সূচীপত্রঃ
১. ভূমিকা
২. পরিবেশ দূষন
৩. পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র
৪. জিন প্রকৌশল
৫. ন্যানোপ্রযুক্তি
৬. শেষের কথা
১.ভূমিকা
বিগ ব্যাং নামক এক বৃহৎ বিষ্ফোরণের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের জন্ম , আজ থেকে প্রায় পনেরো বিলিয়ন বছর আগে। তবে মানুষের সৃষ্টি এই মহাবিশ্ব্বের জন্মের অনেক পরে,আজ থেকে মাত্র চল্লিশ হাজার বছর আগে। সে হিসেবে মানুষ রীতিমতো একটি শিশু প্রজাতি। অথচ এই শিশু প্রজাতিটি বুদ্ধির জোরেই গুহা মানব থেকে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আধুনিক মানুষে পরিণত হয়েছে। যে আকাশের দিকে তাকিয়ে মানুষ একদিন অবাক নয়নে পাখির উড়াউড়ি দেখতো, সেই আকাশেই মানুষ উড়বার ক্ষমতা অর্জন করেছে বুদ্ধির জোরেই। রাতের আকাশে যে চাঁদ দেখে মানুষ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকতো সেই চাঁদে একদিন মানুষ নিজেদের পদচিহ্ন এঁকেছে। এখন এক মূহুর্তেই আমাদের কথা সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দেয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমস্ত বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। এ সব কিছু হয়েছে আমাদের বুদ্ধির জোরেই। যেদিকে তাকানো যায় শুধু মানুষের বুদ্ধির জয়-জয়কার। বুদ্ধির লড়াইয়ে এই পৃথিবীতে মানুষের কাছে পিঠে কোন প্রাণী নেই।এ নিয়ে আমাদের অনেক অহংকার…। এই বুদ্ধির জোরেই আমরা একদিন আবিষ্কার করেছি বিজ্ঞান। আর এই বিজ্ঞানের উপর ভর করে প্রতিনিয়ত উদ্ভাবন করে চলেছি নতুন নতুন প্রযুক্তি। পুরাতন প্রযুক্তিকে ছুঁড়ে ফেলে আমরা হাতে তুলে নিচ্ছি নতুন নতুন প্রযুক্তি। প্রযুক্তি নির্ভর আমরা এখন অনেক বেশি নিশ্চিন্ত আছি। কারণ, সব সমস্যার সমাধান আছে প্রযুক্তির হাতে। জীবাশ্ম জ্বালানী ফুরিয়ে আসছে ? কোন চিন্তা নেই, আসছে নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি। আর কিছুদিন পরেই ন্যানোপ্রযুক্তি আমাদের নিয়ে যাবে সত্যিকারের এক কল্প বিজ্ঞানের জগতে। কথাগুলো ভাবতে বেশ ভালোই লাগে, মনে হয় যেন কোন স্বপ্নজগতে আমাদের বসবাস…। কিন্তু আসলেই কি তাই ? প্রত্যেকটি ভালোর পাশেই মন্দের অবস্থান। প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম নেই। প্রযুক্তির এই নেতিবাচক ব্যবহারের কারণেই আজ প্রশ্ন উঠছে কী ঘটবে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান এই প্রজাতির ভাগ্যে ? ভবিষ্যত সবসময়ই অনিশ্চিত এবং রহস্যময়। ভবিষ্যত সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা যায় না। তবু আসুন, একটু দেখার চেষ্টা করি কেমন হতে পারে আমাদের ভবিষ্যত ?
