(সম্পাদক: কলকাতা থেকে প্রকাশিত অবকাশ পত্রিকাতে শঙ্কর সেন এর লেখা স্মার্ট গ্রিড এর উপর একটি ভালো প্রবন্ধ পড়লাম। বিজ্ঞানী.org এর পাঠকদের সাথে শেয়ার কারার জন্য লেখাটি হুবুহু এইখানে প্রকাশিত করলাম।)
বিদ্যুত্-শক্তি
উৎপাদন ব্যবহারের শুরু থেকে যে কৃৎকৌশল ব্যবহৃত
হত, মূলতঃ সেটাই থেকে গেছে। উন্নত প্রযুক্তি আমাদের
দিয়েছে সুবহৎ কেন্দ্র, ভোল্টেজের উচ্চমানে পরিবহন
ব্যবস্থা, গ্রাহকের এলাকায় সেই ভোল্টেজকে ধাপে
ধাপে কমিয়ে এনে বিভিন্ন ভোল্টেজ-ব্যবহারকারী গ্রাহকের
প্রয়োজন অনুসারে বণ্টন এবং অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে
নিয়ন্ত্রণ-যন্ত্র ও নিয়ন্ত্রণ-পদ্ধতিতে। বিভিন্ন
কেন্দ্রের উত্পাদিত বিদ্যুত্-শক্তিকে শুষ্ঠুভাবে
বণ্টনের জন্য একটা নেটওয়ার্কে আনা হয়েছিল, যাকে
বলা হয় আঞ্চলিক গ্রিড, পরবর্তীকালে আঞ্চলিক গ্রিড
প্রসারিত করে রাজ্যস্তরে এবং তারও পরে রাজ্য-গ্রিডগুলিকে
যুক্ত করে জাতীয় গ্রিডে পরিবর্তন করা হয়েছে। এসবই
হয়েছে শক্তি-ক্ষয় কমিয়ে বিদ্যুত্-মূল্য কম রাখার
খাতিরে এবং কোনও অঞ্চলের উত্বৃত্ত- বিদ্যুত্কে
অন্যত্র অপ্রতুল অঞ্চলে ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু
গ্রিড যত প্রসারিত হয়, তার সুস্থিতি তত বিপন্ন
হয় এবং নানা কৃৎকৌশল দ্বারা সেটাকে নিয়ন্ত্রাধীনে
রাখা হচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা
অন্যখানে। বর্তমানে অনেক দেশেই এই সব ট্র্যান্সমিশন
ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বহু ব্যবহারের ফলে হয়ে
গেছে জীর্ণ অথচ বর্তমানের ইলেক্ট্রনিক ও কম্পিউটার
যুগে গ্রাহকদের শুধু বিদ্যুত্ দিলেই হবে না, তার
মান, স্থায়িত্ব ও মূল্য সঠিক হতে হবে । আবার জনসংখ্যা
বৃদ্ধির এবং নগরায়নের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নূতন
নূতন এলাকা বিদ্যুতায়িত করতে হয়, নূতন নূতন কেন্দ্র
এবং পরিবহন ও বণ্টন-সিস্টেম বৃদ্ধি পায়, পরিচালন-ব্যবস্থা
হয় কেন্দ্রীভূত । উত্পাদক ও গ্রাহকের মধ্যেকার
সম্পর্ক হয় একতরফা ও অগণতান্ত্রিক। ফলে বিভিন্ন
মাপের গ্রাহকদের পরিষেবা ক্ষুণ্ণ হয় ।
আজকালের
এই “বোবা” (dumb) ইলেক্ট্রিক গ্রিড-এ
যোগাযোগ (communication) হয় এক-তরফা, গ্রাহক থেকে
‘ইউটিলিটি’ বা বিদ্যুতের যোগানদার, যেখানে চাহিদা-র
পরিবর্তনের সঙ্গে উত্পাদনকে বাড়ানো বা কমানোর
চেষ্টা চলে ‘ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল’ নিয়ন্ত্রণ-পদ্ধতির
দ্বারা। যখন চাহিদা-অনুযায়ী যোগানদার উত্পাদন
রক্ষা করতে পারেনা, তখন সিস্টেম-এ নানা সমস্যা
দেখা যায় যেমন, ‘লোড-শেডিং’ বা ‘ব্ল্যাক-আউট’।
এর উপরে
বর্তমানকালে পুনর্নবীকরণ শক্তির উত্পাদন বাড়ছে
ভালোমতো, কারবন- উত্গীরণ কমাবার তাগিদে জনসাধারণ
চাইছে পুনর্নবীকরণ শক্তির আরও প্রসার ও শ্রীবৃদ্ধি
এবং জীবাশ্ম-জ্বালানি ও পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির
ধাপে ধাপে অপসারণ। সঙ্গে আছে সাধারণ গৃহস্থ থেকে
শুরু করে বড় বড় অফিস ও কারখানায় গ্রিড-সংযুক্ত
ছোট, মাঝারি ও বড় সৌর-বিদ্যুত্ । সুষ্ঠু ভাবে
এই পরিবর্তন সাধিত হতে পারে ‘স্মার্ট-গ্রিড’-এ
উত্তরণ দ্বারা (চিত্র ১)।
স্মার্ট-গ্রিডের
মূল প্রত্যয় হল প্রতিনিয়ত বিশ্লেষণ, নিয়ন্ত্রণ,
‘কমিউনিকেশন’- সামর্থz ও পারদর্শিতার প্রতি সদাজাগ্রত
দৃষ্টি রাখা, ফলে জাতীয় গ্রিড ব্যবহৃত হবে সু-উচ্চ
দক্ষতায় এবং কম শক্তি-ক্ষয়ে।
