তোমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছ, তারা অনেকেই সম্ভবত শুনেছ যে তোমাদের স্নাতক কোর্সের শেষে একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে হবে। কিংবা যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাবার কথা ভাবছো তারা স্নাতক কোর্সের সময়েই এক বা একাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত করতে চাও, যেন ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার জন্য কোথাও ভর্তি হওয়াটা সহজ হয়। কয়েক বছর আগেও গবেষণা বলতে শুধু মাত্র পিএইচডি কিংবা মাস্টার্সের জন্য প্রয়োজন বলে ভাবা হতো, এখন কিন্তু তা নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যেই এই গবেষণার কাজটি যুক্ত থাকে। আজকে স্নাতক শিক্ষার্থীরা কীভাবে গবেষক হিসাবে নিজেকে তৈরি করতে পারবে?- সেটি নিয়ে আলোচনা করবো।
“গবেষণা”- কাজটি কী?
গবেষণা হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে তুমি নির্দিষ্ট একটি বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ এবং পর্যবেক্ষণ করে নতুন জ্ঞান তৈরি করবে, কিংবা কোনো সমস্যার সমাধান করবে। স্নাতক পর্যায়ে গবেষণা তোমাকে তাত্ত্বিক জ্ঞানকে ব্যবহারিকভাবে প্রয়োগ করবার একটি দূর্লভ সুযোগ দেয়।
গবেষণার ধরণ:
যদিও সাধারণ গবেষণা শব্দটি অনেক ব্যাপক এবং অনেক ধরনের হয়। কিন্তু স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থিদের জন্য গবেষণাকে আমি দুই ভাগে ভাগ করবো-
(১) মৌলিক গবেষণা (Fundamental Research): নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য এই গবেষণার কাজটি পরিচালিত হয়। এইখানে তাত্ত্বিক জ্ঞানে আরো নতুন তত্ত্ব সংযুক্ত করা হয়।
(২) ব্যবহারিক প্রয়োগকৃত গবেষণা (Applied Research): কোন বৈজ্ঞানিক বা সামাজিক সমস্যার বাস্তব সমাধানের উদ্দেশ্য নিয়ে গবেষণা করা।
গবেষণার পদক্ষেপগুলি
কি বিষয় নিয়ে কেন গবেষণা করবেন তা জানা খুব জরুরী। চল সেগুলি একটু বুঝিয়ে বলি:
১. তোমার আগ্রহের বিষয়টি জানো
পৃথিবীতে কিংবা বাংলাদেশে গবেষণা করার অনেক অনেক বিষয় রয়েছে? কিন্তু কি নিয়ে গবেষণা করবে? সেটির জন্য প্রথমেই তোমার জানা প্রয়োজন তোমার আগ্রহের বিষয়টি কি? এটি তোমার অনার্সের পাঠ্যপুস্তকের কোন বিষয় হতে পারে, আবার সেটির বাহিরেও অনেক বিষয় রয়েছে? চল এবার দেখা যাক সেটি তুমি কিভাবে করবে?
- প্রথমে তোমার প্রিয় বিষয়গুলির একটি তালিকা তৈরি করো।
- এবার এসব বিষয়ের বই এবং গবেষণাপত্র বা প্রবন্ধ পড়।
- তোমার অধ্যাপক বা সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করুন।
- এই বিষয়গুলির মধ্যে কোন বিষয়টি তোমাকে বেশি উৎসাহিত করে? যেটি নিয়ে পড়াশুনা করতে তোমার বোরিং লাগেনা, এবং আরো বেশি জানতে ইচ্ছে করে? – সেটিই হবে তোমার মূল আগ্রহের বিষয়।
আমি অবশ্য যত সহজে এটি তোমাদের বললাম, ব্যাপারটা কিন্তু ততটা সহজ নয়। আমরা অন্যকে নিয়ে মতামত দিতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও নিজেকেই আমরা অনেক সময় সঠিক ভাবে জানি না। তাই নিজের আগ্রহের বিষয়টি বের করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে ভেবো না।