২.পরিবেশ দূষন
গ্রীন হাউজ বা সবুজ ঘর-এর সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। নামটার মাঝে কেমন যেন একটা নিরীহ ভাব থাকলেও বিষয়টির ভয়াবহতা বহুদিন ধরে আমাদের শুধু ভাবিয়েই তুলেনি, রীতিমতো মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদেরা অনেক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। শীত প্রধান দেশে গাছপালাকে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কাচের ঘরে গাছ লাগানোর পদ্ধতি বা গ্রীন হাউস তারই একটি। কিন্তু মানুষ ক্রমে এই পৃথিবীটাকেও একটু একটু করে গ্রীন হাউসে পরিণত করে ফেলেছে। শিল্প কারখানার কালো ধোঁয়া,জীবাশ্ম জ্বালানী (কয়লা,পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি) ব্যবহারে বায়ুমন্ডলে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইড সহ অন্যন্য বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ। এই বিষাক্ত গ্যাসগুলো সবাই মিলে আমাদের এই সবুজ পৃথিবীর চারপাশে তৈরি করেছে কাচের মতো একটি দুর্ভেদ্য স্তর। আমাদের শক্তির প্রধান উৎস সূর্য। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হওয়ায় সূর্যের আলো সহজেই এই স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে আসতে পারে। এই আলোকশক্তিকে গাছপালা সহ প্রাণীজগত তাপশক্তি আকারে গ্রহণের পর বাকী শক্তিটুকু যখন ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপশক্তি আকারে নির্গত হয় তখন তা আর এই স্তর ভেদ করে যেতে পারে না। কারন,তাপের তরঙ্গদৈর্ঘ্য তুলনামূলক বেশি। এই তাপশক্তি আবার পৃথিবীতেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এর ফলাফল হিসেবে বৃদ্ধি পাচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (Global Warming) নামে পরিচিত। পৃথিবীর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ব্যাপারটি কিন্তু আজ থেকে বহু বছর আগেই উত্থাপন করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী আরহেনিয়াস, ১৮৯৬ সালে। তবে এ ব্যাপারে মানুষ মাথা ঘামানো শুরু করেছে মাত্র কয়েক দশক আগে থেকে। কিন্তু ব্যাপারটা এখন এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে বিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা প্রায় ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর উপরে যেরকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে পৃথিবীর দরিদ্র দেশের মানুষেরা। এই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পেছনে প্রধান কারণটি হলো জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যাপক ব্যাবহার। আর এই অবস্থার জন্য বেশি দায়ী হলো বিশ্বের শিল্পোন্নত ধনী কয়েকটি দেশ। এসব দেশেই গ্রীণ হাউস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী বিষাক্ত গ্যাসের নির্গমণ হয় অনেক বেশি যার ফল ভোগ করতে হবে সমস্ত বিশ্ববাসীকে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বরফ গলতে শুরু করেছে। ফলে জলবায়ুর উপরে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বাড়ার পাশাপাশি ঝড়, বৃষ্টিপাত, খরা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ বাড়ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে ‘ব’দ্বীপ অঞ্চলের মানুষেরা। এসব অঞ্চলে ইতোমধ্যে এর প্রভাব দেখা গেছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, খরা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগে ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এসব অঞ্চলের মানুষ। এসব অঞ্চলে ফসলের উৎপাদনও মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকাতে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। পরিবেশ দূষন এড়িয়ে এই পৃথিবীটাকে মানুষের বাসযোগ্য করে রাখতে ১৭২ টি দেশের অংশগ্রহণে ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলন। ১৯৯৭ সালে ডিসেম্বরে জাপানের কিয়োটোতে জাতিসংঘ ক্লাইমেট চেঞ্জ কনভেনশনের উদ্যোগে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা কিয়োটো প্রটোকল নামে পরিচিত । এই চুক্তিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক ছয়টি গ্যাস নির্গমন ও নিঃসরণ হ্রাসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এই ছয়টি গ্যাস হচ্ছে- কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, হাইড্রোফ্লুরো কার্বন, পারফ্লুরো কার্বন এবং সালফার হেকসাফ্লুরাইড। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এতো কিছুর পরেও গ্রীণ হাউস গ্যাসের নির্গমনের পরিমাণ কিন্তু কমেনি ততোটা । বরং কিছু কিছু শিল্পোন্নত দেশে উল্টো বেড়ে গেছে। ২০০৬ সালের শেষ দিকে বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ স্যার নিকোলাস স্টার্ন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়ক ৭০০ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। ওই রিপোর্টের মাধ্যমে তিনি জানান, বিশ্বের উষ্ণতা যদি এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে এর ফলাফল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা ত্রিশ দশকের মহামন্দার চেয়েও ভয়ংকর হবে!
