গবেষণায় হাতে খড়িপ্রযুক্তি বিষয়ক খবরবিজ্ঞান বিষয়ক খবরবিজ্ঞানীদের জীবনী

বাঙালি বিজ্ঞানী খান বাহাদুর কাজি আজিজুল হক: ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির পথিকৃৎ

Share
Share

বিশ্বজুড়ে অপরাধ শনাক্তকরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট পদ্ধতি আজ একটি অপরিহার্য প্রযুক্তি। অথচ এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের অন্যতম উদ্ভাবক একজন বাঙালি বিজ্ঞানী, যার নাম আজও অনেকের কাছে অজানা—তিনি খান বাহাদুর কাজি আজিজুল হক।

এক বিস্মৃতপ্রায় বিজ্ঞানীর কাহিনি

১৮৭২ সালে ব্রিটিশ ভারতের খুলনা জেলার ফুলতলায় জন্মগ্রহণ করা আজিজুল হক ছিলেন গণিতের ছাত্র। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে পড়াশোনা শেষে তিনি ১৮৯২ সালে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ চাকরি নেন। সে সময় অপরাধীদের শনাক্ত করতে অ্যানথ্রোপমেট্রি নামক পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো, যা ছিল দীর্ঘ ও জটিল।

গণিতের দক্ষতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারার মাধ্যমে আজিজুল হক এমন এক পদ্ধতি তৈরি করলেন, যা অপরাধীদের সনাক্তকরণকে সহজতর করল। তার এই উদ্ভাবিত পদ্ধতিই পরবর্তীতে ‘হেনরি সিস্টেম’ নামে পরিচিত হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই পদ্ধতির কৃতিত্ব শুধুমাত্র ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার স্যার এডওয়ার্ড রিচার্ড হেনরির নামে স্বীকৃত হয়, যদিও এর প্রকৃত ভিত্তি আজিজুল হকের গবেষণার ওপর নির্ভরশীল ছিল।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি—তবে কি যথেষ্ট?

আজিজুল হকের এই গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দেয় এবং পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ছোট জমিদারির মালিকানা প্রদান করে। এছাড়া, তিনি পুলিশের এসপি (সুপারিনটেনডেন্ট) পদে উন্নীত হন। কিন্তু এই স্বীকৃতি কি তার উদ্ভাবনের প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পেরেছিল?

ব্রিটিশ সরকার তাকে চিনেছিল, কিন্তু আমরা বাঙালিরা তাকে কতটুকু চিনি? হয়তো যদি তিনি মুসলিম না হতেন, তাহলে তার নাম আরও বেশি প্রচারিত হতো!

বিশ্বের স্বীকৃতি, কিন্তু বাংলায় বিস্মৃত

যদিও বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশে তার নাম তেমন প্রচার পায়নি, ব্রিটেন তাকে ভুলে যায়নি। দ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সোসাইটি তার ও হেমচন্দ্র বোসের সম্মানে ‘দ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সোসাইটি আজিজুল হক অ্যান্ড হেমচন্দ্র বোস প্রাইজ’ চালু করেছে। ফরেনসিক বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা গবেষকদের এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।

জীবনের শেষ অধ্যায়

আজিজুল হকের জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছিল অবিভক্ত ভারতের বিহারের চম্পারানে। ১৯৩৫ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। তার নিজস্ব বাড়ি ‘আজিজ মঞ্জিল’-এর সীমানার মধ্যে তাকে সমাহিত করা হয়।

আজিজুল হক শুধু একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক মহান উদ্ভাবক, যাঁর গবেষণা আজও বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি তাকে যথাযথ সম্মান দিতে পেরেছি?

উপসংহার

বাংলার এই বিস্মৃত নায়ককে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। তার অবদান শুধুমাত্র অতীত ইতিহাসের অংশ নয়, এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও ফরেনসিক বিজ্ঞানের এক মাইলফলক। তাই আজিজুল হকের জীবন ও কর্ম নিয়ে আরও গবেষণা ও আলোচনা হওয়া উচিত, যেন তার নাম কেবল পুরস্কারের তালিকায় নয়, আমাদের প্রেরণার অংশ হয়ে থাকে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.