ছোটদের জন্য বিজ্ঞান

আবিষ্কারের ইতিকথাঃ কম্পিউটার

Share
Share

 

আধুনিক জীবন যাত্রায় কম্পিউটার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে অর্থবহ ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রাচীন গণনা যন্ত্র ‘অ্যাবাকাস’ কম্পিউটারের ইতিহাসে সূচনা হলেও প্রকৃতপক্ষে কম্পিউটারের কার্যক্রম অত্যন্ত ব্যাপক। কম্পিউটার আবিষ্কারক হিসেবে কেউ এককভাবে দাবীদার নয়। বরং কম্পিউটারের ইতিহাসে আমরা পর্যায়ক্রমিক বিবর্তন লক্ষ্য করছি। একটি বিষয় বলে রাখা ভাল, কেবলমাত্র হার্ডওয়্যারই কম্পিউটার নয়, সফটওয়্যার বা যন্ত্র চালানোর নির্দেশ ছাড়া তা কার্যকর হতে পারে না। আজকের দিনে কম্পিউটারের অবস্থান সবকিছুর উপরে। প্রতিনিয়ত আরও উন্নত যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যারের ব্যবহার কম্পিউটিংকে আরও সহজ ও ব্যাপক করে তুলেছে। সেই সাথে কম্পিউটার চলে যাচ্ছে সবার হাতে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে কম্পিউটারের এ উৎকর্ষতা অর্জন হয়েছিল এবং কারা ছিলেন এর নেপথ্যে।

১৬৭১ সালে গটফ্রাইড ভন লিবনিজ নামক একজন জার্মান গণিতবিদ প্যাস্কালের যান্ত্রিক গণনাযন্ত্রের ভিত্তিতে আরও আধুনিক গণনাযন্ত্র তৈরি করেন। এর সাহায্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ এবং উৎপাদক নির্ণয় করা যেতো। তিনিই প্রথম পুনঃপুন যোগের মাধ্যমে গুণ করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। ১৭৮৬ সালে জোহান হেলফ্লিক মুলার একটি গণনা যন্ত্রের ধারণা দেন। ১৮০১ সালে ফ্রান্সের জোসেফ মেরী জেকার্ড পাঞ্চকার্ড ব্যবহার শুরু করেন।

এদিকে ১৮০১ একটি স্বয়ংক্রিয় গণনা যন্ত্র তৈরির চেষ্টা করেন অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ। এই যন্ত্রের নাম ছিল এ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন। ব্যাবেজ এমন একটি যন্ত্রের কথা চিন্তা করেছিলেন, যে যন্ত্রে পাঞ্চকার্ডের মাধ্যমে ইনপুট প্রদান করা হবে। আর ইনপুট ধারণের জন্য যন্ত্রটিতে থাকবে স্মৃতির ব্যবস্থা, প্রক্রিয়াকরণের জন্য গাণিতিক অংশ এবং স্বয়ংক্রিয় আউটপুট মুদ্রণের ব্যবস্থা। সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তার ধারণাকে উপহাস করতেন। আজকের দিনের কম্পিউটারের সহিত ধারণা তুলনা করলে সত্যিই অবাক হতে হয়। ১৮৩৩ সালে ব্যাবেজের পরিকল্পিতএ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনএর ধারণাকে আধুনিক কম্পিউটারের সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চার্লস ব্যাবেজকে অভিহিত করা হয় কম্পিউটারের জনক হিসেবে।

১৯৩৬ সালে কোর্নাড জিউস প্রথম উন্মুক্ত প্রোগ্রামযোগ্য কম্পিউটার উদ্ভাবন করেন। ১৯৪২ সালে জন অ্যাটানসফ ও ক্লিফর্ড বেরি ‘এবিসি কম্পিউটার’ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। ১৯৪৪ সালে হাওয়ার্ড আইকেন এবং গ্রেস হোপার একত্রে একটি কম্পিউটার তৈরি করেন যা ‘হার্ভাড মার্ক ১ কম্পিউটার’ নামে পরিচিত।       

গণনাযন্ত্র দিয়ে কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে বিকশিত হয় কম্পিউটারের আকার প্রকৃতি। মূলত: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউনিভার্সিটি অব প্যানসিলভানিয়া’র জন প্রেসপার একার্ট এবং জন ডব্লিউ মোচলি কর্তৃক ইনিয়াকের নকশা করা হয়েছিল আমেরিকার সেনাবাহিনীতে হাইড্রোজেন ব্যালেস্টিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি’র গবেষণার কাজে। আর এটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল হাইড্রোজেন বোমার ক্যালকুলেশনে। ১৯৪৬ সালে ইনিয়াকে সংযোজিত হলো বৃহৎ ব্রেন বা মস্তিস্ক। এতে ব্যবহার করা ভ্যাকুয়াম টিউব। এটিকে বহুমুখী কাজের উপযোগী করা হয়। ধরণের কম্পিউটার আরও বিকশিত হতে থাকে।  