বর্তমান
‘ডিজিটাল’-যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে দু-তরফা
যার ফলে যোগান ও চাহিদার মধ্যে সাযুজ্যতা রাখা
সম্ভব হচ্ছে ‘রিয়েল টাইম’-এ, মোটামুটি তাৎক্ষণিক
ভাবে। ফলে ‘হঠাৎ বেড়ে যাওয়া’ শীর্ষ-চাহিদা (peak)
-কে অনেক মসৃণ করা সম্ভব হয়েছে। বলা যায় উত্পাদন
ও ব্যবহারে ব্যবহারকারী ব কনসিউমার একাধারে হবেন
বিদ্যুৎ-ব্যবহারকারী, অন্যদিকে হবেন উত্পাদনে
অংশগ্রহণকারী অর্থাত্ গ্রাহক এবং অংশীদার । এই
প্রত্যয়ের সঙ্গে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় ‘ইন্টারনেট’-এর
সঙ্গে । বিশ্বব্যাপী এক ‘অদৃশ্য’ জালে গ্রথিত
আছে কয়েক কোটি কম্পিউটার – ছোট, মাঝারি এবং বড়,
তথ্য আদান-প্রদান করছে স্বাধীনভাবে।
স্মার্ট
গ্রিডে উত্পাদিত শক্তি ও ট্র্যান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন
নেটোয়ার্ককে শুষ্ঠুভাবে ও দক্ষতাসহকারে ব্যবহার
করে ‘লাইন’-এর শক্তি-ক্ষয় কমিয়ে আনে অনেকগুলি
বিভাজি@#$* উত্পাদকের সাহায্যে। মোট উত্পাদনে
পুনর্নবিকরণ-শক্তি উত্সের অংশ যতই বাড়বে, স্মার্ট
গ্রিড ততই দক্ষতার সঙ্গে ক্ষিপ্রভাবে শক্তি ব্যবহার
করাবে।
স্মার্ট-প্রযুক্তি-
স্মার্ট মিটার, স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
এবং ‘ডিজিট্যাল সংবেদ-যন্ত্র’ (sensor) ব্যবহারের
মধ্য দিয়ে গ্রাহককে real time – বিদ্যুত্-মূল্য
পেতে সাহায্য করে যার ফলে গ্রাহকের আর্থিক সাশ্রয়
হয় । গ্রাহকরা তাদের শক্তি-প্রয়োজনকে স্বল্প-চাহিদার
সময়ে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যে সময়ে লাইন-ক্ষয়
কম থাকে এবং ‘নোংরা’ dirtiest বিদ্যুৎ-কেন্দ্রগুলির
উত্পাদন বন্ধ থাকে। এছাড়া, গ্রিড-নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রাদি
দ্বারা অগ্রিম বোঝা যায় গ্রিডের কোনও সম্ভাবিত
বিপদের বার্তা।
স্মার্ট
গ্রিডের পুরোপুরি রূপায়ণ হতে সময় লাগবে ১০ থেকে
৩০ বত্সর, সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতির উপরে । মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়া রাজ্য শুরু করেছেন
তার ৯০ লক্ষ গ্রাহকের জন্য স্মার্ট মিটার বসাবার
কাজে । নেদারল্যাণ্ড ২০১২ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে
তার ৭০ লক্ষ গৃহস্থ-গ্রাহকের মিটার পাল্টে দিচ্ছে
। অবশ্য নূতন এলাকায বিদ্যুত্ দিতে গেলে, যেমন,
সাহারা মরুভূমি সংশ্লিষ্ট এলাকা, খরচ কম হবে ।
ইণ্টারন্যাশন্যাল এনার্জী অথরিটি (IEA) -র হিসাব
অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে স্মার্ট গ্রিড রূপান্তরে
প্রয়োজন হবে ১৬,০০০ বিলিয়ন (মার্কিন) ডলার, ২০৩০
খ্রী-র মধ্যে ।
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ‘গ্রিড ২০৩০ ভিসন ‘ অনুসারে
একটি একবিংশ শতাব্দী- গ্রিড নির্মানের পরিকল্পনা
করা হয়েছে যার দ্বারা প্রতিটি মানুষকে যে কোনও
স্থানে, যে কোনও অবস্থায় বিদ্যুত্ দেওয়া সম্ভব
হবে তার প্রয়োজনীয় সবটাই, তার আর্থিক সংগতির মধ্যে,
দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতা-সহ।
চিত্র ১ : স্মার্ট
গ্রিড ব্যবস্থার রূপরেখা
দ্র.
“Building a Smarter Grid”,
State of the World into a Warming World, 2009,
Worldwatch Institute, W.W.Norton & Co. London,
New York.
http:// www.ruggedcom.com/SmartGrid, www.doe.energy.gov,
OE Home: Our Work
শঙ্কর
সেন
Leave a comment