আমার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তোমাদের সাথে শেয়ার করি। আমি তোমাদেরই মতন স্নাতক পড়ার সময়ে আমার আগ্রহের বিষয়টি কী তা নিয়ে সত্যি সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমি ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে পড়লেও সেটি নিয়ে কাজ করার থেকে সেটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য উৎসাহিত হচ্ছিলাম। সেই সময়ে বায়োলজি বা জৈব-বিদ্যা নিয়ে আমার খুব আগ্রহ হচ্ছিল। আমি স্নাতক পড়াশুনা করেছি জাপানে। আর তোমরা জান যে বিদেশে দেশি খাবার পাওয়া বেশ কঠিন। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা কয়েকজন মিলে একটি মেস করে সেখানে সবাই মিলে খাবার খেতাম। আমিই ছিলাম একমাত্র ইঞ্জিনিয়ার। আর সবাই জেনেটিকস, কেউবা বায়োটেকনোলজি নিয়ে গবেষণা করতো। তাদের কাছে যতই বায়োটেকনোলজি বিষয় শুনতাম, ততই উৎসাহিত হলাম। গবেষণার বিষয় খুঁজতে গিয়ে আমাদের স্নাতকের শিক্ষকদের মধ্যে কে বায়ো-বিষয়ক কাজ করে তার খোঁজ করলাম। এর মধ্যে উচিদা নামক আমার একজন শিক্ষককে পেলাম যিনি জৈব পদার্থ এবং ডিএনএর গঠন নিয়ে কাজ করছিলেন। নিজের এই আগ্রহের বিষয়টি আবিষ্কার করতে পারাটা আমার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল। পরবর্তীতে আমি বায়োমেডিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করা শুরু করি এবং এখনও সেটিই করছি। এই হল আমার গল্প। কিন্তু তোমাকেও তেমনি তোমার নিজের আগ্রহের বিষয়টি খুঁজে বের করতে হবে।
এই ক্ষেত্রে আরেকটু বলে নিই। কি নিয়ে গবেষণা করা উচিত – তা না ভেবে বরং তুমি ভাবতে বসো কোনটি নিয়ে তোমার গবেষণা করতে ভালো লাগবে। নিজের ভালো লাগার বিষয় যদি না হয়, তবে গবেষণা করা কঠিন হবে।
২. একটি “গবেষণার প্রশ্ন” তৈরি কর
তোমার আগ্রহের বিষয়টি চিহ্নিত করার পরে, একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন বা সমস্যাকে নির্ধারণ করো যা তুমি অনুসন্ধান করতে চাও। একটি ভালো গবেষণা-প্রশ্নের বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলো:
- সুস্পষ্ট: সুনির্দিষ্ট ও ফোকাসড।
- গবেষণাযোগ্য: উপলব্ধ উপকরণ দিয়ে অনুসন্ধানযোগ্য।
- গুরুত্বপূর্ণ: তোমার বিষয়ের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এবং মূল্যবান।
- উদাহরণ: যদি তুমি পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী হও, তবে একটি গবেষণা প্রশ্ন হতে পারে: “শহরায়নের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যে কী প্রভাব পড়ছে?”
“কেন?”-কে খুঁজে দেখ:
শুধু প্রশ্ন তৈরি করলেই হবে না, এর পিছনে কারণটাও তোমাকে জানতে হবে। এই “কেন” বা why টা জানা খুব দরকার। এই ব্যাপারে তোমাদেরকে Simon Sinek এর “কেন দিয়ে শুরু করো” এই ভিডিওটি দেখতে বলবো। উনার এই ধারণা বা মতামতের উপর একটি বই আছে, সেটিও পড়ে দেখতে পারো।
৩. একজন পরামর্শক বা মেন্টর খোঁজ
একা একা কোন কিছু নিয়ে গবেষণা করা কঠিন। সেজন্য তোমার প্রয়োজন হবে একজন পরামর্শক বা মেন্টর, এবং তোমাকেই তেমন একজন খুঁজতে হবে। তিনি হতে পারেন তোমার অধ্যাপক, গবেষক বা সিনিয়র ছাত্র, যিনি তোমাকে গবেষণা প্রক্রিয়ায় গাইড করতে পারেন।
- কীভাবে একজন মেন্টর খুঁজবে?
