের মিল থাকার কারণে ঘটেছিল। এ ধরনের সমস্যাগুলি সাইটেশন সংখ্যার বাস্তব মূল্যায়নে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
আরেকটি উদাহরণ, আমার আরেক বন্ধুর একটি গবেষণাপত্র ছিল যা একটি প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও সেই কাজটির মান নিম্নমানের ছিল, তবে সেটির ৬০টিরও বেশি সাইটেশন। কারণ, তার সুপারভাইজারের অধীনে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা একই বিষয়ে কাজ করে এবং একে অপরকে সাইট করে। ফলে তার সাইটেশন সংখ্যা কৃত্রিমভাবে বেড়ে যায়।
আরও একটি সমস্যা হল নিজস্ব কাজকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বারবার সাইট করা। এটি সাইটেশন সংখ্যা বাড়াতে সহায়তা করে, কিন্তু গবেষণার গুণমানকে বাড়ায় না। এমন অনেক গবেষক আছেন, যারা নিজস্ব কাজগুলোই বেশি সাইট করেন, যা এক ধরনের কৃত্রিমতা তৈরি করে।
তাহলে সমাধান কী? গবেষক মূল্যায়নে শুধুমাত্র সাইটেশন সংখ্যা বা প্রকাশনার পরিমাণ নয়, তার গবেষণার গুণমানকেও বিবেচনা করতে হবে। একজন গবেষক কতটা ভালো, তা নির্ধারণ করতে তার কাজ কতটা মৌলিক এবং তার গবেষণা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কতটা মানসম্মত, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি, তার কাজ গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডেক্সড জার্নালে প্রকাশিত কিনা, সেটিও মূল্যায়নের একটি বড় অংশ।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–
https://www.facebook.com/share/p/1PJMzziHgF/
Leave a comment