পরিবেশ দূষণের আরেকটি ভয়াবহ দিক হচ্ছে ওজোন স্তরের ক্ষয়। পৃথিবী থেকে বিশ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার উপরের ওজোন স্তরটি আমাদের অতিবেগুনি বা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। কিন্তু দেখা গেছে এই ওজোন স্তরটি ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসছে। এছাড়া দক্ষিণ মেরুর ওজোন স্তরে একটি বড়-সর ফুটো আছে। ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি কোন বাধা ছাড়া সহজেই পৃথিবীতে চলে আসছে। এর ফলে মানুষের ত্বকের ক্যন্সার, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া ছাড়াও উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এই ওজোন স্তরের ক্ষয়ের জন্য যে রাসায়নিক পদার্থটি বেশি দায়ী তার নাম ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, সংক্ষেপে সি এফ সি। এই সি এফ সি বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে পৌছে ওজোন ভেঙ্গে তৈরি করছে অক্সিজেন। হিমায়ক যন্ত্র সহ রাসায়নিক শিল্পে সি এফ সি-এর ব্যাপক ব্যবহার আজ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। রাসায়নিক শিল্পে সি এফ সি-এর ব্যবহার বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। সি এফ সি-র বেশ কিছু বিকল্পও উদ্ভাবিত হয়েছে।
প্রযুক্তির বিপ্লবে আমাদের জীবনধারা পালটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই প্রযুক্তির একটি বিরাট অংশ জুড়ে আছে রাসায়নিক প্রযুক্তি। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক প্রযুক্তির উপরে ভিত্তি করেই গড়ে উঠছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা। এসব শিল্প কারখানায় তৈরি হচ্ছে আমাদের বিভিন্ন ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এসব শিল্পজাত পণ্যের মাধ্যমে রাসায়নিক প্রযুক্তি একদিকে যেমন আমাদের জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা যুক্ত করছে, তেমনি অন্যদিকে আমাদের এই সবুজ পৃথিবীটাকে ঠেলে দিচ্ছে ধংসের দিকে। কিন্তু এ ব্যাপারে ১৯৪৫ সালের আগে মানুষের খুব একটা মাথাব্যাথা ছিলো না। তখনকার দিনে শিল্প কারখানায় পরিবেশ দূষন রোধের ব্যাপারে তেমন কোন ব্যবস্থা রাখা হতো না। ধীরে ধীরে এ ব্যাপারে সচেতনতা শুরু হয়, তবে তা কেবল গবেষক ও বিজ্ঞানীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো । এর ফলে শিল্প কারখানায় পরিবেশ দূষন প্রতিরোধক কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে সেগুলো খুব একটা কার্যকর কিছু ছিলো না। উল্টো পঞ্চাশের দশকে জাপানের মিনামাতায় রাসায়নিক দূর্ঘটনা, আশির দশকে ভারতের ভূপাল ট্র্যাজেডির মতো বড় বড় দূর্ঘটনা রাসায়নিক শিল্প কারখানায় পরিবেশ দূষন প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বর্তমানে রসায়ন প্রযুক্তিবিদেরা শিল্পকারখানায় রাসায়নিক প্রযুক্তি হিসেবে পরিবেশ বান্ধব সবুজ রসায়ন(Green Chemistry) নির্ভর রাসায়নিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলা হলেও আসলে তা কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা এখনও তেমন একটা বোঝা যাচ্ছে না। পরিবেশ দূষণের জন্য সাধারন মানুষ অভিযোগের আঙ্গুল বেশি তুলেছেন শিল্প কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যের দিকেই। বিভিন্ন দেশে পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। শিল্প কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যগুলো উপযুক্ত উপায়ে প্রক্রিয়াজাত না করে বিষাক্ত অবস্থাতেই ফেলে দেয়া হচ্ছে। ফলে পরিবেশ মারাত্বকভাবে দূষিত হচ্ছে। এসব বর্জ্য সমুদ্রে ফেলায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী চার দশকের মধ্যেই সামুদ্রিক প্রাণীর বেশ কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এবার পরিবেশ দূষন নিয়ে একটু ভিন্ন দিকে চোখ ফেরাব। সাম্প্রতিক কালে ই-বর্জ্য(e-waste) নিয়েও ব্যাপক আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব ই-বর্জ্যের মাঝে রয়েছে পুরাতন এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, এম পি থ্রি