- তোমার বিভাগের অধ্যাপকদের সাথে যোগাযোগ করো, যারা তোমার পছন্দের বিষয়টি সমন্ধে অভিজ্ঞ।
- সেমিনার, কর্মশালা বা নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যোগ দিয়ে অভিজ্ঞ গবেষকদের সাথে পরিচিত হবার চেষ্টা করো।
- গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ খুঁজ।
- বিজ্ঞানী ডট অর্গ সাইটে অনেক বাংলাদেশি গবেষক তুমি পাবে, তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারো।
- যদি তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের কাউকে তুমি মেন্টর হিসাবে নিতে চাও সেক্ষেত্রে তোমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান বা সেই পর্যায়ের কারো পরামর্শ নিও সেক্ষেত্রে তোমাকে কি করতে হবে। এটি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক কোর্সের পলিসির উপর নির্ভর করে।
৪. গবেষণা প্রক্রিয়া সম্পর্কে জান
তোমার গবেষণা প্রশ্নের সাথে মানানসই গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে জানা খুব প্রয়োজন। সাধারণত গবেষণার প্রক্রিয়াগুলো হলো:
- রিসার্চ পেপার পর্যালোচনা: তোমার বিষয়ের উপর পূর্বের কাজগুলি অধ্যয়ন করো এবং সেই গবেষণাতে কি ফাঁক রয়েছে যা নিয়ে এখনও কাজ করা যায়।
- তথ্য সংগ্রহ: এটি হতে পারে পরীক্ষা, জরিপ, সিমুলেশন, কিংবা ফিল্ড স্টাডি।
- তথ্য বিশ্লেষণ: ফলাফলগুলি বিশ্লেষণ করতে পরিসংখ্যানগত বা গুণগত পদ্ধতি ব্যবহার কর।
- উপসংহার: তোমার ফলাফলগুলো পর্যালোচনা করে উপসংহার আনতে হবে এবং গবেষণা প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত করুন।
৫. ছোট পদক্ষেপ দিয়ে শুরু কর
নবীন গবেষকদের মধ্যে অনেকেই প্রথমেই বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখে থাকে। এটা দোষের কিছু নয়, এটাই স্বাভাবিক। তবে, গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রথমে খুব বড় লক্ষ্য স্থির না করে, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী একটি ছোট কিন্তু অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে দীর্ঘমেয়াদে সফল হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই স্নাতক পর্যায়ে গবেষণার সুযোগ প্রদান করে। এতে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপকদের প্রকল্পে সহায়ক হিসেবে যুক্ত হতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি দারুণ সুযোগ, যা তাদের ভবিষ্যৎ গবেষণার ক্ষেত্রে শক্ত ভিত্তি তৈরি করে। গবেষণা প্রকল্পে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গবেষণার পদ্ধতি, কৌশল এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
তাই, নবীন গবেষক হিসেবে গবেষণায় যাত্রা শুরু করতে চাইলে প্রথমে ছোট কিন্তু বাস্তবসম্মত লক্ষ্য স্থির করা জরুরি, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত সুযোগগুলো যথাযথভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- করণীয়:
- তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা প্রোগ্রাম সমন্ধে খোঁজ খবর নাও।
- গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ল্যাবের গ্রীষ্মকালীন ইন্টার্নশিপে আবেদন করুন।
- শিক্ষার্থী গবেষণা সম্মেলন বা প্রতিযোগিতায় অংশ নাও।
- বাংলাদেশে বসেই এখন রিমোট কাজ করে অনেক প্রতিষ্ঠানে গবেষনা করার সুযোগ আছে। তাই সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠানগুলির সাথেও যোগাযোগ করতে পার।
৬. গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলো গড়ে তোল
গবেষণায় সফল হতে হলে তোমাকে শুধু পড়াশুনা করলেই চলবে না, সেই সাথে তোমাকে বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হলো:
- সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা (Critical Thinking): এটি হল এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তুমি একটি যুক্তিপূর্ণ, সুচিন্তিত এবং বিশ্লেষণমূলকভাবে কোনো বিষয় বা সমস্যার সমাধান খোঁজ করতে পারো। এটি মূলত তথ্য যাচাই-বাছাই করে, যুক্তির পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করে এবং নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করে। সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা মানে শুধুমাত্র তথ্য গ্রহণ করা নয়, বরং তথ্যের সত্যতা, যুক্তির বৈধতা, এবং অন্যান্য উপাদানের সাথে এর সংযোগ বিচার করা। এটি একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া যেখানে ভাবনার প্রতিটি ধাপে প্রশ্ন তুলতে হয় এবং সম্ভাব্য সব দিক থেকে সমস্যাটিকে বিশ্লেষণ করতে হয়।
- লেখালেখির দক্ষতা (Writing Skills): এটি একজন গবেষকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। এটি গবেষণার ফলাফল, ধারণা এবং প্রস্তাবনা পরিষ্কার, সঠিক এবং কার্যকরভাবে উপস্থাপন করার জন্য অপরিহার্য। গবেষণাপত্র, প্রতিবেদন, এবং প্রস্তাবনা লেখার দক্ষতা অর্জন করা যে কোনো গবেষণার কার্যক্রমকে সফলভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- সময়ের ব্যবস্থাপনা (Time Management): এই দক্ষতা তোমাকে কাজগুলি সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও সংগঠিত করার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সফলভাবে সমাপ্ত করতে সহায়তা করে। একজন গবেষক হিসেবে, সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি কাজের গুণগত মান বজায় রাখা এবং সময়সীমা পূরণ করার জন্য সহায়ক।
