বিজ্ঞান ডেস্ক | ১৪ মার্চ ২০২৫
একটি শীতল ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা আলোর রশ্মিকে এমনভাবে আটকে ফেললেন যেন তা বরফের মতো কঠিন। এটা কোনো কল্পবিজ্ঞানের দৃশ্য নয়, বরং ইতালীয় বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক আবিষ্কার। আলোর এই কঠিন রূপটি পদার্থবিদ্যার একটি বিস্ময়কর ঘটনা, যা ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
ইতালির CNR Nanotec এবং ইউনিভার্সিটি অব পাভিয়ার গবেষকরা এই অভিনব পরীক্ষাটি করেছেন। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানী অ্যান্টোনিও গিয়ানফাতে এবং ডেভিড নিগ্রো। তারা অতি-নিম্ন তাপমাত্রায় বিশেষ সেমিকন্ডাক্টর (গ্যালিয়াম আর্সেনাইড) প্ল্যাটফর্মে লেজারের আলো প্রয়োগ করেন। এতে সৃষ্টি হয় ‘পোলারিটন’ নামের হাইব্রিড কণা, যা আলোর সঙ্গে পদার্থের সংযোগ ঘটায়। সূত্র: Hindustan Times
গবেষকরা লক্ষ্য করেন, এই পোলারিটনগুলো নির্দিষ্ট বিন্যাসে সাজতে শুরু করে এবং ‘সুপারসলিড’ অবস্থা গ্রহণ করে, যেখানে কঠিন ও তরল উভয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এই অবস্থায় আলো তরলের মতোই প্রবাহিত হতে পারে, কিন্তু একইসঙ্গে কঠিন পদার্থের মতো সুসংহত কাঠামো তৈরি করে। সূত্র: WION News
প্রযুক্তিতে নতুন সম্ভাবনা
এই গবেষণা ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে। সুপারসলিড আলো থেকে তৈরি কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিট হতে পারে আরও স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গতিকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে। তাছাড়া, এই আবিষ্কার অপটিক্যাল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও দ্রুত ও উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ড. রবার্ট হকিন্স বলেন, “এই আবিষ্কার আলোর প্রকৃতি নিয়ে আমাদের ধারণাকে আমূল বদলে দেবে। এটি কেবল বৈজ্ঞানিক নয়, প্রযুক্তিগত বিপ্লবের দরজাও খুলে দিয়েছে।” [সূত্র: Science Daily]
বাংলাদেশি গবেষকদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “এই গবেষণাটি বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গবেষকদের উচিত এই ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণায় অংশ নেওয়া।”
আলো জমাট, তবে লাইটসেবার নয়
যদিও আলোর কঠিন রূপের সন্ধান পাওয়া গেছে, তবুও বিখ্যাত ‘লাইটসেবার’ এখনো কেবলই কল্পনা। গবেষকরা স্পষ্ট করেছেন, “সুপারসলিড আলো দিয়ে লাইটসেবার তৈরি করা বাস্তবে সম্ভব নয়। এটি একটি ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি।”
শেষকথা
আলোকে কঠিন করার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, এই গবেষণা একদিন প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। আলোর এই নতুন রূপ হয়তো একদিন বদলে দেবে আমাদের প্রযুক্তিগত বাস্তবতাকেও।
(এই প্রতিবেদনটি গবেষণা তথ্য এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তুত।)
Leave a comment