প্লেয়ার সহ বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি পণ্য। একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, ইদানিং প্রযুক্তি পণ্যের বাজার খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। আজ ডুয়াল কোর তো কাল কোর টু ডুয়ো প্রসেসর। আর কে চায় নতুন পণ্য ব্যবহারের সুযোগটি হাতছাড়া করতে। কিন্তু নতুন পণ্য কেনার পর পুরাতন পণ্যটির কি হবে? এসব সেকেলে পণ্যের তখন ক্রেতা খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। আর ক্রেতা পেলেও পণ্যটি বিক্রি করতে হবে রীতিমতো পানির দামে। এ অবস্থায় এতো ঝামেলার মাঝে না গিয়ে পণ্যের মালিক সেই পণ্যটিকে সাধারণ ময়লা আবর্জনার মতোই ছুঁড়ে ফেলেন ডাস্টবিনে। দরিদ্র দেশগুলোতে এসব ঘটনা সচরাচর না ঘটলেও পৃথিবীর ধনী দেশগুলোতে এসব ঘটনা খুবই সাধারণ। কিন্তু এই সাধারণ ঘটনাটি পৃথিবীর দরিদ্র দেশের মানুষের জন্য রীতিমতো অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা গেছে এসব ই-বর্জ্য থেকে ক্যাডমিয়াম, কোবাল্ট, ক্রোমিয়াম, লেড, কপার সহ বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে এসব এলাকার মানুষের ক্যান্সার,শ্বাসকষ্ট সহ কিডনি ও লিভারের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিশুরা। দেখা গেছে, এসব বিষাক্ত পদার্থের প্রভাবে শিশুর মানসিক বিকাশ মারাত্বকভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। পৃথিবীর ধনী রাষ্ট্রগুলো এসব ই-বর্জ্যের ভাগাড় হিসেবে বেছে নিয়েছে বেশ কিছু দরিদ্র দেশকে। এরকম একটি দেশ আফ্রিকার নাইজেরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ধনী দেশ থেকে অকেজো হয়ে যাওয়া প্রযুক্তি পণ্য প্রবেশ করছে এই দেশে। এসবের বেশির ভাগই ব্যবহারের অনুপোযোগী। এভাবেই ধীরে ধীরে এই দেশটিতে বেড়ে উঠছে ই-বর্জ্যের পাহাড়। এসব ই-বর্জ্য সেখানকার পরিবেশ মারাত্বকভাবে দূষিত করছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ এক রিপোর্টে বলেছে , অদূর ভবিষ্যতেই বিশ্বে ই-বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ বছরে ৪০ মিলিয়ন টন অতিক্রম করবে। এ সমস্য সমাধানে গবেষকরা এসব অকেজো প্রযুক্তি পণ্যগুলোকে পূর্ণব্যবহারপযোগী করা সহ বেশ কিছু প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু এসব প্রক্রিয়া ততোটা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। কারণ দেখা গেছে, একটি নষ্ট পণ্যকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে যে খরচ হয়ে তার চেয়ে কম খরচে নতুন পণ্যই তৈরি করে ফেলা যায়। ফলে প্রযুক্তি উদ্ভাবণের অভাবনীয় গতির কাছে হার মানতে হচ্ছে পরিবেশকে। ই-ওয়েস্টের পরিমাণ এবং নেতিবাচক প্রভাবও দিন দিন বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতিটা যে আরোও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
পরিবেশ দূষন পৃথিবীর সব দেশেরই একটি অভিন্ন সমস্যা। দূষন রোধে বিভিন্ন ধরনের সম্মেলন, সেমিনার, চুক্তি হচ্ছে। বিজ্ঞানিরা পরিবেশ বান্ধব বিকল্প প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলছেন। তবে এসবের উপর কতটাই বা নির্ভর করা যায়। আর পৃথিবীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের তো আর কথায় কথায় প্রযুক্তি পন্য পাল্টানোর ক্ষমতাও নেই। তাই পরিবেশ দূষণের ফলে আমাদের ভবিষ্যতটাও ক্রমশ হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তার জন্য ধনী দেশগুলো বেশি দায়ী । তবে এই পরিবেশ দূষণের নেতিবাচক প্রভাব থেকে কোন দেশেরই মুক্তি নেই । এই পৃথিবীতে আমাদের টিকে থাকতে হলে পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করাটা জরুরী। আর তা না পারলে পৃথিবী থেকে আমাদের অস্থিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়াটাও অসম্ভব কিছু নয়।
৩.পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র