- সহযোগিতা (Collaboration): এটি হলো এমন একটি দক্ষতা যা মানুষকে একসাথে কাজ করতে এবং একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য দলগতভাবে কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে সহায়তা করে। গবেষণা বা একাডেমিক ক্ষেত্রে, সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান এবং নতুন জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হয়। সফল সহযোগিতা নিশ্চিত করতে ভালো যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills) অপরিহার্য। দলগত কাজের সময় সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করা, মতামত প্রকাশ করা এবং দলের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এটি পরামর্শদাতা, সহপাঠী, এবং গবেষণা দলের সদস্যদের সাথে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজের গতি বাড়িয়ে দেয়।
৭. গবেষণা প্রস্তাবনা লিখতে শিখ
গবেষণা প্রস্তাবনা (Research Proposal) হলো এমন একটি ডকুমেন্ট বা নথি যা গবেষণা শুরু করার আগে তার একটি পরিকল্পনা এবং নির্দেশনা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি যা গবেষক কী নিয়ে গবেষণা করবেন, কেন তা গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে গবেষণা সম্পন্ন করবেন তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। গবেষণা প্রস্তাবনা সাধারণত অর্থায়নের জন্য বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অনুমোদনের জন্য তৈরি করা হয়, যেখানে গবেষককে তার গবেষণার প্রয়োজনীয়তা, বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব, এবং সম্ভাব্য অবদান ব্যাখ্যা করতে হয়। গবেষণা শুরু করার আগে এই ডকুমেন্টটিতে গবেষক ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন, তিনি “কেন” এই গবেষণাটি করতে আগ্রহী। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ, “কেন” গবেষনা করবে তা খুঁজে পাওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ।
(এই প্রবন্ধে আমি সম্ভবত অনেক বেশি “কেন” শব্দটি ব্যবহার করেছি, এবং সেটি নিয়েই বকবক করছি, তাই না? প্রকৃতপক্ষে সেটি সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ যা আমরা অনেক সময়ই ভেবে দেখি না। )
৮. অর্থায়ন বা অনুদান খুঁজুন
কিছু গবেষণা প্রকল্পে সরঞ্জাম, ভ্রমণ বা উপকরণের জন্য অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী সংস্থা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য অনুদান প্রদান করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি একটু কঠিন হতে পারে, তবুও তোমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের সাথে কথা বল। চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি?- তাই না?
৯. তোমার গবেষণা প্রকাশ কর
গবেষণা করলে এবং তুমি কিংবা তোমার দল কিছু আবিষ্কার করলে, কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। এর পরে সবথকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে হয়। কি নিয়ে গবেষণা করে কি তোমরা খুঁজে পেলে যা আর কেউই পাইনি তা পৃথিবীর সবাইকে জানাতে হয়। জ্ঞান অর্জন করার পরে দায়িত্ব হল সেই জ্ঞানকে মানবজাতির সাথে শেয়ার করা। নতুবা তোমার সেই অর্জনের কোন অর্থই থাকলো না। গবেষণা সম্পন্ন হলে তা শেয়ার করার জন্য প্রকাশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুমি একাডেমিক জার্নালে বা সম্মেলনে তোমার গবেষণা উপস্থাপন করতে পার। একাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত করার সময় সেই জার্নালের মান কেমন তা ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর দিয়ে যাচাই করে নিতে পারো। এই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর নিয়ে আরেকদিন বিস্তারিত বলবো, কেমন?
- প্রকাশনার উপায়:
- বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল বা শিক্ষার্থী গবেষণা জার্নাল।
- স্নাতক গবেষণা সম্মেলনে উপস্থাপনা।
- গবেষণা সম্পর্কে ব্লগ বা প্রবন্ধ লেখা।
উপসংহার
গবেষক হওয়ার স্বপ্ন আমরা অনেকেই লালন করি, তবে সেই গবেষণা প্রক্রিয়ার মধ্যে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বুঝতে পারবে, ব্যাপারটা যতটা সোজা বলে মনে হয় ততটা সোজা নয়। যে কোন কিছু প্রথমে কঠিন বলে মনে হতে পারে, তবে সাহসের সাথে লেগে থাকার ধৈর্য এবং আগ্রহটাকে অটুট রাখাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যা আমি ব্যক্তিগতভাবে উপলব্ধি করেছি আমার জীবন থেকে এবং বিজ্ঞানী ডট অর্গে প্রায় শতাধিক বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে। গবেষক হিসাবে নিজেকে সুন্দর করে প্রস্তুত করো এবং তোমরা সফল হও এই কামনা করছি। আমার এই লেখাটি যদি তোমার ভালো লাগে, তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলো না কিন্তু।
Leave a comment