এর পরে যে ধরনের কম্পিউটার আসে তা আগের চেয়ে অনেক বেশি গতি সম্পন্ন, অনেক বেশি কার্যক্ষমতা সম্পন্ন এবং আকারে ছোট। এতে ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার করা হয়। ফলে কম্পিউটারের আকার আরও ছোট হয়ে আসে। এই পর্যায়ে নতুন এক ধরণের সার্কিট উদ্ভাবনের চেষ্টা হয়। ১৯৫৫ সালে অনেকগুলো ট্রানজিস্টর এবং আরও উপকরণ মিলিয়ে একটি একীভূত সার্কিট তৈরি করে ক্ষুদ্র সিলিকন পাতের উপর স্থাপন করা হয়।

১৯৫৩ সালের দিকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন সংক্ষেপে আইবিএম কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রবেশ করে। এ বছর সাধারণ মানুষের উপযোগী করে আইবিএম ৭০১ ইডিপিএম কম্পিউটার বাজারে আনে যা বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়। ১৯৫৪ সালে জন ব্যাকিউস আইবিএম এর সহযোগিতায় হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ফরটান উন্নয়ন করে। আমেরিকায় ১৯৫৯ সালে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রথম ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য কম্পিউটারে ম্যাগনেটিক ইনক ক্যারেক্টার রিকগনিশন সংক্ষেপে এমআইসিআর পদ্ধতি উদ্ভাবন করে।

ট্রানজিস্টর এর পরিবর্তে আসে মাইক্রো চিপ। ১৯৫৯ সালে একজন প্রকৌশলী জ্যাক কিলবি মাইক্রো চিপ উদ্ভাবন করে। অবশ্য, একই সময়ে জ্যাক কিলবি এবং টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট এর পেটেন্ট লাভ করে। ১৯৬১ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৭০ সালের দিকে ব্যাপকভাবে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার চলতে থাকে। ১৯৭‌১ সালে ইন্টেল কর্পোরেশন প্রথম মাইক্রো চিপ ইন্টেল ৪০০৪ বাজারে আনে। ১৯৮১ সালে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আইবিএম কম্পিউটার উন্নয়নে করে। এতে ডস (ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম) ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এমএস-ডস ব্যবহৃত হয়। ১৯৮৩ সালে অ্যাপল প্রথম ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ভিত্তিক কম্পিউটার তৈরি করে। ১৯৮৫ সালে আজকের সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম চালু করে যা অনেকটা অ্যাপলের ন্যায় ব্যবহার বান্ধব।

এভাবে কম্পিউটারের ক্রমবিকাশে উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন কম্পিউটার তৈরি সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে কম্পিউটার অনেক বেশি দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং সেই সঙ্গে আকারে ছোট। এর কাজের পরিধি দিনে দিনে বাড়ছেই।

টেকনোলজি টুডে কর্তৃক প্রকাশিত “আবিষ্কারের ইতিকথা”

এছাড়া নিজস্ব ওয়েবসাইটঃ http://e-learningbd.com

Share
Written by
সাদ আব্দুল ওয়ালী -

প্রধান সম্পাদক, www.e-learningbd.com। সহকারী ব্যবস্থাপক, আইটি, উইন্টার ড্রেস লিমিটেড। বি.এস.এস., রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। হায়ার ডিপ্লোমা ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, এপটেক কম্পিউটার এডুকেশন। বই প্রকাশঃ ১. ডেটাবেজ প্রোগ্রাম: এসকিউএল সার্ভার, ২. ওরাকল ও ডেভেলপার (সাদ আব্দুল ওয়ালী ও মাহবুবুর রহমান), ৩. বিজ্ঞান মনীষা, ৪. আবিষ্কারের ইতিকথা। বিভাগীয় সম্পাদক, ছোটদের জন্য বিজ্ঞান, বিজ্ঞানী.org । ই-মেইল: [email protected]

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
ইলেক্ট্রনিক্সকম্পিউটার টিপসছোটদের জন্য বিজ্ঞানতথ্যপ্রযুক্তিপ্রথম পাতায়প্রযুক্তি বিষয়ক খবর

কোডিং শেখার গুরুত্ব ও সম্ভাবনা

ধারণা করা হচ্ছে যে সামনের বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দারুণভাবে ভূমিকা রাখবে। সেটা...

ছোটদের জন্য বিজ্ঞান

বজ্রপাত কি এবং কেনো

বেশিরভাগ সময় আমরা প্রচলিত ধারনা নিয়ে আমাদের জ্ঞানের পরিসর বিস্তৃত রাখি। আসলে...

ছোটদের জন্য বিজ্ঞান

প্রকৃতিপ্রেমিক, জীববিজ্ঞানী ও লেখক অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা

‘মানুষ, বৃক্ষের মতো আনত হও, হও সবুজ …’  এমন কথা একজনই বলতে...

অন্যান্যছোটদের জন্য বিজ্ঞানবিজ্ঞানীদের খবরসাধারণ বিজ্ঞান

ঝরে গেল আমাদের বড়বৃক্ষ- দ্বিজেন শর্মা

বেণুবর্ণা অধিকারী পাতার উদ্গম ও ঝরে যাওয়া, আবারও পত্রপুষ্পে বৃক্ষের পল্লবিত হওয়া—এ...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.