কিছুদিন আগে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘একটুখানি বিজ্ঞান’ বইটা পড়ছিলাম। সেখানে একটি লাইন ছিল –‘বুদ্ধিমান প্রাণীর সভ্যতা খুবই ক্ষণস্থায়ী হয়। তাদের জন্ম হয় এবং কিছু বোঝার আগেই তারা নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করে ফেলে!’ কথাগুলো ইতালীর বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির। বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি নিউক্লিয় শৃঙ্খল বিক্রিয়ার আবিষ্কারক এবং তিনিই বিশ্বের প্রথম নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর তৈরি করেছিলেন। তার আবিস্কৃত এই নিউক্লিয় শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়েই পরবর্তীতে তৈরি করা হয়েছে সভ্যতা বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র। দুঃখজনক হলেও সত্য মানুষের কল্যাণের বদলে কিছু প্রতিভাবান মানুষের মস্তিস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে এসব মারণাস্ত্র তৈরিতে। এখন সারা বিশ্বে যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র আছে তা দিয়ে এই সমস্ত পৃথিবীকে ধ্বংস করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগবে! হিরোশমা আর নাগাসাকির ভয়াবহতা তারই একটা ছোট্ট উদাহরণ মাত্র। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ১৯৪৫ সালের ৩১ শে জুলাই হিরোশিমায় বোমা নিক্ষেপের চূড়ান্ত নির্দেশ দেন আর ৬ আগষ্ট সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়। হিরোশিমায় যখন মানুষ মরছে, ট্রুম্যান তখন জাহাজে করে ইউরোপ থেকে দেশে ফিরছেন। বোমা হামলার খবর পেয়ে তিনি উচ্ছ্বাসিত হন এবং আশেপাশের সবাইকে ডেকে বলেন,আজ ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনাটি ঘটেছে…। এরপর তিনি একটি কমেডি চলচ্চিত্র দেখেন এবং প্রাণখুলে হাসেন। আসলে সত্যি কথা বলতে কি, পৃথিবীকে ধ্বংস করার মতো মারণাস্ত্রগুলো আছে গুটিকয়েক মানসিক বিকারগ্রস্থ মানুষের দখলে, আর তাদের হাতেই এখন জিম্মি আমাদের ভবিষ্যত!
৪.জিন প্রকৌশল
আগেই বলেছি, একুশ শতকে মানুষ অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু এর পরেও হতাশাজনক ব্যাপার হলো, পৃথিবীর অনেক দেশেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুব বেশি। পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা এখন ৬ শ কোটির উপরে। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বেশি দায়ী হচ্ছে পৃথিবীর দরিদ্র তথা তৃতীয় বিশ্ব হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রের মানুষেরা। এসব দেশে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সাত পাঁচ না ভেবেই অধিক সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রথম যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হলো খাদ্য। কিন্তু এই সব বাড়তি মানুষের খাদ্য আসবে কিভাবে ? তার উপরে, অনেক সময় বেশির ভাগ খাদ্য শস্যই চলে যায় পোকার দখলে। আর প্রাকৃতিক দূর্যোগ তো আছেই। প্রাকৃতিক দূর্যোগের কাছে অসহায় হলেও মানুষকে পোকামাকড়ের সাথে লড়াই করার ক্ষমতা এনে দিয়েছিলো বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক। এছাড়া জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে এলো বিভিন্ন ধরনের সার। কিন্তু দেখা গেলো এসব কীটনাশক শুধু ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় ধ্বংসই করলো না পাশাপাশি পরিবেশের জন্য উপকারী কিছু প্রাণীকেও ধ্বংস করতে শুরু করলো। ফলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য বাঁধাগ্রস্থ হলো। এছাড়া কোন কোন কীটনাশক বাতাসে এবং পানিতে মিশে গিয়ে পরিবেশের ভয়ানক ক্ষতি করতে লাগলো। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ সম্ভবত ডি ডি টি (প্যারা প্যারা ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাইক্লোরো ইথেন)। আবার দেখা গেলো, ফসল মাটি থেকে খাবার যতটুকু খাবার গ্রহণ করা উচিত সেটুকু পারছে না। ফসলের খাবারে ভাগ বসিয়েছে বিভিন্ন ধরনের আগাছা। বিজ্ঞানীরা তখন একটু অন্যভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করলেন। উদ্ভাবিত হলো জেনেটিক্যালি মডিফাইড (জি এম ) শস্য। এবার আগাছা আর পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুরু করলো ফসল নিজেই। জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে সৃষ্ট এই জি এম