লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষণার ক্ষেত্র যত বড় হচ্ছে, ততই গবেষকদের সঠিক পরিচয় এবং কাজের স্বীকৃতি প্রদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বড় বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পরিচয় ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যারে ORCID (Open Researcher and Contributor Identifier) প্রতিষ্ঠিত হয়।
ORCID একটি অ-লাভজনক সংস্থা, যার প্রধান লক্ষ্য হলো প্রতিটি গবেষককে একটি অনন্য (Unique) আইডি প্রদান করা, যা তাদের প্রকাশনা, গবেষণা এবং অবদানকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে। ORCID শুধু গবেষকদের জন্য নয়, প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ একটি টুল। বিভিন্ন প্রকাশনা এবং গবেষণা প্রকল্পে গবেষকদের অবদান সঠিকভাবে ট্র্যাক করতে এবং তাদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে ORCID ব্যবহৃত হয়। এটি গবেষণার মান উন্নয়ন এবং গবেষকদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে সহায়ক। যে কেউ ORCID এর ওয়েবসাইটে (https://orcid.org/) গিয়ে বিনামূল্যে নিবন্ধন করে তার আইডি তৈরি করতে পারেন।
ORCID কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১. একক পরিচয় (Unique Identity)
একই নামের গবেষকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থাকলে কখনও কখনও নামের মিল বা ভিন্নভাবে লেখা নিয়ে বিভ্রান্তি হতে পারে। ORCID প্রতিটি গবেষককে একটি বিশেষ আইডি প্রদান করে যা নিশ্চিত করে যে তাদের কাজ সঠিকভাবে তাদের প্রোফাইলে থাকবে এবং নামের কারণে অন্যের কাজ ভুলভাবে যুক্ত হবে না।
২. গবেষণা কাজের সঠিক সাইটেশন
ORCID আইডির সাহায্যে গবেষকদের কাজ সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়। এর মাধ্যমে গবেষণা সংস্থা ও প্রকাশকরা গবেষকদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে এবং তাদের কাজের সঠিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করে, যা ভুল সাইটেশনের সমস্যা কমিয়ে দেয়।
৩. গবেষণা কাজের একীভূত প্রোফাইল
গবেষকরা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তাদের গবেষণার কাজ প্রকাশ করে থাকেন, যেমন গুগল স্কলার, রিসার্চ গেট, ওয়েব অফ সায়েন্স ইত্যাদি। ORCID ব্যবহার করে তারা একটি কেন্দ্রীয় প্রোফাইল তৈরি করতে পারেন, যেখানে তাদের সমস্ত কাজ একসঙ্গে দেখা যায়। এর ফলে তাদের কাজের একটি সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়।
৪. বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা ও স্বীকৃতি
ORCID আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত একটি পরিচয় নম্বর যা বিশ্বের বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, প্রকাশনা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবহার করে। এটি গবেষকদের কাজকে বৈশ্বিক স্বীকৃতি দেয়।
ORCID আইডি কিভাবে কাজ করে?
ORCID আইডি মূলত একটি লিংক বা URL আকারে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একজন গবেষকের ORCID হতে পারে: https://orcid.org/0000-0002-5158-4558। তবে অনেক সময় শুধু “0000-0002-5158-4558” আকারেও এটি ব্যবহার করা হয়।
ORCID ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড নেম আইডেন্টিফায়ার (ISNI)-এর একটি অংশ। ISNI বিভিন্ন ধরণের অবদানকারীদের, যেমন লেখক বা টিভি প্রোগ্রামের নির্মাতাদের চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। ORCID এর জন্য ISNI কিছু নম্বর বরাদ্দ করেছে, যেমন 0000-0001-5000-0007 থেকে 0000-0003-5000-0001 পর্যন্ত। তাই, একজন ব্যক্তি একই সাথে দুটি আইডি পেতে পারেন, যা কার্যত ISNI এবং ORCID উভয়েরই সমতুল্য।
ORCID এবং ISNI আইডি ১৬টি সংখ্যা নিয়ে গঠিত, যেখানে প্রতি চারটি সংখ্যার পর একটি হাইফেন থাকে। এই আইডির শেষ সংখ্যাটি বিশেষ চেক ডিজিট দিয়ে নিশ্চিত করা হয় যে আইডিটি সঠিক। উদাহরণস্বরূপ, Stephen Hawking-এর ORCID নম্বর হচ্ছে: https://orcid.org/0000-0002-9079-593X
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–
https://www.facebook.com/share/p/1PJMzziHgF/
Leave a comment