শস্যে মূলত আগাছা আর কীটনাশক ধ্বংস করতে পারে এমন জীন ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব জীন থেকে উৎপন্ন প্রোটিন পোকামাকড় আর আগাছা ধ্বংস করতে পারে। নতুন এই প্রযুক্তিটি মানুষ ভালোভাবে বুঝে উঠার আগেই এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠলো। এর একটি হলো, কীটনাশকের মতোই জি এম শস্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় ধ্বংসের পাশাপাশি ফসলের জন্য ক্ষতিকারক নয় এমন পোকামাকড়ের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৯ ইংল্যান্ডের একদল গবেষক বললেন, জি এম ভুট্টার পরাগরেণু মোনার্ক প্রজাপতির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও বৃদ্ধিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। এছাড়া জি এম শস্য অন্য শস্যের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলার অভিযোগের পাশাপাশি জি এম খাদ্য নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। এছাড়া জি এম শস্যের বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ হলো এই প্রযুক্তি ব্যবহারে হাতে গোনা কিছু বহুজাতিক কোম্পানি লাভবান হবে। কারণ জি এম শস্য থেকে কৃষক প্রচলিত পদ্ধতির মতো বীজ পাবে না। প্রতিবার ফসল বোনার আগে নতুন করে বীজ কিনতে হবে এসব বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে যারা এই শস্যটির উদ্ভাবক। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন । পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পরিবেশবাদীরা জি এম শস্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন সময়। তবে জি এম শস্যের বীজ যারা উৎপাদন করছেন তারা অবশ্য শুরু থেকেই বলে আসছেন, জি এম শস্য স্বাস্থের জন্য নিরাপদ। এরপরেও জি এম শস্য নিয়ে মানুষের মনে আতংক কাটেনি। হাঙ্গেরি, ভেনিজুয়েলা, আর্জেন্টিনা সহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে জি এম শস্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ যুগের আইনষ্টাইন হিসেবে খ্যাত স্টিফেন হকিং জীন প্রকৌশল সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, ‘আমরা চাই বা না চাই, জীন প্রকৌশলই হবে একুশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি’। আসলে জি এম শস্যে নিয়ে যতোই অভিযোগ উঠুক না কেন, আমাদের পৃথিবীতে মানুষ যে হারে বাড়ছে তাতে খাদ্য সমস্যা নিরসনে হয়তো ভবিষ্যতে জি এম শস্যের উপরেই নির্ভর করতে হবে। তাই এই আশংকা কাটাতে দূর করা প্রয়োজন,আর এজন্য বেশি প্রয়োজন এ বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি। বিতর্ক যখন উঠেছে তখন একটি জি এম শস্য ব্যবহারের আগে সেটির ভালো এবং খারাপ দুটি দিক সম্পর্কেই ভালোভাবে জেনে নেয়া প্রয়োজন। আর নাহলে ভবিষ্যতে এমন কোন জি এম শস্য আমাদের হাতে তুলে দেয়া হবে যাতে নিজেদের অজান্তেই আমরা একদিন পুরোপুরি জিম্মি হয়ে যাব কিছু বহুজাতিক কোম্পানির কাছে।
এই জীন প্রকৌশলের আরেকটি আলোচিত দিক হলো ক্লোনিং। ১৯৯৬ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় রোজালিন ইনস্টিটিউশনে ‘ডলি’ নামের একটি ভেড়ার জন্ম হয়। ডলির জন্মের খবর সাধারণ মানুষের কানে পৌছায় প্রায় সাত মাস পর, তখন ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি। ডলি নামের এই ভেড়ার জন্ম নেয়ার খবর সমগ্র বিশ্ববাসীকে অবাক করে দেয়। এর কারণ ডলির জন্ম প্রকৃতির সাধারণ নিয়মে হয়নি, হয়েছিলো ক্লোনিং নামক একটি প্রক্রিয়ায় যার মাধ্যমে সম্পূর্ণ অযৌন উপায়ে একটি পূর্ণাঙ্গ দেহকোষ থেকে একটি পরিপূর্ণ প্রাণীর জন্ম দেয়া সম্ভব। আর এই জন্ম নেয়া নতুন প্রাণীটি দেখতে হবে ঐ কোষদানকারী প্রাণীটির মতো। ডলির জন্ম হয়েছিলো ছয় বছর বয়স্ক একটি মাদী ভেড়ার কোষ থেকে। ডলির পর বিজ্ঞানীরা সফলভাবে আরও বিভিন্ন প্রাণীর ক্লোন করেছেন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানব ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে মানব দেহের কোষ থেকে মানব দেহের যেকোন অঙ্গ তৈরি করা সম্ভব হবে। এছাড়া স্টেম সেল গবেষণার মাধ্যমে হৃদরোগ,পারকিনসন,আলঝেইমারের মতো জটিল রোগ নিরাময় করা সম্ভব হবে। কিন্তু এতো সব আশাবাদী কথা শোনার পরেও সাধারণ মানুষ কিন্তু মোটেও আশ্বস্ত হতে পারেননি। কারণ বিশ্ববাসী চিন্তিত মানব ক্লোনিংয়ের সম্ভাবনা এবং এর সম্ভাব্য ফলাফলের কথা ভেবে । ইতোমধ্যে মানব ক্লোনিংয়ের কথাও শোনা গেছে, অবশ্য তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মানব ক্লোনিং হয়ে থাকলেও এখন আর অবাক হবার মতো কিছু নেই । কারণ, মানুষের কাছে এখন অনেক কিছুই আর অসম্ভব নয়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণতো ক্লোনিং নিজেই। মানব ক্লোনিংয়ের ফলাফল সম্পর্কিত মানুষের এই আশংকা মোটেও অমূলক নয়। নৈতিকতা বা ধর্মীয় বিধি নিষেধের দিকে যাচ্ছি না। যারা লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করে কমেডি চলচ্চিত্র দেখতে পারে তারা যে এই মানব ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করবেন না তাই বা কতটুকু নিশ্চিত হওয়া যায়।
৫.ন্যানোপ্রযুক্তি
বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি প্রযুক্তি একটি হচ্ছে ন্যানোপ্রযুক্তি। এই ন্যানোপ্রযুক্তি হচ্ছে প্রযুক্তির এমন একটি শাখা যেখানে সব গবেষণা হবে ন্যানো স্কেলে। এক ন্যানোমিটার হলো এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ। ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটারের বস্তুকে ন্যানো স্কেল ধরে নেয়া হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব শাখায় এই ন্যানোপ্রযুক্তিকে ব্যবহারের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষক। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই ন্যানোপ্রযুক্তি একসময় পালটে দেবে পৃথিবীর চেহারা। ন্যানোপ্রযুক্তির হাত ধরে কম্পিউটার শিল্পে আসবে গতির বিপ্লব। আর সেই সাথে বাড়বে হার্ডডিস্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা । ইতোমধ্যে আমরা এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছি। ন্যানোপ্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হবে বিভিন্ন ধরণের কম্পোজিট পদার্থ এবং ফাইবার যেগুলো নির্মাণ শিল্পে বিপ্লব বয়ে আনবে। আর শুনতে সায়েন্স ফিকশনের মতো মনে হলেও একদিন দেহের ভেতরে ঢুকে জটিল সব অস্ত্রোপচার করে দেবে ন্যানোরোবট। ন্যানোপ্রযুক্তির মাধ্যমেই হয়তো মানুষ একদিন হয়ে উঠবে প্রকৃতির নিয়ন্তা। এতো গেল আশাবাদের কথা। ভয়ংকর ব্যাপারটি হলো, কিছু দেশ প্রতিরক্ষার খোঁড়া অজুহাতে ন্যানোপ্রযুক্তির মাধ্যমেই তৈরি করার চেষ্টা করছে স্ব-নিয়ন্ত্রিত ন্যানোনিউক্লিয়ার মিসাইল সহ ভয়ংকর সব মারণাস্ত্র, যা হয়তো মানবজাতিকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। এছাড়া ন্যানোপ্রযুক্তি নিয়ে গবেষণাকালে বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়তে পারে ন্যানো স্কেল আকারের কণা যা পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি করতে পারে।
৬.শেষের কথা
প্রত্যেক প্রযুক্তিরই নেতিবাচক দিক আছে এবং থাকবে। আর প্রযুক্তিতো মানুষেরই উদ্ভাবিত। তাই সব দোষ প্রযুক্তির ঘাড়ে চাপানো ঠিক নয়। আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তা প্রযুক্তির বদৌলতেই, সে কথা অস্বীকার করার কোন উপায়। নতুন প্রযুক্তি আসবেই, সময়ের সাথে তাল মিলাতে হলে আমাদের সেসব গ্রহণ করতে হবেই। দেখা গেছে প্রযুক্তির নেতিবাচক দিকগুলোর বেশি শিকার হচ্ছে পৃথিবীর দরিদ্র মানুষেরা। তবে ধনী রাষ্ট্রগুলোও পুরোপুরি রক্ষা পাচ্ছে না। সর্বোপরি প্রতিনিয়ত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে আমাদের অস্তিত্ব। একুশ শতকের মানুষ হিসেবে এ ব্যাপারে আমাদের আরোও সচেতন হওয়া উচিত। একটি নতুন প্রযুক্তি বেছে নেয়ার আগে আমাদের দেখে নেয়া উচিত সেটি পরিবেশ বান্ধব কিনা। আর সেই সাথে প্রযুক্তি যেন কোন মানসিক বিকারগ্রস্থ মানুষদের হাতে পড়ে বিপথে না যায় সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত। তবে বিপথে গেলেই বা আমরা কি করতে পারি। কিছু মানুষ কিংবা কিছু ধনী রাষ্ট্রের কাছে অসহায় আমাদের ভবিষ্যত, আমাদের পৃথিবী…
E-mail: [email protected]
Execellent! Insightful! Farsighted! Resourceful!
Thank You Bipro!
ধন্যবাদ Shafiul ভাই…
প্রযুক্তিকে বাংলায় লেখার প্রয়াস সত্যিই প্রশংসনীয়।লেখাটি অনেক ভালো লেগেছে।
বিপ্র,
দারুন বিস্তারিত একটা প্রবন্ধের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিলে সেটাও কম হবে। আশা করছি সামনে আরও সুন্দর সুন্দর প্রযুক্তিবিষয়ক প্রবন্ধ পাবো। বাকী কিছু পরামর্শ আপনার ইয়াহু ব্লগে দিচ্ছি।
শুভেচ্ছা।
খুব দারুণ লিখেছিস, আজকালকার যে দিক গুলো আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাবায় সেগুলোকে খুব বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছিস। আমার বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির –‘বুদ্ধিমান প্রাণীর সভ্যতা খুবই ক্ষণস্থায়ী হয়। তাদের জন্ম হয় এবং কিছু বোঝার আগেই তারা নিজেরা নিজেদের ধংস করে ফেলে!’…কথাটা ভীষণ ভালো লেগেছে, মাঝে মাঝে ত আমার মনে হয় পৃথিবীতে মানুষ না থাকলেই পৃথিবী অনেক বেশী সুন্দর হত, মানুষ নিজেদের তো শেষ করছেই, পুরো পৃথিবীটাকেই ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে……
আপনার লেখাটা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। শুধু তাই নয় বাংলায় বিজ্ঞানের বিষয়গুলি যেভাবে তুলে ধরেছেন তাতে খুব ভালো লাগছে। ইন্টারনেটে কত ভাষায় জ্ঞানচর্চা হচ্ছে, কত তথ্য আছে অথচ বাংলা ভাষায় কত কম। আপনার মত যারা বাংলাকে এগিয়ে নিচ্ছে তাদের জন্য গর্ব হয়।
খুবই ভাল হয়েছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে অনেকগুলি জানা ঘটনা, একত্রিত ভাবে পেলাম। ধন্যবাদ।
সবাইকে ধন্যবাদ।
প্রবন্ধের প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদে আলাদা শিরোনাম যুক্ত করে দেয়া হলো…
বিপ্র, তোমার প্রবন্ধ পড়ে খুবই ভালো লাগলো। দারুন লিখেছো। তোমার ভাষা জ্ঞান তো অসাধারণ। তোমার কাছ থেকে আরো আশা করছি এ ধরণের লিখা। তবে, পরবর্তীতে তত্যমূলক প্রবন্ধের জন্য পথ চেয়ে আছি।
আফরিন।
খুব সুন্দর লেখা,তথ্যবহুল, আমি আর তোমার আপু মিলে বসে বসে পড়লাম, লেখা চালিয়ে যেও
বিপ্র ভাইয়া
আপনাকে ধন্নবাদ দিয়া পারলাম না। সত্তিই অসাধারন। বলতে বাধ্য হছি আপনার লেখনি first class.
Dear Bipro,
As i know you , No need to say you write Great.
Can you add some lines on Internet Abuse & Digital Divide .
Thanks
uncle,ami munia,kanta aunt ir student,apner likha pore ami onek kichu jante parlam
ভাল হয়েছে। বাংলায় যত লেখা হবে বাংলার তত লাভ।
সবাইকে ধন্যবাদ…
@ সজীব ভাই…পরবর্তীতে এই বিষয়গুলো সংযুক্ত করার চেষ্টা করবো।